চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস
আসসালামু আলাইকুম। মানুষের চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস যেমন রয়েছে তেমনি মানুষের চেহারা বিকৃতি নিয়ে বা মানুষের পরিবর্তন নিয়ে কুরআনের আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত চেহারা বিকৃতি করার অনুমতি ইসলামে নেই। অনেক সময় চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অনেকেই ট্যাটু আঁকা, ভ্রু প্লাক, দাঁত সরু করা এবং প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে থাকেন যা সম্পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী কাজ।
আজকে আর্টিকেলে থেকে চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস , মানুষের পরিবর্তন নিয়ে কোরআনের আয়াত এবং মানুষের চেহারা নিয়ে হাদিস বিষয়ে জানব, ইনশাল্লাহ।
চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস
আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের চেহারার সৌন্দর্য বিকৃত করে অনেকেই নিজস্ব সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করতে চেহারার আকৃতি পরিবর্তন করেন। অথচ সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির কোন অনুমতি ইসলামে নেই। আল্লাহ প্রদত্ত সৃষ্টি মানুষের চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস এবং কুরআনে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শরীরে উলকি আঁকা, ট্যাটু আঁকা, ভ্রু প্লাক, দাঁত সরু করা এবং প্লাস্টিক সার্জারি সহ সবই আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতির শামিল। যে উল্কি আঁকে এবং যার শরীরে উল্কি আঁকা হয়; যে দাগ কেটে দাঁতের মধ্যে ফাক তৈরি করে এবং তার দাদ কেটে ফাক তৈরি করা হয় তাদের উভয়ের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিসের বর্ণনা এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
আল্লাহ অভিসম্পাত বর্ষণ করেন সেসব নারীদের উপর, যারা (অন্যদের) শরীরে উল্কি অঙ্কন করে দেয়, নিজেদের শরীরে উল্কি অঙ্কন করায়, যারা যারা নিজেদের চুল, ব্রু উপড়ে ফেলে, যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত কেটে দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন সাধন করে।
(আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,) আমি কেন তাদেরকে অভিসম্পাত করব না, যাদেরকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
[সহীহুল বুখারী : ৫৯৩১; সহীহ মুসলিম : ২১২৫]
পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতার চাপে প্লাস্টিক সার্জারি নামে মানুষের মধ্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে যাচ্ছে তাই করার মানসিক অসুস্থতা ঢুকে পড়েছে। উক্ত বিশুদ্ধ হাদিস থেকে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির বিধানও যে হারাম তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
আল্লাহর দেয়া চেহারা বিকৃতি করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নাক-কান, চোখ, মুখ সহ স্তন ইত্যাদির আকার আকৃতি পরিবর্তন করে সুন্দর থেকে সুন্দরতর হওয়ার এক অদম্য বাসনা তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তারা এ সকল সার্জারির পিছনে কাড়ি কাড়ি টাকা পয়সা খরচের নামে অপচয় করছে।
শরীরে উলকি আঁকা, ট্যাটু আঁকা, ভ্রু প্লাক, দাঁত সরু করা এবং প্লাস্টিক সার্জারি প্রভৃতি এগুলো যারা করে এবং যারা করায় এ বিষয়ে চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস অনুযায়ী সবাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিসম্পাতের আওতাভুক্ত হবে।
মানুষের চেহারা নিয়ে হাদিস
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতি দান করেছেন। সুন্দর চেহারা দিয়েছেন। তবুও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কিছু মানুষ চেহারা বিকৃতি করে থাকে।চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস -এ আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিসম্পাত রয়েছে।
মানুষের চেহারা নিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন , 'আমি মানুষকে উৎকৃষ্ট অবয়বে সৃষ্টি করেছি।' [সুরা ত্বিন, আয়াত : ৪]
মানবদেহের প্রধান একটি অঙ্গ চেহারা। সুন্দর চেহারায় প্রশংসায় সবাই খুশি হয়। আবার নিন্দা করলে অনেক কষ্ট পায়। মানুষের চেহারা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি।
মানুষের চেহারা নিয়ে হাদিসের বর্ণনা এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা বোলো না! আল্লাহ তার চেহারা কুৎসিত বানিয়েছেন। [আল আদাবুল মুফরাদ : ৮৫]
ইসলামী শরিয়ত চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ করেছে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেহারায় আঘাত করতে নিষেধ করেছেন।কেননা আল্লাহ মানুষের চেহারা আকর্ষণীয় ও সম্মানিত করেছেন। যেখানে ইসলাম চেহারায় আঘাত করতে নিষেধ করেছে সেখানে চেহারা বিকৃতি করে সেখানে চেহারা বিকৃতি করে সৌন্দ্যর্য বৃদ্ধি করার কোন প্রশ্নই থাকে না।
এমনকি শিশুদের শাসন করা সময়ও চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ অন্য কাউকে শাস্তি প্রদান করে, তখন সে যেন তার চেহারায় আঘাত না করে। [আবু দাউদ : ৪৪৯৩]
মানুষের চেহারা নিয়ে হাদিস বিষয়ে এসেছে, ইসলাম সাধারণ অবস্থায় যেমন চেহারায় আঘাত করতে নিষেধ করেছেন তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রেও চেহারায় আঘাত করতে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা থেকে বিরত থাকে।
[সহিহ বুখারি : ২৫৫৯]
মানুষের পরিবর্তন নিয়ে কোরআনের আয়াত
আল্লাহর দেয়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির কোন অনুমতি ইসলাম দেয়নি। অনেক সময় মেয়েরা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর দেয়া নিজস্ব আকৃতি পরিবর্তন করে ফেলে।যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে সম্পূর্ণরূপে হারাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা চেহারা বিকৃতি করা শয়তানের প্ররোচনা বলা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে সূরা নিসায় শয়তানের উক্তি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে- 'আর আমি অবশ্যই তাদেরকে (প্ররোচনার মাধ্যমে) নির্দেশ দেব ; ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে।
[সূরা নিসা , আয়াত : ১১৯]
চেহারা সুন্দর করার আমল ও দোয়া
চেহারা সুন্দর করার আমল ও দোয়া বিষয়ে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, আল্লাহুম্মা আহসানতা খলকি ফা আহসিন খুলুকি।
হে আল্লাহ! আপনি আমার চেহারা সুন্দর করেছেন। অতএব, আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন। [মুসনাদে আবু ইআলা : ৫০৭৫]
বাহ্যিক সাজসজ্জা করার সময় বা আয়না দেখার সময় এই দোয়াটি পাঠ করা উত্তম।
চেহারা বিকৃতি নিয়ে হাদিস এবং এ হাদিস থেকে এটি স্পষ্ট যে, কারো যদি এমন কোন বিরল রোগ থাকে, যেমন অতিরিক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং এতে বিভিন্ন সময় তার শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হয়, আগুনে পোড়া, এসিড দগ্ধ হওয়া কিংবা অ্যাক্সিডেন্টে চেহারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে স্বাভাবিক করার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে তার চিকিৎসায় কোন বাধা-নিষেধ নেই।
যতদিন এটি তার জন্য কষ্টের কারণ হবে; ততদিন সে চিকিৎসা নিতে পারবে। ইসলাম আমাদের উপর কোন বোঝা চাপিয়ে দেয় না। কিছু মানুষের অসুস্থ মানসিকতাই হলো আমাদের জন্য বোঝা।