হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ

আল্লাহর নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দ্বীনের দাওয়াত যখন পূর্ণতা লাভ করল সমস্ত আরব মুসলমানদের আয়ত্তে চলে আসলো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আবেগ ও অনুভূতি, প্রবণতা ও প্রতিক্রিয়া এবং কথাবার্তা ও আচার-আচরণ হতে এমন কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকল যে, যাতে বুঝা গেল হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর অস্থায়ী জীবন থেকে বিদায় নিতে এবং অস্থায়ী এ দুনিয়ায বাসীদের খুব শীঘ্রই বিদায় জানাতে যাচ্ছেন।


হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বিদায় হজের ভাষণ থেকেও তার প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি বলেন, 'আমি জানিনা এ বছরের পর এই স্থানে তোমাদের সাথে মিলিত হতে পারব কিনা।' আজকে আর্টিকেলে  হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ এবং মৃত্যুর পূর্বে তার অসুস্থতা, তার জন্ম এবং কতদিন বেঁচে ছিলেন এ বিষয়ে আলোচনা করব। 



হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ



 হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জুন, আরবি সন  ১১ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সূর্য উত্তপ্ত হওয়ার সময় মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর চার দিন। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হলে উম্মুল মুমেনিন আয়েশা (রাঃ) রাসূল সাঃ কে নিজ দেহের উপর ভর দিয়ে রাখলেন।


আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে, আমার বিছানায়, আমার গ্রীবা ও বক্ষের মাঝে মৃত্যুবরণ করেন।  


হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যুর পূর্বে কি হয়েছিল এবং তার অসুস্থতা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো। 



হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর অসুস্থতা 

হযরত মুহাম্মদ সাঃ বিদায় হজ থেকে ফেরার পর ১১ হিজরীর ২৯ সফর সোমবার কোন একটি উদ্দেশ্যে জান্নাতুল বাকিতে গমন করেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই তার মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা এতটা বেড়ে যায় যে মাথায় বাঁধা পাত্রীর উপরেও তাপ অনুভূত হচ্ছিল। এই অসুস্থতায় ছিল তার মৃত্যু কালীন রোগভোগের সূচনা। এ অবস্থাতেই হযরত মুহাম্মদ সাঃ ১১ দিন নামাজের ইমামতি করেন। বলা হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অসুস্থতা খাইবারের এক ইহুদী নারীর তৈরিকৃত বিষ মিশানো খাবার গ্রহণের কারণে ছিল। 


হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু বিষয়ে এক হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে ইন্তেকাল করেন সে সময় তিনি বলতেন, হে আয়েশা! আমি খাইবারে (বিষযুক্ত) যে খাবার খেয়েছিলাম, আমি সবসময় তার যন্ত্রণা অনুভব করছি। আর এখন সেই সময় এসে গেছে, যখন সে বিষক্রিয়াতে প্রাণ বায়ু বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। [ সহিহ  বুখারি : ৪০৯৪]


হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যুর শেষ সপ্তাহে অসুস্থতার তীব্র হওয়ার পর সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে মায়মুনার ঘর থেকে আয়েশা (রাঃ) -এর ঘরে অবস্থান করতে থাকেন। তার জীবনের শেষ সপ্তাহটি সেখানেই অতিবাহিত করেন।



হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যুর ৫ দিন আগে অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। ফলে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তিনি বলেন, আমার শরীরে বিভিন্ন কূপের সাত মশক পানি ঢালো, যাতে আমি লোকজনদের নিকট গিয়ে উপদেশ দিতে পারি। ফলে হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে একটি বড় পাত্রের মধ্যে বসিয়ে তার উপর, এত বেশি পরিমাণে পানি ঢালা হলো যে, তিনি নিজেই খ্যান্ত হওয়া বলতে থাকলেন। তখন তার রোগ যন্ত্রণা কিছুটা কম হয় এবং তিনি মসজিদে যান। তখনও তার মাথায় পাগড়ি বাধা ছিল। 


তিনি মসজিদের মেম্বারের ওপর বসে পড়লেন এবং বললেন, ইহুদি ও নাসারাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক এ জন্য , তারা তাদের নবীদের কবর সমূহ কে মসজিদ তথা সিজদার স্থান বানিয়ে নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তোমরা আমার কবরকে মূর্তি বানিও না এ জন্য, যে তার পূজা করা হবে।[মুয়াত্তা ইমাম মালিক, পৃষ্ঠা : ৬৫]


বুখারীর বর্ণনা এসেছে, ইহুদি ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি এ কারণে যে, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। 

 

মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর অবস্থা- জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, আমি নবী সাঃ কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ আল্লাহর প্রতি সুধারণা না নিয়ে যেন মৃত্যুবরণ না করে। 


হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যুর দিনও তিনি সাহাবায়ে কিরামকেও উপদেশ প্রদান করে বলেন, নামাজ, নামাজ এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসী! অর্থাৎ নামাজ ও দাস-দাসীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। এ শব্দগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বারবার পুনরাবৃত্তি করেন। [বুখারী ২য় খণ্ড ,পৃষ্ঠা : ৬৩৭]



হযরত মুহাম্মদ সাঃ কত বছর বেঁচে ছিলেন? 

হযরত মুহাম্মদ সাঃ ৬৩ বছর চার দিন বেঁচে ছিলেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জুন, আরবি সন  ১১ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সূর্য উত্তপ্ত হওয়ার সময় মদিনায় ইন্তেকাল করেন। 



হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম কত সালে?

ইসলামী ইতিহাসের পন্ডিতদের উৎসগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিল ঘটনার বছর, এই ঘটনার ৫২ দিন পর, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০শে এপ্রিল, আরবি ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার রাতে জন্মগ্রহণ করেন।



নবীজির মৃত্যুর সময় কে গোসল করিয়েছিল?

মঙ্গলবার দিন হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে কাপড়সহ গোসল দেওয়া হয়। গোসল দেওয়ার কাজে অংশগ্রহণ করেন আব্বাস, আলী (রাঃ), আব্বাসের দুই পুত্র ফজল ও কাশেম, নবীজির আজাদকৃত গোলাম শাকরান, উসামা বিন জায়েদ এবং আওস বিন খাওলী (রাঃ)।আব্বাস,ফজল ও কাশেম নবীজির পাশ পরিবর্তন করে দিচ্ছিলেন।উসামা ও শাকরান পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন।আলী (রাঃ) ধৌত করছিলেন এবং আওস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ মোবারককে নিজের বক্ষের ওপর ভর করে নিয়ে রেখেছিলেন। 

Next Post Previous Post