বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতি ও প্রকৃতির জন্য অশেষ নিয়ামত স্বরূপ। তবে ভারী বৃষ্টি যেমন মানুষের জন্য ক্ষতিকর তেমনি অনা বৃষ্টি বা খরা প্রকৃতি ও মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ। বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহতালা মাটিকে সতেজ করেন এবং সে মাটি থেকে সবুজ শাকসবজি, ফলফলাদি ও শস্য দানা উৎপাদিত হয়। এছাড়াও বৃষ্টির পানি কৃষি সেচ ব্যবস্থা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গুলোকে সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বৃষ্টির পানি বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে সুপেয় পানির মূল উৎস।বৃষ্টির পানি গায়ে লাগানো সুন্নত। বৃষ্টির সময় দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয় এবং দোয়া কবুল হয়। আজকে আর্টিকেলে বৃষ্টির সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয় এবং অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচার দোয়া এ বিষয়ে আলোচনা করব।
বৃষ্টির সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়
বৃষ্টি মানব জাতি ও প্রকৃতির জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। বৃষ্টির পানি আল্লাহ প্রদত্ত রহমতের পানি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির পানিকে গায়ে লাগানো বা বৃষ্টিতে ভিজতে বলেছেন। বৃষ্টি হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টিতে ভিজতেন। আল্লাহ তায়ালা বৃষ্টির সময় দোয়া পড়লে দোয়া কবুল করেন এবং বৃষ্টির সময় দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। বৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের কয়েক জায়গায় এর নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন।
মহান আল্লাহ বৃষ্টির নিয়ামত ও রহমত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা আরাফের উল্লেখ করেন- আর তিনিই সে সত্তা যিনি তার (রহমত) বৃষ্টির আগে বায়ু প্রবাহিত করেন সুসংবাদ হিসেবে, অবশেষে যখন সেটা ভারী মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি সেটাকে মৃত জনপদের দিকে চালিয়ে দিই, অতঃপর আমি তা দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তা দিয়ে সব রকমের ফল উৎপাদন করি। এভাবেই আমরা মৃতদের বের করব, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। [ সূরা আরাফ , আয়াত : ৫৭]
বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয় অর্থাৎ বৃষ্টির সময় দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।তাই যখনই বৃষ্টি শুরু হবে তখনই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের দোয়া করা উচিত। হাদিসে এসেছে হযরত সাহল বিন সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না। এক. আযানের সময় যে দোয়া করা হয় এবং দুই. বৃষ্টির সময় যে দোয়া করা হয়। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মুখোমুখি হওয়াকালীন দোয়া কবুল হয়। [ আবু দাউদ : ২৫৪০]
বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা সুন্নত। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা রহমতের বারি ধারা হয়ে আসমান থেকে জমিনে বর্ষিত হয়। বৃষ্টির পানির সোয়া পেতে পরিধেয় বস্ত্রাংশ মেলে ধরা যাতে শরীরে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করতে পারে। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ' আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার পরিধেয় বস্ত্র প্রসারিত করলেন, যাতে পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কেননা এটা মহান আল্লাহর কাছ থেকে আসার সময় খুবই কম।' [ মুসলিম : ৮৯৮]
বৃষ্টির সময় দোয়া আরবি
বৃষ্টির বিশেষ ফজিলত হলো বৃষ্টির সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় অর্থাৎ বৃষ্টির সময় দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত বৃষ্টি শুরু হলে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা এবং মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। বৃষ্টির সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দোয়া পাঠ করতেন তা নিম্নে দেয়া হলো—
বৃষ্টির সময় পড়ার দোয়া
আরবি :
-اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা স্বায়্যিবান নাফি'আ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারার যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারী হয়। [ সহীহুল বুখারী : ১০৩২]
বৃষ্টি শেষে পড়ার দোয়া
অবশ্যই বৃষ্টি শেষে আল্লাহর রহমতের বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করা। হাদীসে এসেছে, হযরত যায়েদ বিন খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদাইবিয়ার রাতে বৃষ্টির শেষে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। এবং তিনি বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কি বলেছেন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন।
তিনি বললেন, আল্লাহ বলেছেন, আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যারা বলেছে, 'মুত্বিরনা বিফাদ্বলিল্লা-হি ওয়া রহমাতিহ' অর্থাৎ আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহে আমরা বৃষ্টি জলে সিক্ত হয়েছি। সে আমার প্রতি ঈমান এবং তারকার প্রতীক কুফরি দেখিয়েছে। আর যারা বলেছে, 'অমুক অমুক তারকার কারণে', সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।
আরবি :
مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللّٰهِ وَرَحْمَتِهِ
উচ্চারণ : মুত্বিরনা বিফাদ্বলিল্লা-হি ওয়া রহমাতিহ।
অর্থ : আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহে আমরা বৃষ্টি জলে সিক্ত হয়েছি।
[সহীহুল বুখারী : ৮৪৬; সহীহ মুসলিম : ৭১]
অতি বৃষ্টি হলে কি সমস্যা হয়
বৃষ্টি যেমন আমাদের জন্য রহমত ও নিয়ামাত তেমনিই অতি বৃষ্টি আমাদের জন্য কষ্টকর ও ক্ষতিকারক। কেননা অতি বৃষ্টির ফলে ফসলী জমি, ফসল, প্রাণী সম্পদ এবং মানব জীবনে কঠিন দুর্ভোগ নেমে আসে। অতিবৃষ্টি থেকে বন্যার সৃষ্টি হয়। অতি বৃষ্টির ফলে আমাদের চারিপাশ প্লাবিত হয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তাই অতিবৃষ্টি বন্ধের জন্য নিম্নের দোয়া পাঠ করতেন।
অতি দৃষ্টি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা পাঠ করা অবস্থায় এক সাহাবী মসজিদের প্রবেশ করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল!, হয়ে গেছে, মহান আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য অতিবৃষ্টি বন্ধের প্রার্থনা করুন।তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত সম্প্রসারিত করে আল্লাহর দরবারে নিম্নের দোয়া করলেন—
আরবি :
-اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ' وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ' وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা হাওয়া-লাইনা- ওয়ালা- 'আলাইনা-। আল্লা-হুম্মা আলালআ-কা- মি ওয়ায্বয্বির-বি। ওয়াবুত্বূনিল আওদিয়াতি ওয়ামানা-বিতিশ শাজারা।
অর্থ : হে আল্লাহ! এবার আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দিন, আমাদের এখানে আর নয়। হে আল্লাহ! আপনি এবার বৃষ্টি দিন উঁচু ভূমিতে, পাহাড় চূড়ায় উপত্যকার কোলে এবং বনাঞ্চলে। [ সহীহুল বুখারী : ১০১৩; সহীহ মুসলিম : ৮৯৭]
বৃষ্টির সময় দোয়া করার নিয়ম
বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। বৃষ্টির সময় দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। বৃষ্টির সময় আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। বৃষ্টির রহমতের পানি স্পর্শ করে অর্থাৎ হাতে নিয়ে মন থেকে ঈমানের সহিত যে কোন ইচ্ছা পূরণের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা সে সকল দোয়া কবুল করেন। তাই বৃষ্টির সময় দোয়া করার নিয়ম হলো বৃষ্টির পানি স্পর্শ করে বা হাতে নিয়ে দোয়া করা। কেননা হাদিসের এসেছে, বৃষ্টির সময় উক্ত দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। বৃষ্টির সময় আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন না এমনটা খুবই কম হয়।