দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত কি হাদিস সম্মত

আসসালামু আলাইকুম। হযরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকা অবস্থায় দোয়া ইউনুস পাঠ করেছিলেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাকে কঠিন বিপদ থেকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দেন। তাই কোন বিপদ আপদ কিংবা মুসিবতে দোয়া ইউনুস পাঠ করলে সকল ধরনের বিপদ আপদ ও মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে দোয়া ইউনুস নিয়ে আমাদের প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যেমন খতমে ইউনুস, ইউনুস প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ এবং দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত প্রভৃতি বিষয়। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আলোচনা সাজিয়েছি দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত কি হাদিস সম্মত এই বিষয়ে। 


 

দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত কি হাদিস সম্মত



দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত কি হাদিস সম্মত

প্রচলিত আছে, কেউ দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার রুজি রোজগার বৃদ্ধি করেন, দুঃখ, দুশ্চিন্তা,অশান্তি, কষ্ট এবং যন্ত্রনা প্রভৃতি দূর করেন। যে ব্যক্তি দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠ করবেন আল্লাহ তার জন্য সব ধরনের কল্যাণের দ্বার খুলে দিবেন এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করবেন। 


আরো প্রচলিত আছে, রুগ্ন ব্যক্তির জন্য হাফেজ সাহেব ডেকে এনে ৪১ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করলে ওই ব্যক্তি দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন। এছাড়াও প্রচলিত আছে, ক্ষতমে ইউনিক অর্থাৎ সবাই মিলে দোয়া ইউনুস ১ লাখ ২৫ হাজার বার পাঠ করাকে নাম দেওয়া হয়েছে খতমে ইউনুস। খতমে ইউনুস এর ফজিলত হলো সব ধরনের অপকার থেকে রক্ষা, বিপদ আপদ থেকে দূরে থাকা এবং রোগ শোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যার কোন প্রসিদ্ধ দলিল পাওয়া যায়নি। 


হযরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকা অবস্থায় যে দোয়া পাঠ করে মুক্তি লাভ করেছিলেন সেই দোয়াকে হযরত ইউনুস (আ.) -এর নামে দোয়া ইউনুস নামকরণ হয়। দোয়া ইউনুস পাঠ করে হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে অন্ধকারাচ্ছন্ন কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বলে মুমিনের জীবনে এ দোয়াটির গুরুত্ব ও আমল অনেক বড়। 


বিপদে ও মসিবতে দোয়া ইউনুস পাঠ করা সম্পর্কে হাদিস এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাছের পেটে হযরত ইউনুস (আ.) -এ দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোন মুসলিম বিপদে পড়ে এ দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ কবুল করবেন। [ মুসনাদু আহমাদ, তিরমিজি ]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যদি কোন ব্যক্তি বিপদে এ দোয়া পড়ে তাহলে আল্লাহ কবুল করবেন। কিন্তু এখানে দোয়া ইউনুস পড়ার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা গণনা করা হয়নি। সুতরাং দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত , দোয়া ইউনুস ১০০ বার পাঠের ফজিলত কিংবা ৪১ দিন অথবা ৪১ বার এবং খতমে ইউনুস এরকম কোন প্রচলিত দলিল বিহীন কথাকে অনুসরণ না করে আমরা বেশি বেশি যে যতটা পারি দোয়া ইউনুস সহ অন্যান্য দোয়া পাঠ করব। 


কেননা দোয়া হলো মুমিনের হাতিয়ার। একমাত্র দোয়ার মধ্য দিয়েই তাকদির পরিবর্তন করা যায়। তাই সকল মুমিন মুসলমান ঈমানের সহিত দোয়া ইউনুস সহ অন্যান্য সকল দোয়া-দরুদ পাঠ করবো। ইনশা- আল্লাহ!



দোয়া ইউনুস কি?

আসুন আগে জেনে নিই দোয়া ইউনুস পাঠের আমলকে এত গুরুত্ব দেয়া হয় কেন এবং দোয়া ইউনুস কি এ বিষয়ে। কেন দোয়া ইউনুস প্রতিদিন ১০০০ বার পাঠের ফজিলত বা খতমে ইউনুস কে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়। 


আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইউনুস (আ.) -কওমের জাতিকে দীর্ঘ নয় বছর ইসলামের দাওয়াত প্রচার করেন। কিন্তু খুব অল্পসংখ্যক তার উপর ঈমান আনে হযরত ইউনুস (আ.) - তার কওমকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা না করে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের আহবান করেছিলেন। কিন্তু তারা তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় হযরত  ইউনুস (আ.) -নিরাশ হয়ে পড়েন। এবং তিনি তার কওম কে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। 


আল্লাহর নির্দেশ না পেয়েই হযরত ইউনুস (আ.) -তার উম্মতদের ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে পরীক্ষায় ফেলেন। এবং তিনি সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হন।সমুদ্রের একটি বিশাল মাছ তাকে গিলে ফেলে। তখন হযরত ইউনুস (আ.) -মাছের পেটে অন্ধকারে অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতা ও কাতরকণ্ঠে "লা-ইলাহা ইল্লা- আংতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুংতু মিনায্ব য্ব-লিমীন" দোয়াটি অনবরত পাঠ করেন। এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে মাছের পেট থেকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দেন। তাই এই দোয়াটি 'দোয়া ইউনুস' নামে পরিচিত।



দোয়া ইউনুস পড়ার ফজিলত

দোয়া ইউনুস পাঠের ফজিলত এবং মাহাত্ম্য অপরিসীম। হযরত ইউনুস (আ.) - এই দোয়ার বদৌলতে মাছের পেটের বন্দিদশা থেকে আল্লাহর রহমতে মুক্তি লাভ করেন। তাই এই দোয়া পাঠ করলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিপদ আপদ ও মুসিবত থেকে মুক্তি মিলবে। যেকোনো সংকটাপন্ন এবং অস্থিতিশীল সময় দোয়া ইউনুস পাঠ করা সুন্নত। 


হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, এই দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা কি কেবল ইউনুস আ. এর জন্যই প্রযোজ্য? জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য দোয়াটি বিশেষভাবে কবুল হলেও এটা সকল মুমিন মুসলিমদের জন্য সব সময় কবুলের ব্যাপারে প্রযোজ্য। 

তুমি কি কুরআনে পাঠ করোনি, "ওয়া কাজালিকা নূনযীল মু'মিনীন " আর এভাবেই আমি আল্লাহ মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি। [ তিরমিজি : ৩৫০৫]



দোয়া ইউনুস কোন সূরার আয়াত

দোয়া ইউনুস পবিত্র কুরআনুল কারীমের ২১ নম্বর সূরা আম্বিয়া -এর ৮৭ নম্বর আয়াত। পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মোমিন মুসলমানদের জন্য হযরত ইউনুস (আ.) -এর কাহিনী বর্ণনা করে বলেছেন,


আর মাছওয়ালার (হযরত ইউনুস আ.) কথা স্মরণ করুন। তিনি রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাকে ধরতে পারবো না। কতবার তিনি অন্ধকারের মধ্যে (ম্যাচের পেটে থাকা অবস্থায় ) এ কথা বলে আহবান করলেন—

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ 


দোয়া ইউনুস উচ্চারণ 

লা-ইলাহা ইল্লা- আংতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুংতু মিনায্ব য্ব-লিমীন


দোয়া ইউনুস বাংলায়

আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আপনি মহান ও পবিত্র।নিশ্চয়ই আমি ছিলাম জালিমদের দলভুক্ত।[ সূরা আম্বিয়া , আয়াত : ৮৭]


অতঃপর আমি তার আহবানে সারা দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এভাবে বিশ্বাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি। [ সূরা আম্বিয়া , আয়াত : ৮৮]



দোয়া ইউনুস পড়ার নিয়ম

দোয়া ইউনুস পড়ার নিয়ম নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। তবে দোয়া ইউনুস যে কোনো বিপদ-আপদ, বালা মুসিবত, দুশ্চিন্তার পেরেশানি অর্থাৎ যে কোন সংকটকালীন সময় এ সকল থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে পাঠ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।  


দোয়া ইউনুস সহ যেকোনো দোয়া পড়ার নিয়ম হলো পবিত্রতার সাথে ঈমানের সহিত একাগ্র চিত্তে বিনয় ও নম্রতা বজায় রেখে পূর্ণ আন্তরিকতার সহিত কাতরকণ্ঠে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তবে দোয়া ইউনুস পাঠের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। 


যেহেতু দোয়া ইউনুস পাঠের ক্ষেত্রে খতমে ইউনুস বা অন্যান্য কিছু প্রচারিত মত পাওয়া যায়, সেহেতু শরীয়তের বিধান হল যে বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে সেসব বিষয় আমরা যুক্তি তর্কে না যেয়ে বেশিরভাগ আলেম যে বিষয়ে মত দেবেন সেটাকে গ্রহণ করা উত্তম পন্থা। আল্লাহ সকলকে বুঝার তৌফিক দিন (আমিন)। 

Next Post Previous Post