ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ পবিত্র আল কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত। সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত কে 'আয়াতুল কুরসি' বলা হয়।আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং মর্যাদাপূর্ণ আয়াত এজন্য যে, এই আয়াতে মোট ৯ টি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাক্য রয়েছে। যার প্রতিটি বাক্যে মহান আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও আল্লাহতালার গুণের বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত ও আমল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


আজকে আর্টিকেলে আমরা আয়াতুল কুরসির ফজিলতঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত , প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে কি হয়? এবং আয়াতুল কুরসি নামাজে কখন পড়তে হয়, কুরআনের কোথায় আয়াতুল কুরসি আছে? এবং আয়াতুল কুরসি আরবিআয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ, প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করব, ইনশাল্লাহ।



ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলতআয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি


ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত

পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত অর্থাৎ আয়াতুল কুরসি কে রাসুলুল্লাহ সাঃ পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত এবং সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আয়াতুল কুরসির সম্পূর্ণ আয়াত জুড়ে মহান আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা এবং গুণাবলীর বর্ণনা থাকায় আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের আমলের মধ্যে অনেক বেশি ফজিলত রেখেছেন। 


আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত এতটাই বেশি যে রাতে ঘুমোনোর আগে আয়তুল কুরসি পরে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালা সব ধরনের বিপদ-আপদ এমনকি শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকেও হেফাজত করেন। 



ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতে বিছানায় গিয়ে কেউ যখন আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবে, ওই রাতের পুরো সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য হিফাজতকারী নিয়োজিত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছাকাছিও  ঘেঁষতে পারবেনা। [ সহীহুল বুখারী : ২৩১১]


ঘুম কে মৃত্যুর সমান বলা হয়। কেননা ঘুমিয়ে মধ্যে আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে না। ঘুমের মধ্যে অনেক বালা মুসিবত বিপদ-আপদ  এবং জীন ও শয়তান দ্বারা আমাদের অনিষ্ট হতে পারে। তাই সব ধরনের বিপদ-আপদ এবং জিন ও শয়তান হতে রক্ষা পেতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আল্লাহ সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন। 



আয়াতুল কুরসি আরবি


اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ' لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ' لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ' مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِه' يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ' وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ' وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ' وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا' وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-


ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলতআয়াতুল কুরসি আরবি ছবি


আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ 

আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা- তা’খুযুহু সিনাতুও ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়া-তি ওয়ামা- ফিল আরদ্বি, মাং যাল্লাযী ইয়াশফা'উ 'ইন্দাহূ ইল্লা- বিইযনিহ, ইয়া'লামু মা- বাইনা আইদিহিম ওয়ামা- খালফাহুম, ওয়ালা- ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন 'ইলমিহি ইল্লা- বিমা- শা-আ, ওয়াসি'আ কুরসিয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব, ওয়ালা- ইয়া'উদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল 'আলিয়্যুল 'আজ্বীম।



আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ

আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব; সমস্ত কিছুর ধারক।তন্দ্রা বা নিদ্রা তাকে স্পর্শও করতে পারেনা। আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত কিছুতারই।এমন কে আছে, যে তার অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করতে পারে? তিনি তাদের অতীত ও ভবিষ্যতের সব জানেন। তিনি যেটুকু চান, সেটুকু ছাড়া তার জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তার 'কুরসি' আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত। এতদুভয়ের সংরক্ষণ তাকে ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ; সুমহান।



আয়াতুল কুরসির ফজিলত

আয়াতুল কুরসি অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত পবিত্র কুরআনে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং ফজিলত পূর্ণ আয়াত। আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল এত বেশি গুরুত্বপূর্ন হওয়ার কারণ হলো আয়াতুল কুরসির সম্পূর্ণ আয়াত জুড়ে মহান আল্লাহতালার তাওহীদ এবং গুণাবলী প্রকাশ পেয়েছে।আয়াতুল কুরসির মোট ৯টি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাক্য রয়েছে যার প্রত্যেকটিতে আল্লাহর গুণাবলী এবং একত্ববাদ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত ও আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 


প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত হলো যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়বে, মৃত্যু ব্যতীত তার জান্নাতে যাওয়ার আর কোনো বাধা হিসেবে থাকবে না। 


ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত হলো যে ব্যক্তি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমোতে যাবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সারারাত একজন হেফাজতকারী নিয়োজিত থাকবে, এমনকি শয়তান পর্যন্ত তার আশেপাশেও যেতে পারবে না। 


সকাল-সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসি পাঠের ফজিলত ও আমল হলো যে ব্যক্তি সকালে ফজরের নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য একজন হেফাজতকারী নিয়োজিত থাকবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পড়বে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্ধ্যা হতে সকাল পর্যন্ত তার জন্য একজন হেফাজতকারী নিয়োজিত থাকবে। 


সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের আয়াতুল কুরসি কে অজিফা বানিয়ে নিতে হবে।কারণ আয়তুল কুরসির মহত্ব থেকে আমরা যাতে কোনভাবেই বঞ্চিত না হই সেটিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 


 

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে কি হয়?

আয়াতুল কুরসির আরেকটি বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল হল প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি জান্নাতে যেতে চায় সে যেন প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে। কেননা এই আমল করলে জান্নাতে যাওয়ার জন্য মৃত্যু
ব্যতীত আর কোন বাধা থাকবে না। 


হযরত আবু উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই তার জান্নাতে যাওয়ার পথে অন্তরায় হিসেবে থাকবে না।[আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নাসায়ি : ১০০; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, ইবনুস সুন্নি : ১২১; সহিহুল জামি, খন্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩৩৯]


সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করতে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আল্লাহ সকল মুমিন মুসলমানকে এ আমল করার তাওফিক দান করুন। 



আয়াতুল কুরসি নামাজে কখন পড়তে হয়

আয়াতুল কুরসি প্রত্যেক নামাজের অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর আয়াতুল কুরসী পড়তে হয়। যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত নামাজে আয়াতুল কুরসি পড়ে জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ব্যতীত তার আর কোনো বাধা থাকে না। 



কুরআনের কোথায় আয়াতুল কুরসি আছে?

পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতকেই আয়াতুল কুরসি বলা হয়। পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সূরা ফাতিহা এরপরেই সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সূরা বাকারা। কেননা এই সূরার মধ্যেই রয়েছে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত বাকারার সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত অর্থাৎআয়াতুল কুরসি। যার নয়টি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাক্যের প্রত্যেকটিতে আল্লাহর মহত্ব, গুণাবলী এবং তাওহীদ বর্ণনা করা হয়েছে। 



সুতরাং আজকে আর্টিকেল থেকে আমরা ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত এবং আয়াতুল কুরসি পড়ার গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আল্লাহতালা সকল মুমিন মুসলমানদের কে উক্ত আমলসমূহ করার তাওফিক দান করুন ,আমীন।
Next Post Previous Post