অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর আচরণ কেমন ছিল
আসসালামু আলাইকুম। অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর আচরণ ছিল উদার ও শ্রদ্ধাশীল। ইসলাম অমুসলিমদের শুধুমাত্র ধর্মীয় স্বাধীনতাই দেয়নি; বরং তাদের সাথে সামাজিক অংশীদারিত্ব এবং সৌজন্যবোধ ও মেলামেশার সুযোগ ও দিয়েছে। অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) সব সময় সদাচারণ করেছেন। আজকে আর্টিকেলে অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর আচরণ কেমন ছিল সে বিষয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর আচরণ কেমন ছিল
রাসুল (সাঃ) সর্ব যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। ন্যায় এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় কখনো অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেন নি। সব সময় অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) সদাচারণ করেছেন।
রাসুল (সাঃ) জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সদাচারণ করেছেন এবং অমুসলিমদের প্রতি উম্মতের মধ্যে কেউ যেন কোন প্রকার জুলুম ও অবিচার না করে সে নির্দেশনা ও দিয়েছেন।
অমুসলিমদের প্রতি রাসূল (সাঃ) অধিকার রক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। কোন মুসলিম যদি অমুসলিমদের প্রতি অবিচার করে, তাহলে বিচারের দিন অমুসলিমদের পক্ষে নবীজি অবস্থান নিবেন। হযরত সুফিয়ান ইবনে হালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
জেনে রেখো! কোন মুসলমান যদি মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন-নিপীড়ন করে, কোন অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোন জিনিস বা সহায়-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়; তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় আমি তাদের বিপক্ষে অমুসলিমদের পক্ষে অবস্থান করবো।[ আবু দাউদ]
অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর আচরণ কেমন ছিল সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
অমুসলিমদের সাথে ওঠাবসা করা এবং কথা বলায় কোন বাধা নেই। প্রয়োজনে অমুসলিমদের মসজিদে বসার ও অনুমতি রয়েছে। রাসূল (সাঃ) এর দরবারে যখন সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি হাজির হয়েছিল, তখন তারা মসজিদের শেষে গম্বুজ এর কাছে অবস্থান করে।
নামাজের সময় হলে দলের একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল নামাজের সময় হয়েছে। এরা একদল অমুসলিম, তারা মসজিদে আছে। জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অমুসলিমদের কারণে জমিন নাপাক হয় না।
মুসলিমদের কি অমুসলিমদের প্রতি সদয় হওয়া উচিত?
কিছু মানুষ অমুসলিমদের প্রতি হিংসাত্মক এবং বিরূপ আচরণ করে থাকেন এবং তাদের উপর নানা ধরনের জুলুম ও অবিচার এমন কি হত্যার মতো জঘন্য কাজও করে থাকে। যা ইসলামের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ ইসলামকে পুঁজি করে তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকে।
অথচ অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে বিশেষ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরেও অনেকে অমুসলিমদের সাথে মেলামেশা এবং সামাজিক অংশীদারিত্বকে বৈধ ও অবৈধ এ বিষয়ে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা করে থাকেন।
বৈধতা ও অবৈধতা দৃষ্টিকোণ থেকে অমুসলিমদের সাথে একজন মুসলিমের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর আচরণ এবং ইসলামী শিক্ষা দীক্ষা জানার জন্য কুরআনের দুটি আয়াতই যথেষ্ট। এই দুটি আয়াতেই অমুসলিমদের প্রতি মুসলিমের আচরণ বিষয়ে পূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে।
পবিত্র কুরআনের সূরা মুমতাহীনার ৮ ও ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন —
দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচরণে এবং ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন। আল্লাহ শুধু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে এবং তোমাদেরকে বহিষ্কার করাতে সাহায্য করেছে। আর যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই তো জালিম।
[সূরা মুমতাহীনা আয়াত : ৮ ও ৯]
পবিত্র কুরআনের সূরা মুমতাহীনার ৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে সকল অমুসলিম ধর্মের জন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি, মাত্রভূমি থেকে মুসলমানদের উৎখাতের সাথেও জড়িত ছিল না, যাদের সাথে মুসলমানদের কোন যুদ্ধ বা শত্রুতা নেই, তাদের প্রতি ইনসাফ ও সুবিচার করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেন না; বরং অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) সদাচার ও ন্যায়নিষ্ঠ আচরণে উৎসাহ প্রদান করেন।
অমুসলিমদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়?
আল্লাহতালা স্পষ্ট করে ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোন অমুসলিমদের সঙ্গেই দয়া ও সম্প্রীতি বজায় রাখা যাবে না; বিষয়টি এমন নয়। বরং যারা মুসলিমদের সঙ্গে লড়াইয়ে রত বা শত্রুভাবাপন্ন , কেবল তাদের সাথেই সম্প্রীতির সম্পর্ক রাখা যাবে না।
এই ধরনের বাচনভঙ্গি পবিত্র কুরআনের সূরা আল বাকারায় সাফা মারওয়ায় তাওয়াফের ক্ষেত্রেও বিধৃত হয়েছে। জাহিলি যুগের কিছু বিষয়ের কারণে সাফা মারওয়ায় তাওয়াফের ব্যাপারে কারো কারো মনে দ্বিধা কাজ করছিল, তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে বলেন, সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। কাজে এই যে কেউ (কাবা) ঘরে হজ বা উমরা সম্পন্ন করে, তার জন্য এ (পাহাড়) দুটির প্রদক্ষিনে কোন গুনাহ নেই। [ সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৮]
এই আয়াতে "গুনাহ নেই" বলা হয়েছে তাদের ভুল ধারণা মোচনের জন্য, বিধান বোঝানোর জন্য নয়। কারণ, সাফা মারওয়ার প্রদক্ষিণ ওয়াজিব এবং এটি ইসলামে একটি ধর্মীয় নিদর্শন।