বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল কি ছিল
৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মার্চ, দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ই রমজান মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটিই প্রথম এবং সবচেয়ে বড় সামরিক যুদ্ধ। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের ফলে তাদের ক্ষমতা আগের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পায়। আজকের আর্টিকেলে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল কি ছিল অর্থাৎ বদর যুদ্ধের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আকারে সাজানো হয়েছে।
বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল কি ছিল
দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান বদর প্রান্তরে মুসলমান ও কুরাইশ বাহিনীর মধ্যে ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। রাসুল সাঃ এর পরিচালনায় এটি ছিল মুসলমানদের মধ্যে প্রথম সামরিক যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে ইসলামের যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরান ও সূরা আনফাল বদরের যুদ্ধের বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, স্মরণ করো! যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তারা সংখ্যায় অল্প। যদি তিনি তাদের সংখ্যায় বেশি দেখাতেন তবে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করতে। কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের খবর জানেন। [ সূরা আনফাল, আয়াত : ৪৩]
বদর যুদ্ধের অবস্থা তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন। অথচ তোমরা ছিলে ক্ষীণশক্তি। [ সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১২৩]
মুসলমান ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের পরে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের আয়াতে মুসলিমদেরকে অস্ত্র ধারণের অনুমতি দিয়েছেন। মদীনায় আসার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি প্রধান সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
প্রথম পদক্ষেপ: মদিনার গোত্র গুলির সাথে শান্তি চুক্তি স্থাপন করা।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ : কুরাইশ ও তাদের মিত্রদের তথ্য সংগ্রহের জন্য গোয়েন্দা নিযুক্ত করা।
তৃতীয় পদক্ষেপ : মদিনার পাশ দিয়ে সিরিয়াগামী মক্কার বাণিজ্য কাফেলায় অভিযান চালানো।
বদর যুদ্ধের কারণ
বদর যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার বেশ কিছু কারণ ছিল। বদর যুদ্ধের প্রধান কারণ সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো—
মক্কার কুরাইশদের শত্রুতা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত প্রাপ্তির পর আল্লাহর নির্দেশে মক্কায় ইসলাম প্রচার কালে কুরাইশগণ এটিকে অংকুরে বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মুসলমান ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের মাত্র দু বছরের মধ্যেই ইসলাম ধর্ম ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এতে কুরাইশগণ ভীষণভাবে ঈর্ষান্বিত হয়। তারা মদিনার মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার কুরাইশদের কার্যক্রমের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখেছিলেন। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক মোহাম্মদ আলী বলেছেন, ক্ষুদ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার দায়িত্ব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর এসেছিল এবং তিনি একজন দক্ষ সেনা নায়কের মত শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। ফলে কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি তিনি মোকাবেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর ষড়যন্ত্র
মদিনার খাযরাজ গোত্রের নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। মুভি মদিনার ভবিষ্যৎ নেতা হওয়া ছিল তার মূল লক্ষ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনা হিজরতের ফলে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের নেতা হওয়ার স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। ফলে কুরাইশদের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করে মদিনা থেকে রাসূল সাঃ কে বহিষ্কারের পরিকল্পনা করে এবং রাসুল সাঃ এর বিরুদ্ধে একটি মুনাফেক দল গঠন করে। মক্কার কুরাইশদের মনোবল বৃদ্ধি করতে মদিনার এই মুনাফিক দল টি বিশেষ ভূমিকা রাখে। যার ফলে কাফেররা মদিনা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।
মদিনায় মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি
মদিনা হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা মুসলমানদের এই অগ্রগতিতে মক্কার কুরাইশ গান শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং মুসলমানদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মদিনা আক্রমণে ষড়যন্ত্র করেল্লাম 'মদিনা সনদ' চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে মদিনায় রাসুল সাঃ ও মুসলমানদের মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর সম্পর্কে এ এইচ সিদ্দিকী মত প্রকাশ করেন , 'মদিনা সনদ এর ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোচ্চ সামরিক, বিচারিক, ধর্মীয়, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রদান হলে মদিনা রাষ্ট্র একটি শক্ত ভিত্তি লাভ করে।' মুসলমানদের এ অগ্রগতিতে মক্কার কুরাইশরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য মদিনা আক্রমণে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতকতা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় তাদের ধর্মে আকৃষ্ট করার আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু তা না করে দ্রুত ইসলাম সম্প্রসারণ হওয়ায় ইহুদী সম্প্রদায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। মদিনার ইহুদিদের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও তারা মুসলমানদেরকে শত্রু চোখে দেখে। ইহুদি সম্প্রদায় মদিনা সনদ লঙ্ঘন করে মক্কার কুরাইশদের কাছে তথ্য পাচার করে এবং সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রোরোচনা দেওয়াসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক আমির আলী বলেন, 'সমগ্র মদিনা শহর বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতায় ভরে গিয়েছিল।'
বাণিজ্যিক পথ রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা
মদিনার পথ ধরে সিরিয়া ও মক্কার লোকজন ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করত কুরাইশরাও এই পথেই সিরিয়া মিশর সহ অন্যান্য দেশের সাথে ব্যবসা করতো। ইসলামী প্রজাতন্ত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে মদীনা সুপ প্রতিষ্ঠিত হলে পুরুষদের নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ হারাতে পারে এই শঙ্কায় তারা মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
লুটতরাজ ও দস্যবৃত্তি
পুদিনার প্রান্ত সীমায় প্রায়ই মক্কাবাসী ও তাদের মিত্রগণ লুটপাট করত। এবং কি তারা মুসলমানদের ফলের গাছ নষ্ট করত এবং গবাদি পশু ধরে নিয়ে যেত।কুরজ বিন জাবিরের নেতৃত্বে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে উপকণ্ঠে কুরাইশ বাহিনী হামলা চালায় এবং কয়েকটি উট ধরে নিয়ে যায়। তারা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে সতর্ক করে বলে, মদিনা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বহিষ্কার না করলে মক্কার কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করবে। যার ফলে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সম্পর্কে মাওলানা মোহাম্মদ আলী বলেন, 'ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে ধ্বংসের জন্য কুরাইশদের দীর্ঘদিনের উদ্যোগ বদরের যুদ্ধের কারণ।'
মদিনা বাসীর রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামকে আশ্রয় দান
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ও তার সাহাবীগণকে মদিনা বাসী আশ্রয় দেওয়ায় মক্কার কুরাইশরা অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কারণ তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদেরকে বিপ্লবী বলে মনে করত। এটি বদর যুদ্ধের অন্যতম একটি কারণ।
নাখলার খন্ড যুদ্ধ
নাখলা নামক স্থানে মদিনার প্রবাসী মুসলমানদের সঙ্গে কুরাইশদের প্রথম সংঘর্ষ হয়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শহরকে কুরাইশদের ধ্বংসাত্মক কার্যাবলী থেকে রক্ষার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে জাহশের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি গোয়েন্দা দল মক্কার উপকণ্ঠে প্রেরণ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে জাহশ তার বাহিনী নিয়ে নাখলা পৌঁছে একটি কুরাইশ কাফেলা দেখতে পান। এতে আব্দুল্লাহ ইবনে মুগীরার দুই ছেলে উসমান ইবনে আব্দুল্লাহ ও নওফাল ইবনে আব্দুল্লাহ এবং মুগীরার মুক্ত প্রাপ্ত দাস আমর ইবনে হাদরামি ও হাকিম ইবনে কাইসান ছিলেন।
এই দিনটি ছিল রজব মাসের শেষ দিন। রজব যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাস ছিল তাই আক্রমণ করা সম্ভব ছিল না। অন্যদিকে মাস শেষ হওয়ার সময় কাফেলাটি মক্কার হারাম সীমানায় প্রবেশ করবে ফলে তাদের উপর আর আক্রমণ করা সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম বাহিনী কাফেলা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। আক্রমণের শুরুতে তীরের আঘাতে আমর ইবনে হাদরামী নিহত হন। মুসলমানরা ওসমান ইবনে আব্দুল্লাহ এবং হাকিম ইবনে কাইসানকে গ্রেফতার করে। নওফাল ইবনে আব্দুল্লাহ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ফলে মক্কার কুরাইশবাসী আরো ক্ষিপ্ত হন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
সুফিয়ানের মিথ্যা প্রচারণা
কুরাইশ কাফেলার নেতা আবু সুফিয়ান আক্রমণের আশঙ্কায় যাত্রা পথে সাক্ষাৎ লাভ করা বিভিন্ন কাফিলাগুলির কাছ থেকে মুসলমান বাহিনীর সম্ভাব্য অভিযানের ব্যাপারে তথ্য নিয়েছিলেন। ফলে তিনি মুসলিমদের আক্রমণের খবর পান। বার্তাবাহক হিসেবে জমজম ইবনে আমর গিফারীকে সাহায্য চেয়ে মক্কায় প্রেরণ করেন।
সে দ্রুত মক্কায় পৌঁছায় এবং ঘোষনা করে যে মক্কার কাফেলা মুসলিমদের হাতে পড়তে পারে। কুরাইশগণ কাফেলা আক্রান্ত, কাফেলা আক্রান্ত। আবু সুফিয়ানের সাথে তোমাদের সম্পদ রয়েছে, তার ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য মোহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা এগিয়ে আসছে। তাই আমার মনে হয় না যে তোমরা তা পাবে। তাই সাহায্যের জন্য এগিয়ে চলো এগিয়ে চলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আবু জাহালের নেতৃত্বে দ্রুততম সময়ে ১৩০০ সৈনিকের একটি বাহিনী গড়ে তোলা হয়। এই বাহিনীতে অসংখ্য উট, ১০০ ঘোড়া ও ৬০০ লৌহবর্ম ছিল। এ বাহিনীতে আবু জাহেল, উতবা ইবনে রাবিয়া, শাইবা ইবনে রাবিয়া, আবুল বাখতারী ইবনে হিশাম, হাকিম ইবনে হিযাম, নওফেল ইবনে খুয়াইলিদ, হারিস ইবনে আমির, তুয়াইমা ইবনে আদি, নাদার ইবনে হারিস, জামআ ইবনে আসওয়াদ ও উমাইয়া ইবনে খালাফ সহ মক্কার অনেক অভিজাত ব্যক্তি যোগ দেন।
বদর যুদ্ধের ঘটনা
৬২৪ খ্রিস্টাব্দে রাসুল সাঃ কুরাইশদের মদিনা আক্রমণের সংবাদ শুনে ৩১৩ জন সৈন্য নিয়ে পুরুষদের গতি রোধ করার উদ্দেশ্যে মদিনার ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। অন্যদিকে এক হাজার সৈন্য নিয়ে আবু জেহেলের নেতৃত্বে কুরাইশ বাহিনীও সেখানে উপস্থিত হয়। আরবীয় রীতি অনুযায়ী, মল্লযুদ্ধে প্রথমে কুরাইশদের বীর উতবা, শায়বা ও ওয়ালিদ এগিয়ে আসলে রাসূল সাঃ এর নির্দেশে হামজা, আলী ও আবু ওবায়দা কুরাইশদের পরাজিত করেন। আবু জেহেল উপায়ান্তর না পেয়ে অতর্কিত ভাবে মুসলমানদের উপর হামলা চালায়। ফলে উপায় বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
বদর যুদ্ধে আবু জাহেল সহ ৭০ জন কুরাইশ নিহত হয় এবং সত্যের জন বন্দি হয়। অন্যদিকে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন মুসলমান শাহাদত বরণ করেন। মুসলমানদের হাতে নিপতিত ৭০ জন কুরাইশ যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে সমর্থ্যবানদের ৪ হাজার দিরহাম মুক্তি পনের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।আর যারা মুক্তিপণ দানে অসমর্থ ছিলেন তাদেরকে মুসলমানের বিরোধিতা না করা এবং মুসলমান বালকদের শিক্ষাদানের শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। রাসূল সাঃ তাদের প্রতি উদারচিত্ত ও মহানুভবতার পরিচয় দেন।
বদর যুদ্ধের ফলাফল
মক্কায় প্রতিক্রিয়া
হাইসমান ইবনে আব্দুল্লাহ কুরাইশদের পরাজয়ের খবর মক্কায় নিয়ে আসেন। নিহতদের শোকে মক্কায় মাতম শুরু হয়। তাদের শোকে মুসলিমরা যাতে আনন্দিত না হতে পারে তাই তারা মাতমে সংযত হয়। তাছাড়া মুক্তি পণ নিয়ে তাড়াহুড়া না করতে বলা হয় এবং পরের বছর দুই বাহিনী উহুদের যুদ্ধে পুনরায় মুখোমুখি হয়।
পরবর্তী বিজয় ও বিশ্বজয়ের পথ প্রদর্শক
বদর যুদ্ধের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে ঐতিহাসিক পিকে হিট্টি বলেন, 'এই সম্মুখ যুদ্ধে নিয়মানুবর্তিতা এবং মৃত্যুর প্রতি যে দৃষ্টান্ত মুসলমান প্রদর্শন করল তাতেই ইসলামের পরবর্তী বিজয়ের বিশেষ লক্ষণসমূহ প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। তাই বদরের যুদ্ধে জয় লাভের ফলে হযরত মুহাম্মদ সাঃ ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের যুদ্ধ, ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে হুদাইবিয়ার সন্ধি, ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মুতার যুদ্ধ, ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয় ও হুনায়েনের যুদ্ধ এবং ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে তাবুক অভিযানে সাফল্য লাভ করেন।
বদর যুদ্ধের ফলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, মক্কার কুরাইশ এবং মদিনার ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মনোবল ভেঙে যায়। এছাড়া মদিনার অন্যান্য গোত্র ও সম্প্রদায়ের ওপার ও ইসলামের কর্তৃত্ব জোরদার হয়। বদর যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি বলেন, 'ইসলাম পুনর্জীবন লাভ করল এবং আত্মরক্ষার পরিবর্তে আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করল।'
বদরের যুদ্ধ ছিল সত্যের উপর মিথ্যার বিজয়। ইসলাম ও মুসলমান সত্যের পথে অবিচল ছিল তাই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা সাহায্য পেয়েছে। বদরের যুদ্ধ মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে বিজয়ের পথ মসৃণ করে ও মিথ্যার উপর সত্যের বিজয়ের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইতিহাস রচনা করে।এছাড়াও বদরের যুদ্ধ আধুনিক যুগেও বিশেষ প্রভাব ফেলে। ১৯৭৩ সালে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিশরের আক্রমণের নাম ছিল অপারেশন বদর। ১৯৮০ এর দশকে ইরাকের বিরুদ্ধে ইরানের অপারেশনের সময়ও বদরের নামে ইরানের অপারেশনের নাম অপারেশন বদর নামকরণ হয়।
বদর যুদ্ধের প্রভাব
বদরের যুদ্ধ মুসলমানদের উপর সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে। বদর যুদ্ধ জয়ের ফলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কৃতিত্ব নেতা হিসেবে বহুলাংশে বেড়ে যায়। ফলে মুসলিমদেরকে অনন্য আরব গোত্রগুলিও নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে। মদিনার অনেকে এ সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলিমদেরকে খুবই সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়।
বদর যুদ্ধে আবু জাহেল সহ মক্কার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তির মৃত্যুর ফলে নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন আবু সুফিয়ান। এবং পরবর্তীতে কুরাইশদের নেতৃত্ব দিয়েছেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে। মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু সুফিয়ান মুসলিম হওয়ার পর মুসলিম সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তীতে উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন আবু সুফিয়ানের ছেলে মুয়াবিয়া।