প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া

দোয়া একটি ইবাদাত এবং মুমিনের হাতিয়ার। শরীয়তে দোয়ার প্রতি এত বেশি গুরুত্ব আরোপের কারণ হলো- সৃষ্টির সাথে স্রষ্টারদের সম্পর্ক, দোয়ার মধ্য দিয়ে তা সবচেয়ে প্রবলভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। দোয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের প্রাত্যহিক জীবন আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট বড় বেশ কিছু দোয়া শিখিয়ে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তুফান, খরা, ভূমিকম্প, বজ্রপাত, শিলা বৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টি প্রভৃতি থেকে বাঁচার জন্য কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। আজকে আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া এই বিষয়ে।



প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া



প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কিছু বিপদ-আপদ ও বালা মুসিবত দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সতর্ক করেন। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ যেকোনো বিপদ আপদে বিচলিত না হয় ধৈর্য ধারণ করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা সূরা বাকারার ১৫৫ থেকে ১৫৭ নম্বর আয়াতে বলেন, 'আর আমি তোমাদেরকে  কিছু ভয়, ক্ষুধা, এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদেরকে- যারা নিজেদের বিপদে পড়লে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চয়ই তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াত প্রাপ্ত।' 


প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কিছু সুন্নত আমল করা। কেননা দোয়া ও আমলের মধ্য দিয়েই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত হতে বাঁচার সুযোগ রয়েছে। হাদিসে এসেছে যখন কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হয়, বা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়-ঝঞ্ঝা ও বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। আল্লাহ তালাকে বেশি বেশি স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। 


প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনা এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, এবং তার নিকট তওবা কর। [ বুখারী : ৩০; মুসলিম : ৬২৮] 


প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা, সালাত আদায় করা, তসবি পাঠ করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, দোয়া-দরুদ পাঠ করা এবং ইস্তেগফার করা। মিশকাত শরীফের ৬৯৬ নং হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া বইলে মসজিদে যেতেন এবং নামাজের মাসকুল থাকতেন। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য ঝড় তুফানের প্রাদুর্ভাব ঘটলে আজান দেওয়া; তবে এই আজানে 'হাইয়া আলাস ছলাহ' এবং 'হাইয়া আলাল ফালাহ' বাক্য দুটি বাদ দিয়ে তাকবির দেওয়া। 



ঝড় তুফানের দোয়া

মূলত আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে থাকে। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া প্রার্থনা করা এবং সালাত আদায় করা, বেশি বেশি আল্লাহর তাজবিহ পাঠ করার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝড় তুফানের সময় এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে নিম্নের দোয়া পাঠ করতেন। 


اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ


উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খইরহা- , ওয়া খইরা মা-ফীহা- , ওয়া খইরা মা-উরসিলাত বিহ। ওয়া আ'ঊযু বিকা মিং শাররিহা-,  ওয়া শাররি মা-ফীহা-,  ওয়া শাররি মা- উরসিলাত বিহ।



বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ চাই, এর মধ্যে যা আছে তার কল্যাণ চাই এবং এটি যা দিয়ে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ চাই। সেই সাথে আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, এর মধ্যে যা আছে তার অনিষ্ট এবং এর অনিষ্ট থেকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। 

[সহিহ মুসলিম : ৮৯৯; তিরমিজি : ৩৪৪৯]



বজ্রপাতের সময় পড়ার দোয়া

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাতের থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনুয জুবাইর রাযিআল্লাহু আনহু মেঘের গর্জন শুনলে কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং নিম্নের এই দোয়াটি পড়তেন। 


سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ


উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লাযী ইউসাব্বিহূর র'দু বিহামদিহি ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খীফাতিহ।

বাংলা অর্থ : মহান সেই সত্তা, বজ্রধ্বনি এবং ফেরেশতাগণ যার তসবি পাঠ করে সমীহ ভরে। 


প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা রাদ এর ১৩ নম্বর আয়াতে 'বজ্র ধ্বনি আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে' বলতে মেঘমালার আওয়াজ কে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ মেঘমালা আল্লাহর প্রশংসা পাঠ করে যা আমরা বজ্রধ্বনি আকারে শুনতে পাই। 



প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে

প্রকৃতির স্রষ্টা আল্লাহ। তিনি মানবজাতির কল্যাণার্থে প্রকৃতিকে সৃষ্টি করেছেন। তাই প্রকৃতিকে গালি দেওয়া ঠিক নয়। কেননা মানব জাতির মত প্রকৃতির স্রষ্টা ও আল্লাহ। ফলে প্রকৃতিকে গালি দিলে আল্লাহকে গালি দেওয়ার সমান হয়। প্রকৃতিকে সৌন্দর্য দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন এবং এর পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ আল্লাহ তায়ালা করেন। 


প্রাকৃতিক দুর্যোগ হল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা অর্থাৎ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে যে কোন এক প্রাকৃতিক ঘটনা,যার দ্বারা মানবজাতির আর্থ-সামাজিক ক্ষতি সাধন হয়। ঋতুবৈচিত্রের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হলেও অধিকাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের কাজ কর্মের প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে ঘটে থাকে। এক কথায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হল স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।



প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন সৃষ্টি হয়

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা এসেছে, যখন কেউ কোন অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে দেখেও তার হাত ধরে না, অতিসত্বর আল্লাহ তাদের সকলের উপরে ব্যাপকভাবে বদলা নিবেন। হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যখন কোন কওমের মধ্যে পাপকর্ম সম্পাদিত হয় এবং দুষ্কৃতিকারীদের চেয়ে ওই কওমের জনসংখ্যা বেশি হয়, অথচ তারা তার প্রতিরোধের চেষ্টা করে না, তখন তাদের উপরে ব্যাপকভাবে আল্লাহর গজব নাযিল হয়। [ আবু দাউদ : ৪৩৩৮; মিশকাত : ৫১৪২]


প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা রুমের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। 



প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি কি

আল্লাহর সৃষ্টি এবং আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত প্রকৃতি যখন স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে যেয়ে মাঝেমধ্যে প্রকৃতির বিরূপ রূপ ধারণ করে রূঢ় ও রুষ্ট হয়, তখন প্রকৃতির সেই অবস্থানকে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে থাকি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলো হল- বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ঝড়, তুফান, খরা, শিলা বৃষ্টি, অনা বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ভারী বর্ষণ, দাবানল, দুর্ভিক্ষ, সত্য প্রবাহ, মহামারী, টর্নেডো, সুনামি, হারিকেন, বজ্রপাত, তুষারপাত ও ভূমিকম্প প্রভৃতি।
Next Post Previous Post