ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা হারাম নাকি হালাল
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা হারাম নাকি হালাল এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন হাদিস পাওয়া না গেলেও ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা জায়েজ নেই এটি স্পষ্ট। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার জীবদ্দশায় এ ধরনের কোন দিবস পালন করেননি। এবং কাউকে করতেও উৎসাহ প্রধান করেননি।আজকে আর্টিকেলটি ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা হারাম নাকি হালাল এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে সাজানো হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা হারাম নাকি হালাল
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা হারাম নাকি হালাল এ বিষয়ে স্পষ্ট হাদিস পাওয়া না গেলেও ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।জন্মদিন পালনের সূচনা হয় ফেরাউন থেকে। ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই।
জন্মদিন পালন বিষয়ে বাইবেলের বুক অফ জেনেসিসে এসেছে, 'তৃতীয় দিনটা ছিল ফেরাউনের জন্মদিন। ফেরাউন তার সব দাসদের জন্য ভোজের আয়োজন করলেন। সেই সময় ফেরাউন রুটি ওয়ালা ও খাদ্যদ্রব্য পরিবেশক কে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন।[ আদি পুস্তক : ৪০২]
বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ বিজাতিদের অনুসরণ করে ধুমধাম করে, আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে জন্মদিন পালন করে। এমনকি কুকুর বিড়াল এ ধরনের পোষা প্রাণীরও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মদিন পালন করে ; যা নেহাতই বোকামি।
এ বিষয়ের হাদিসের বর্ণনা এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোও বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, সে আমাদের ছেড়ে অন্য কোন জাতির সাদৃশ অবলম্বন করে। তোমরা ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, খ্রিস্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না। [ সিলসিলাহ সহীহা : ২১৯৪]
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা যদি হালাল হত কিংবা শরীয়ত সম্মত হতো তাহলে নবী রাসূলগণ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনগণ এবং তাবে তাবেঈ গণসহ পূর্ববর্তী মহান ব্যক্তিদের থেকে জন্মদিন পালনের প্রমাণ থাকতো। কিন্তু আদৌ তা নেই।
নবী রাসূলগণ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনগণ এবং তাবে তাবেঈ গণসহ পূর্ববর্তী মহান ব্যক্তিদেরা জন্মদিন পালন করা তো দূরের কথা, তারা নিজেদের জন্ম তারিখ পর্যন্ত জানেন না, অনেকের জন্ম সাল পর্যন্ত জানা যায়। জন্মদিন পালন করা যদি হালাল হত তাহলে তারা তাদের জন্ম সনদ বানিয়ে রাখতেন এবং জন্মদিন পালন করতেন।
অপচয় এবং অনর্থক কাজ কোনটি শরীয়ত সম্মত নয়। ফলে জন্মদিন পালন করে অপচয় করার কোন সুযোগই ইসলামে নেই।পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাইল এর ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে খরচের ব্যাপারে হুকুম করেছেন, ' আর কিছুতেই অপব্যয় করোনা। নিশ্চয়ই অপব্যয় কারীরা শয়তানদের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। '
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম সন জানা গেলও জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। রাসুল সাঃ তার জীবদ্দশায় কখনো জন্মদিন পালন করেননি এবং কাউকে নির্দেশও দেননি। জন্মদিন পালন করা যদি হালাল বা জায়েজ হতো তাহলে প্রিয় নবীও তার নির্দেশ দিতেন।
মানব জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে হুকুম দিয়েছেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর।তাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো অনুসরণ করোনা। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করো। [ সূরা আল আরাফ , আয়াত : ৩]
জন্মদিন নিয়ে কোরআনের আয়াত
রাসুলুল্লাহ সাঃ কখনো নিজের জন্মদিন পালন করতেন না। এমনকি পূর্বের নবী ও রাসূলগণদের জন্মদিন উপলক্ষে কোন প্রকার উৎসব পালন করতেন না।রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহাবায়ে কেরামদের কোন দিবস পালন করতে নির্দেশ দেননি।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট হুকুম দিয়েছেন , রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো। যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন তা থেকে তোমরা নিভৃত হও।
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-হাশরের ৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম সোমবার। তাই তিনি প্রতি সপ্তাহে সোমবার জন্মের শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রাখতেন।
জন্মদিন পালন করা কি বিদআত
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করার কোন অস্তিত্ব নেই। এটি মূলত ফেরাউন এবং খ্রিস্টান কালচার থেকে এসেছে। শরীয়তে কোন দিবস পালনের হুকুম নেই।আর শরীয়তে যে বিষয় হুকুম নেই; সে বিষয়কে নতুন রূপে সৃষ্টি করে পালন করা বিদআত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাকো। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই পথভ্রষ্টতা । [ আবু দাউদ : ৬৪০৭ ; মিশকাত : ১৬৫]
কেক কেটে জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ
জন্মদিন পালন করার সূচনা হয় ফেরাউন থেকে এবং কেক কেটে জন্মদিন পালন করা পশ্চিমা সংস্কৃতির অংশ। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনের কোন কাজ এবং ইবাদতে বিজাতিদের অনুসরণ করা সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে। [ সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১]
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন করা হারাম নাকি হালাল এটি বোঝানোর জন্য কিছু কথা উপস্থাপন করছি। মানুষ জন্মদিন পালন করতে গিয়ে অর্থাৎ জন্মদিন কে কেন্দ্র করে অধিকাংশ সময় অপচয় এবং অপব্যয় করে থাকে। জন্মদিন উপলক্ষে বিজাতির সাদৃশ্য কেক কাটা, ছেলে মেয়ে একসাথে নাচ-গান সহ বিভিন্ন কর্মকান্ড করে থাকে যা ইসলামে সুস্পষ্ট হারাম।
এছাড়াও জন্মদিন পালন করা উপলক্ষে অনেকে প্রয়োজনের বেশি কেনা-কাটা করে থাকেন। কিন্তু ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, তোমরা আহার কর ও পান কর। কিন্তু অপচয় করোনা... [ সূরা আল আরাফ, আয়াত : ৩১]
এছাড়াও জন্মদিনে খুশি হওয়া নেহাত বোকামি। প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কে কখন কিভাবে মারা যাবে আমরা তা জানি না। জীবনে এক একটা জন্মদিন আশা মানে জীবন থেকে একটা বছর ঝরে যাওয়া। এতে আমাদের খুশি হওয়ার কিছু নেই। আমাদের আরও আক্ষেপ ও দুঃখ করা উচিত এবং আল্লাহ তাআলার কাছে বিগত বছরের সকল কাজের জন্য ক্ষমা ও দোয়া চাওয়া উচিত।