পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয়

আসসালামু আলাইকুম। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয় টি হল সালাত বা নামাজ। মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। বলা হয়ে থাকে নামাজ বেহেস্তের চাবি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন মুমিন মুসলমানদের কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তাসবিহ তাহলীল ও দোয়া দরুদ শিখিয়েছেন। তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয় তাও শিখিয়েছেন। আজকে আর্টিকেলে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয় সে বিষয়ে জানব, ইনশাল্লাহ। 



পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয়



পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয়

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানের জন্য ফরজ করা হয়েছে। আর ফরজ হলো অবশ্যই পালনীয় অর্থাৎ যা আদায় করতেই হবে, অন্যথায় গুনাহ বা পাপ হবে। তাই সকল মুসলমানদের সালাতের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। তাসবিহ পাঠ করা সুন্নত। তাসবিহ পড়া হলো আল্লাহকে স্মরণ করা।  আল্লাহ তায়ালা তাসবিহ পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করতে বলেছেন। 


আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ ও দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী (তাসবিহ পাঠকারী ) পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। [ সূরা আযহাব, আয়াত : ৩৫]


প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফজর নামাজের পর তাসবিহ পড়ার ফজিলত এবং গুরুত্ব বেশি। আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়তে হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আমাদেরকে শিখিয়েছেন। 


তারমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি আমল সবচেয়ে বেশি সময় করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তিন তাসবীহ, আয়াতুল কুরসি, এবং তিন কূল আমল করার নির্দেশ হাদীসে এসেছে। 



তাসবিহ পড়ার ফজিলত

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়তে হবে এবং পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাসবিহ পড়ার ফজিলত  বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—


যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সুবহা-নাল্লা-হ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লা-হ ৩৩ বার এবং আল্ল-হু আকবার ৩৩ বার মোট ৯৯ বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে 'লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া 'আলা- কুল্লি শাইইং ক্বদীর ' ; তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়।   [মুসলিম : ৫৯৭]


পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়তে হবে এবং পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাসবিহ পড়ার ফজিলত বিষয়ে অন্য এক হাদিসের বর্ণনা এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, দরিদ্র লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও সিরিয়াস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তারা আমাদের মত নামাজ পড়েছেন, আমাদের মত রোজা রেখেছেন, এবং তারা তাদের অর্থ সম্পদের মাধ্যমে হজ ওমরাহ, জিহাদ ও সদকা করার মর্যাদাও লাভ করেছেন। 


এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, 'আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। কেউ তোমাদের সমপর্যায়ে উপনীত হতে পারবে না। আর লোকদের মধ্যে তোমরাই হবে উত্তম আমলকারী, তবে যে ব্যক্তি এ ধরনের আমল করবে তার কথা ভিন্ন।


তোমরা প্রত্যেক(পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর) নামাজের পর ৩৩ বার করে তাসবিহ  (সুবহা-নাল্লা-হ ৩৩ বার) , তাহমিদ (আলহামদু-লিল্লা-হ ৩৩ বার) এবং তাকবীর (আল্ল-হু আকবার ৩৩ বার) পাঠ করবে। [ বুখারী : ৮৪৩]


হাদিসের অন্য আরেক বর্ণনা এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মেয়ে ফাতিমা (আ.) বলেছিলেন দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পেতে প্রতি ফরজ নামাজের পরে, সুবহা-নাল্লা-হ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লা-হ ৩৩ বার এবং আল্ল-হু আকবার ৩৪ বার করে ১০০ পূর্ণ করবে। [মুসলিম; আত-তারগীব]



পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি নামাজে সালাম ফিরানোর পর  তিনবার ইসতিগফার করতেন এবং বলতেন- 'আল্ল-হুম্মা আংতাস্ সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রকতা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকর-ম'।


ইসতিগফার


أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ

উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্ল-হ। 

অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। 


এরপর বলতেন—


اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ


উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা আংতাস্ সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রকতা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকর-ম।


অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি শান্তিময়; আপনার কাছ থেকেই শান্তির আগমন ঘটে। হে মহামহীম ও মহানুভব ! আপনি বড়ই প্রাচুর্যময়।  [ সহীহ মুসলিম : ৫৯১]


পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয় আরবি, উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থসহ —

 

তাসবিহ 


৩৩ বার—  
 سُبْحَانَ اللهِ

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হ 

অর্থ : আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

৩৩ বার— 

  الْحَمْدُ لِلّٰهِ

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হ। 

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর। 


৩৩ বার—   
 للهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণ : আল্ল-হু আকবার। 

অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে মহান। 


৯৯ বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে—


لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْك لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ


উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া 'আলা- কুল্লি শাইইং ক্বদীর


অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও সমস্ত প্রশংসা কেবল তারই। তিনি সবকিছুর উপরেই পূর্ণ ক্ষমতাবান। 


যে ব্যক্তি এই আমল করবে ; তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়।



আয়াতুল কুরসি নামাজে কখন পড়তে হয়

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত কে বলা হয় আয়াতুল কুরসি।হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি প্রতি ( পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর ) নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই তার জান্নাতে যাওয়ার পথে বাঁধা হিসেবে থাকবে না। 



আয়াতুল কুরসি 


اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-


উচ্চারণ : আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা- তা’খুযুহু সিনাতুও ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়া-তি ওয়ামা- ফিল আরদ্বি, মাং যাল্লাযী ইয়াশফা'উ 'ইন্দাহূ ইল্লা- বিইযনিহ, ইয়া'লামু মা- বাইনা আইদিহিম ওয়ামা- খালফাহুম, ওয়ালা- ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন 'ইলমিহি ইল্লা- বিমা- শা-আ, ওয়াসি'আ কুরসিয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব, ওয়ালা- ইয়া'উদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল 'আলিয়্যুল 'আজ্বীম।


অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব; সমস্ত কিছুর ধারক।তন্দ্রা বা নিদ্রা তাকে স্পর্শও করতে পারেনা। আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত কিছুতারই।এমন কে আছে, যে তার অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করতে পারে? তিনি তাদের অতীত ও ভবিষ্যতের সব জানেন। তিনি যেটুকু চান, সেটুকু ছাড়া তার জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তার 'কুরসি' আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত। এতদুভয়ের সংরক্ষণ তাকে ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ; সুমহান। 


আল্লাহর সৃষ্টি সকল কিছুই সর্বক্ষণ আল্লাহর তাসবিহ পড়ার মধ্য দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করেন। আকাশের মেঘমালাও আল্লাহর তাসবীহ পড়েন। তাসবিহ পড়ার নির্দিষ্ট কোন সময় ও সংখ্যার প্রয়োজন হয় না। ওযু ছাড়াও তাসবিহ পড়া যায়, মেয়েদের মাথায় কাপড় না থাকলেও তাসবিহ পড়া যায়। অর্থাৎ সর্বক্ষণ যে কোন অবস্থায় যেকোনো ভাবে (বাথরুম / টয়লেট ব্যতীত) তাসবিহ পড়া যায়। 


তাসবিহ পাঠ অর্থাৎ আল্লাহর জিকর আমাদের আত্মাকে সজীব রাখে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয় তা নিয়ে আলোচনা করেছি।আল্লাহ তাআলা সকল মুমিন মুসলমানদেরকে এই আমল করার তাওফিক দান করুন (আমীন)। 
Next Post Previous Post