শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি ও বাংলা অর্থসহ
আসসালামু আলাইকুম। আরবি মোনাজাত শব্দের অর্থ হল চাওয়া বা প্রার্থনা করা। আর মোনাজাত একটি ইবাদত। তাই আমাদের শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি ও বাংলা অর্থসহ জানা উচিত। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, 'তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।' আমরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, বিপদে-আপদে এবং যেকোনো মুসিবতে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করি এবং মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি। আজকে আর্টিকেলেটি শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি ও বাংলা অর্থসহ কখন কিভাবে করতে হয় সে বিষয়ে সাজানো হয়েছে।
শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি ও বাংলা অর্থসহ
দোয়া একটি ইবাদত এবং মুমিনের হাতিয়ার। একমাত্র দোয়ার মাধ্যমেই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়। আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে বেশি পছন্দ করেন যারা বেশি বেশি আল্লাহর কাছে চায়। আল্লাহ সর্বক্ষণ দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন; কখন কোন বান্দা আল্লাহকে ডাকবেন এবং আল্লাহর কাছে চাইবেন আল্লাহ তাকে তার প্রাপ্য দিয়ে দেবেন।
রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া দোয়া
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া কুরআনের দ্বিতীয় সূরা বাকারার ২০১ নাম্বার আয়াত শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া 'রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও'।শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়ার এ আয়াতটি আল্লাহ তায়ালা মুমিন মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির উপশম হিসেবে নাযিল করেছেন।
শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺁﺗِﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻭَﻓِﻲ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻭَﻗِﻨَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
উচ্চারণ : রব্বানা- আ-তিনা ফিদ্দুনইয়া- হাসানাতাও ওয়া ফিলআ-খিরতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা- 'আ জা-বান-নার।
বাংলা অর্থ : হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে যা কল্যাণকর, পরকালে যা কল্যাণকর তা দান করুন, আমাদের আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। [ সূরা আল বাকারা, আয়াত : ২০১]
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই এ দোয়া করতেন। [ বুখারী ; মুসলিম]
শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি
رَبَّنَآ اِنَّنَآ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি রাব্বানা জালামনা আনফুসানা
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণ : রব্বানা- যলামনা- আনফুসানা- ওয়াইল্লাম তাগফির লানা- ওয়াতার হামনা- লানাকুনান্না মিনাল খ-সিরী-ন।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। [আরাফ, আয়াত : ২৩]
শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া আরবি
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ ھَدَيْتَنَا وَھَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً ۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَھَّابُ
উচ্চারণ : রব্বানা- লা-তুজিগ কুলু-বানা- বা'আদা ইজ হাদাইতানা- ওয়াহাব লানা- মিললাদুনকা রহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহা-ব।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের হেদায়েত করার পর আমাদের অন্তর যেন (সত্য থেকে) বিচ্যুত না হয় এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি দাতা। [সুরা আল-ইমরান, আয়াত : ৮]
মোনাজাত শুরু করার দোয়া কি
শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া বা যে কোন দোয়া আল্লাহর প্রশংসা এবং সালাতের ও প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু করা সুন্নত।
اَلْحَمْدُ لِلّهِ ربِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَوةُ وَالسَّلامُ عَلَى سَيِّدِ الْمُرْسَلِيْنَ.
মোনাজাত কিভাবে শেষ করতে হয়?
আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার আগে অর্থাৎ যে কোন দোয়া বা মোনাজাতের দোয়ার আগে, দোয়ার মধ্যে বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়তে হয়। শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া বা যে কোন দোয়ার শুরুতে এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা সুন্নত। এভাবে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন।
মোনাজাতের দোয়া বা দোয়া শুরু ও শেষ করার নিয়ম সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাতে এসেছে, 'দোয়া করতে হয় প্রশান্তচিত্তে ও দৃঢ় মনে। দোয়া শুরু করার নিয়ম বা আদব হলো- শুরুতে আল্লাহ তায়ালার হামদ-ছানা (প্রশংসা) ও দরুদ শরিফের মাধ্যমে দোয়া শুরু করা। এরপর নিজের প্রয়োজন, নিজের পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ, যেকোনো অবস্থার জন্য দোয়া করবেন।
এরপর শেষ করার সময়ও আল্লাহ তায়ালার হামদ-ছানা (প্রশংসা) ও দরুদ শরিফের মাধ্যমে শেষ করার নিয়ম। এছাড়া চাইলে দোয়ার শেষে আমিন বলা যায়। তবে আমিন বলে দোয়া শেষ করতেই হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। [ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, ২য়-খণ্ড : ৩৪৫]
ফরজ নামাজ শেষে মোনাজাতের দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। এ হাদীসের শুদ্ধতায় মতভেদ রয়েছে। তবে ফরজ নামাজ ছাড়াও যেকোনো সময়, যে কোন অবস্থায় আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়ার মাধ্যমে যাওয়া যায়। শুয়ে, বসে, অজু থাকা অবস্থায় কিংবা অজু না থাকলেও মোনাজাতের দোয়া করা যায়। এমনকি নারীদের ঋতু অবস্থায়ও দোয়া করা যায় বা গোসল ফরজ এমন অবস্থায়ও দোয়া করা যায়।