সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া সমূহ কি

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার এবং এটি একটি ইবাদত। মুমিনের জীবনের দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা দোয়ার মধ্য দিয়ে আল্লাহর রহমতে আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। কোন মানুষই বিপদ আপদ, বালা মুসিবত এর বাইরে নয়। তাই নবীজি ছোট, বড় কিংবা কঠিন কোন ধরনের বিপদে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর নবী ও রাসূলগণও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিপদে পতিত হয়েছেন। এভাবেই আল্লাহতালা তাদের পরীক্ষা নিয়েছেন এবং তারা উভয় সফল হয়েছেন। 


তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ছোট বড় অনেক দোয়া শিখিয়েছেন।  তার মধ্যে সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির ছোট বড় দোয়া সমূহ ও শিখিয়েছেন। আজকে আর্টিকেলে থেকে আমরা সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া সমূহ কি সে বিষয়ে জানব


সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া সমূহ কি



সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া সমূহ কি

বিপদ আপদ মানুষের জীবনে নিত্য সঙ্গী। হঠাৎ করে কার উপরে কখন কোন মুসিবত বিপদ এসে পড়ে আগে থেকে তা অনুমান করা যায় না। কোন বিপদে কিংবা সংকটে পড়লে মানুষ স্বাভাবিকই হতবিহ্বল হয়ে পড়ে এবং দিশা হারিয়ে সংকটকালে তাদের করণীয় কি তা ভুলে যায়। তাই মহান আল্লাহ সব ধরনের বিপদ ও মুসিবতে প্রত্যেক মুমিনকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়েছেন। 


সূরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। সব ধরনের বিপদ ও মুসিবতে মুমিনদের ধৈর্যধারণের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইনশিরাহ -এর ৫ ও ৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সুতরাং কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে।  নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। 



আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের বিভিন্ন বিপদ দিয়ে পরীক্ষা নেন। যুগে যুগে প্রেরিত আল্লাহর পয়গম্বর নবী ও রাসূলগণদের ও আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিপদ দিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। এবং আল্লাহর পয়গম্বর নবী ও রাসূলগণ প্রত্যেকটি পরীক্ষায় ধৈর্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। 


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট বড়, ছোট থেকে ছোট অনেক দোয়া শিখিয়েছেন। তার মধ্যে সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া সমূহ কি তাও শিখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাইতেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ধরনের বিপদ থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। 


সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া


اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ


উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রহমাতাকা আরজু ফালা- তাকিলনী ইলা- নাফসী ত্বরফাতা 'আঈন, ওয়া আস্বলিহ লী শা'নী কুল্লাহূ, লা- ইলা-হা ইল্লা- আংতা। 

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার করুণা প্রত্যাশা করি। সুতরাং, এক পলকের জন্যও আপনি আমার দায়িত্ব আমার হাতে ছেড়ে দেবেন না; আমার সার্বিক বিষয় বরং আপনি সংশোধন করে দিন। আপনি ছাড়া যে আর কোন ইলাহ নেই। 

[ শুনানো আবি দাউদ : ৫০৯০; মুসনাদু আহমাদ : ২০৪৩০]



কঠিন বিপদে পড়ার দোয়া

মুমিন বান্দা বিপদে পড়ার আগে থেকে সতর্ক থাকেন। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা ও কামনা করেন। সব ধরনের বিপদ ও সংকটকালীন সময়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং তার আশ্রয় চান। হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি মানুষের ওপর কোন কঠিন বিপদ এলে সে যেন-


উচ্চারণ : ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি র-জি'ঊন। আল্লা-হুম্মা আ-জুরনী ফী মুস্বীবাতী ওয়া আখলিফ লী খইরম মিনহা-।

অর্থ : আমরা সবাই আল্লাহর জন্য। তারই কাছে ফিরে যেতে হবে আমাদের। হে আল্লাহ! এ ঘোর বিপদে আমাকে (ধৈর্যের) প্রতিদান দিন; সেই সাথে দিন এর উত্তম বিকল্প। 


এই দোয়াটি পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার বিপদ থেকে মুক্তি দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন। 


আল্লাহর পরীক্ষিত বিপদ থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই আমাদের সুখের দিনগুলোতে বেশি বেশি করে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। কেননা হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন যদি কেউ চায় যে বিপদের সময় তার দোয়া কবুল হোক, তাহলে সে যেন তার সুখের দিনগুলিতে বেশি বেশি দোয়া করে। [ তিরমিজি : ২১৩৯]



আল্লাহর কাছে পবিত্রতার সহিত তাড়াহুড়ো না করে ধীর স্থির ভাবে ঈমানের সাথে দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই সে দোয়া কবুল করেন। আমরা অনেকেই অল্পতেই বলি আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করলেন না। এ বিষয়ে বুখারীর  ৬৩৪০ নং হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি না সে তাড়াহুড়ো করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। 



বিপদের দোয়া ইউনুস

হযরত ইউনুস (আ.) আল্লাহর নির্দেশে দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে তার কওমের উপর নিরাশ হয়ে যখন দেশ ত্যাগ করলেন তখন তিনি নদীতে পড়ে মাছের পেটে চলে যান। আল্লাহর নির্দেশ না আসা সত্ত্বেও তিনি স্বদেশ ত্যাগ করায় আল্লাহ তায়ালা তাকে এ বিপদে ফেলে পরীক্ষা নেন। হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে ৪০ দিন থাকা অবস্থায় -


لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ 

উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লা- আংতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুংতু মিনায্ব য্ব-লিমীন। 

অর্থ : আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আপনি মহান ও পবিত্র।নিশ্চয়ই আমি ছিলাম জালিমদের দলভুক্ত।[ তিরমিজি : ৩৫০৫]


দোয়াটি পাঠ করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউনুস (আ.) -কে মাছের পেট থেকে সম্পূর্ণ অক্ষত ভাবে মুক্ত করেন। কঠিন বিপদের সময় হযরত ইউনুস (আ.) -এ দোয়া পাঠ করে মুক্তি পাওয়ায় দোয়া টির নাম হয় হযরত ইউনুস (আ.) এর নামে অর্থাৎ  দোয়া ইউনুস। 


হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, মাছের পেটে হযরত ইউনুস (আ.) এ দোয়াটি পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিল এবং মুক্তি পেয়েছিল। যদি কোন মুসলিম বিপদে পড়ে এ দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ কবুল করবেন। 



কারো বিপদ শুনলে কি বলতে হয়?

মুমিন ব্যক্তি যেমন সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া অর্থাৎ আশ্রয় প্রার্থনা করেন তেমনি কারো বিপদ শুনলেও সেই বিপদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কারো বিপদ শুনলে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতে হয়। 


উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী 'আ-ফা-নী মিম্মাবতালা-কা বিহী, ওয়া ফাদ্বদ্বলানী 'আলা- কাছীরিম মিম্মান খলাক্বা তাফদ্বীলা-। 


অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আপনার উপর আপতিত বিপদ থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন; সেই সাথে আমাকে মর্যাদা দান করেছেন তার সৃষ্টির অনেকের উপর। [ তিরমিজি : ৩৪৩২ ; সুনানু ইবনে মাজাহ : ৩৮৯২]



মুমিন বিপদের সময় কি করে?

আল্লাহ তাআলা উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি প্রতিটি মানুষের তকদির নির্ধারণ করে রেখেছেন। তবে মুমিন বান্দা চাইলে একমাত্র দোয়ার মাধ্যমে তার তাকদির পরিবর্তন করতে পারে। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৫২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সুতরাং তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়োনা। 


মুমিন বান্দা বিপদে পড়ার আগে থেকে সতর্ক থাকেন। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা ও কামনা করেন। সব ধরনের বিপদ ও সংকটকালীন সময়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং তার আশ্রয় চান।

Next Post Previous Post