হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী রচনা
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা রাঃ ছিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুবক বয়সের প্রথম স্ত্রী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তিনিই হলেন সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি ও নারী।বাল্যকাল থেকেই তিনি তাহেরা বা পবিত্র উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন এবং এই নামেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেন ও পরিচিত হয়ে ওঠেন। কারণ জাহেলিয়া যুগের কোন প্রকার অন্যায় ও পাপাচার তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি একমাত্র নারী যাকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। আজকে আর্টিকেলে হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী রচনা বিষয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী রচনা
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা রাঃ চারজন মর্যাদাবান জান্নাতি নারীদের মধ্যে একজন। তিনিই প্রথম নারী যে দুনিয়ায় থাকাকালীন আল্লাহর তরফ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা রাঃ। রাসুল সাঃ এর জীবদ্দশায় তার মৃত্যু হয় এবং খাদিজা রাদিয়াল্লাহ যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন নবীজি অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি।
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা রাঃ তৎকালীন আরব সমাজে বিকুল পরিবেশের জন্য লেখাপড়ার কোন সুযোগ না পেলেও শৈশব থেকেই তিনি বুদ্ধিমতী ও নেকবখত ছিলেন। হযরত খাদিজা রাঃ ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত এক মহীয়সী নারী। তিনি রাসূল সাঃ এর ঘর সবসময় ভালোবাসা, প্রশান্তি ও খেদমতের মধ্য দিয়ে ভরিয়ে রাখতেন। তাই তিনি নবীজির সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী ছিলেন।
হযরত খাদিজা রাঃ কে রাসূল সাঃ এতটাই ভালোবাসতেন যে তার ইন্তেকালের বহু বছর পরও তার কথা বারবার স্মরণ করতেন এবং তার জন্য দোয়া করতেন।খাদিজা (রাঃ) -এর প্রতি রাসূল (সাঃ) -এর অগাধ ভালোবাসায় অন্য স্ত্রীরা প্রায় অভিযোগ করলে তিনি তাদেরকে খাদিজা (রাঃ) -এর বিশেষত্ব ও সকলের উপর তার শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে থামিয়ে দিতেন।
হযরত খাদিজা রাঃ এর জন্ম ও বংশ
হযরত খাদিজা রাঃ হস্তী বর্ষের ১৫ বছর পূর্বে আনুমানিক ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।হযরত খাদিজা রাঃ এর কুনিয়াত (উপনাম ) উম্মে হিন্দ লকব ছিল তাহেরা। তার পিতা খুওয়ালিদ বিন আসাদ বিন আব্দুল উয্বা বিন কুছাই ছিলেন একজন বণিক ও নেতা।
তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী এবং তার বিশ্বস্ততা, গাম্ভীর্য ও দূরদর্শীতার কারণে সমগ্র কুরাইশ গোত্রে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। আনুমানিক ৫৮৫ সালে সিজার যুদ্ধে তিনি ইন্তেকাল করেন। অন্য সূত্রে জানা যায়, খাদিজা (রাঃ) ও রাসূল (সাঃ) -এর বিয়ের সময়ও তিনি বেঁচে ছিলেন।খাদিজা (রাঃ) -এর মাতা ফাতিমা বিনতে জায়দাহ ছিলেন কুরাইশের আমির ইবনে লুয়াই গোত্রের সন্তান। তিনি আনুমানিক ৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
খাদিজা রাঃ এর বিয়ে
খাদিজা রাঃ এর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিয়ের পূর্বে দুইবার তার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। তারা উভয়ই ইন্তেকাল করেন।খাদিজা রাঃ সর্বমোট তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
খাদিজা রাঃ এর প্রথম স্বামীর নাম কি
খাদিজা রাঃ এর প্রথম স্বামীর নাম আবু হালাহ হিন্দ বিন নাবাশ তামীমী। খাদিজা রাঃ এবং আবু হালাহ দম্পতি দুটি পুত্র সন্তান লাভ করেন। প্রথম পুত্র সন্তান হালাহ জাহেলী যুগেই মৃত্যুবরণ করেন। দ্বিতীয় পুত্র সন্তান হিন্দ ইসলাম পরবর্তী যুগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন বলে কোন কোন রেওয়াতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও হিন্দ বদর যুদ্ধে মতান্তরে উহুদ যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। হযরত আলী রাঃ এর শাসন আমলে উটের যুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করেন। অতঃপর সেই যুদ্ধে ইন্তেকাল করেন।
খাদিজা রাঃ এর দ্বিতীয় স্বামী
খাদিজা রাঃ এর প্রথম স্বামীর ইন্তেকালের পর দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল আতিক বিন আবিদ আল-মাখযুমির সাথে। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে খাদিজা রাঃ এর দ্বিতীয় স্বামী ইন্তেকাল করেন। তিনি অগাধ ধন সম্পত্তি রেখে যান। এরপরে কিছুদিন খাদিজা রাঃ একাকী থাকেন।
খাদিজা রাঃ এর দ্বিতীয় স্বামী মারা যাওয়ার পর দেশের অনেক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে তার বিয়ের পয়গাম পেয়েও সকল প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এ অবস্থায় তিনি কখনো কাবা গৃহে অতিবাহিত করেন আবার কখনো বা সমকালীন মহিলা গনকদের সাথে ব্যয় করেন। এবং তাদের সাথে তৎকালীন বিবিধ বিষয়ে আলোচনা করে সময় কাটাতেন।
ব্যবসা-বাণিজ্য
হযরত খাদিজা রাঃ এর পিতা খুওয়ালিদের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় বার্ধক্য জনিত কারণে তার ব্যবসায়ীক দায়িত্ব মেয়েকে অর্পণ করেন। এবং চাচা আমর বিন আসাদের উপর তার অভিভাবকত্বের দায়িত্ব দেন। এর কিছুদিন পরেই তিনি ইন্তেকাল করেন।হযরত খাদিজা রাঃ এর পিতা ও দ্বিতীয় স্বামীর অর্পিত ব্যবসায়িক দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পালন করছিলেন।
হযরত খাদিজা রাঃ ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। ইবনে সাদ তার ব্যবসা সম্পর্কে বলেছেন, কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা যখন গ্রীষ্মকালীন সিরিয়া যাত্রা বা ইয়েমেনের শীতকালীন যাত্রা শুরু করার জন্য পণ্য সামগ্রী জড় করতো, তখন খাদিজার একার পণ্য কাফেলা কুরাইশদের অন্য সকলের বাণিজ্য কাফেলার সমান হতো।
হযরত খাদিজা রাঃ এর ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তৃত ছিল সিরিয়া থেকে ইয়েমেনে পর্যন্ত। তার এই বিশাল ব্যবসা পরিচালনার জন্য আরব, ইহুদি ও খ্রিস্টান সহ বেশ কিছু কর্মচারীও গোলাম ছিল। এমন সময় একজন যোগ্য মানুষ খুঁজছিলেন, যার হাতে ব্যবসার সকল দায়-দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন।
ইবনে ইসহাক হতে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন খাদিজা রাঃ রাসূল (সাঃ) -এর সত্যবাদিতা, উত্তম চরিত্র, সদাচার এবং আমানতদারীতা সম্পর্কে অবগত হলেন, তখন তিনি রাসূল (সাঃ) -এর নিকট প্রস্তাব পেশ করলেন যে, তিনি তার অর্থ নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে তার দাস মায়সারার সঙ্গে শাম দেশে গমন করতে পারেন। তিনি স্বীকৃতি ও প্রদান করেন যে, অন্যান্য ব্যবসায়ীগণকে যে হারে মুনাফা প্রদান করা হয়, তাকে তার চাইতে অধিক মাত্রায় মুনাফা প্রদান করা হবে। রাসূল (সাঃ) -এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং তার অর্থ সম্পদ নিয়ে দাস মায়সারার সঙ্গে শাম দেশ গমন করলেন।
রাসূল (সাঃ) সিরিয়ার বাজারে পণ্য দ্রব্য বিক্রি করে যা কেনার তা কিনলেন। অতঃপর দাস মায়সারাহকে সঙ্গে নিয়ে মক্কার পথে রওনা হলেন।মায়সারাহ লক্ষ্য করলেন, রাসূল (সাঃ) উটের ওপর সাওয়ার হয়ে চলেছেন আর আকাশে দুটো পাখি তার মাথার উপর দুপুরের প্রচন্ড রৌদ্রে ছায়া দিয়ে চলেছে। ফিরে আসার সময়, ব্যবসায় দ্বিগুনের কাছাকাছি লভ্যাংশ নিয়ে ফিরলেন।মায়সারাহ এসে খাদিজার কাছে তার উচ্চকিত প্রশংসা করলেন এবং পাদ্রির মন্তব্য ও সফরের ঘটনাবলী সবিস্তার বর্ণনা করলেন।
খাদিজা রাঃ ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ নারী। মক্কার সর্বস্তরের মানুষ তার ধন-সম্পদ ভদ্রতা ও বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ ছিল। মায়সারাহ এর মুখে রাসূল (সাঃ) এর উন্নত চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে তার নিকট বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেন।
রাসূল (সাঃ) -এর সাথে বিয়ে
রাসূল (সাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে আসার পর হিসাব-নিকাশ করে আমানত সহ এত বেশি পরিমাণ অর্থ তিনি পেলেন যা ইতিপূর্ব কোন দিনই পাননি। অধিকন্ত দাস মায়সারাহ এর মুখে রাসূল (সাঃ) এর উন্নত চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে নিজের দাসী নাসিফা বিনতে মুনাব্বিহ এর মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) -এর নিকট সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেন।
রাসূল (সাঃ) চাচা আবু তালিবের সাথে বিষয়টি আলোচনা করেন। আবু তালিব এ ব্যাপারে খাদিজা রাঃ এর চাচার সাথে আলোচনার পর বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেন। আল্লাহর অনুগ্রহে এক শুভক্ষণে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় রাসূল (সাঃ) এর বয়স ছিল ২৫ বছর এবং খাদিজা রাঃ এর বয়স ছিল ৪০ বছর। বিয়ের মোহরানা ছিল ২০টি উট। খাদিজা রাঃ এর জীবদ্দশায় রাসূল (সাঃ) অন্য আর কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি।
খাদিজা রাঃ এর সন্তান
রাসূল (সাঃ) এর আটটি সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ইব্রাহিম ব্যতীত বাকি সাতজন সন্তান ছিলেন খাদিজা রাঃ এর গর্ভজাত সন্তান। তাদের বড় সন্তান ছিলেন কাসেম । তিন পুত্র কাসেম (রাঃ), তাহের তৈয়ব (রাঃ), আব্দুল্লাহ (রাঃ) এবং চার কন্যা জয়নব (রাঃ), রুকাইয়া (রাঃ), উম্মে কুলসুম (রাঃ) ও ফাতিমা (রাঃ)। ছেলে সন্তান ভালো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তবে মেয়েদের মধ্যে সকলেই ইসলামের যুগ পেয়েছেন। তারা বিবাহিত হন এবং মুজাহিদের মর্যাদা লাভ করেন।
রাসূল (সাঃ) এর জীবনে হযরত খাদিজা রাঃ এর অবদান
হযরত খাদিজা রাঃ ছিলেন রাসূল (সাঃ) এর জীবনে আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত।২৫ বছর বয়স থেকে ৫২ বছর বয়স পর্যন্ত তার দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘ ২৭ বছর স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) -এর সাথে অতিবাহিত করেন। এ সময়ে খাদিজা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) -কে সাহচার্য , সেবাযত্ন দিয়ে, বিপদাপদে সাহস শক্তি যুগিয়ে ,অভাব অনটনে সম্পদ দিয়ে সাহায্য প্রয়োজনমতো পেয়োনা ও পরামর্শ দিয়ে ইসলামের ইতিহাসে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা অতুলনীয়।
খাদিজা (রাঃ) সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন ,যে সময় লোকেরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, তখন তিনি আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন। যখন অন্যেরা আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন তিনি আমার উপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন। যখন অন্যেরা আমাকে বঞ্চিত করেছিল, তখন তিনি আমাকে তার সম্পদে অংশীদার করেছিলেন এবং আল্লাহ আমার অন্য সব স্ত্রীর মাধ্যমে আমাকে কোন সন্তান দেননি ,কিন্তু তারই মাধ্যমে আমাকে সন্তান দ্বারা অনুগৃহীত করেছিলেন।
রাসূল (সাঃ) এর নবুওয়াত লাভের পূর্বে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাকালীন খাদিজা (রাঃ) তার জন্য খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করেন। সাংসারিক চিন্তামুক্ত রেখে তার ধ্যানে সাহায্য করায় স্বয়ং ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) তাঁর স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিবরাঈল (আ.) রাসূল (সাঃ) এর নিকট আগমন করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইনি (খাদিজা) আগমন করেছেন তার নিকট একটি পাত্র আছে যার মধ্যে তরকারি খাদ্যবস্তু ও পানি আছে। যখন তিনি আপনার নিকট এসে পৌঁছাবেন, তখন আপনি তাকে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং জান্নাতে মতির তৈরি একটি মহলের শুভ সংবাদ প্রদান করবেন।যার মধ্যে কোন প্রকার হৈ চৈ থাকবে না ,কোন প্রকার ক্লান্তি শ্রান্তি আসবে না।
হযরত খাদিজা রাঃ এর ইসলাম গ্রহণ
রাসূল (সাঃ) এর নবুওয়াত লাভের পর হযরত খাদিজা (রাঃ) প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্মের সূচনা লগ্নে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনি বেশি সহযোগিতা করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।হযরত খাদিজা রাঃ এর ইসলাম গ্রহণ তার পিতৃকূলে প্রভাব ফেলে।ইসলাম প্রচারের প্রথম পর্যায় তার পিতৃকূলের বনু আসাদ ইবনে আব্দিল উজ্জার ১৫ জন বিখ্যাত ব্যক্তি জীবিত ছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বাকি পাঁচজন কাফের অবস্থায় বদর যুদ্ধে নিহত হয়।
রাসূল (সাঃ) এর জন্য খাদিজা (রাঃ) ছিলেন এক বড়ো আশ্রয়। তাদের দাম্পত্য জীবনের সুদীর্ঘ সময়ে দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদে এবং ইসলাম প্রচারে খাদিজা (রাঃ) তার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন। মুশরিকদের প্রত্যাখ্যান ও অবিশ্বাসের কারণে রাসূল (সাঃ) যে ব্যাথা অনুভব করতেন খাদিজা (রাঃ) এর কাছে এলে তা দূর হয়ে যেত। কারণ তিনি তাকে সান্ত্বনা দিতেন ,সাহস ও উৎসাহ যোগাতেন। রাসুলের সব কথাই তিনি বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করতেন।মুশরিকদের অমার্জিত আচরণ তিনি তার কাছে অত্যন্ত হালকাভাবে তুলে ধরতেন। খাদিজা (রাঃ) তার সকল ধনসম্পদ দিয়ে ইসলাম প্রচারের কাজে সাহায্য করেছেন।
মৃত্যু
হযরত খাদিজা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের দশম বছরে রমজান মাসে ৬৫ বছর (মতান্তরে ৫২ বছর) বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন।তখনো ইসলাম ধর্মে মৃত ব্যক্তির জন্য জানাজা নামাজ পড়ার বিধান চালু হয়নি। তাই তাকে জানাযা ছাড়াই মক্কার কবরস্থান জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার লাশ কবরে রাখেন। সে সময় রাসুল সাঃ এর বয়স ছিল ৫০ বছর।
হাদিসে এসেছে ,হযরত খাদিজা (রাঃ) সম্পর্কে রাসুল সাঃ বলেছেন , পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম নারী মারিয়াম বিনতে ইমরান ও খাদিজা বিনতে খুওয়ালিদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হযরত খাদিজা (রাঃ) প্রথম নামাজ আদায় করেছিলেন।
হযরত খাদিজা রাঃ এর উপাধি কী ছিল
হযরত খাদিজা (রাঃ) -কে জাহেলিয়া যুগের কোন প্রকার অন্যায় বা পাপাচার তাকে স্পর্শ করেনি বিধায় বাল্যকালেই তিনি 'তাহেরা বা পবিত্রা' উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।হযরত খাদিজা রাঃ এর সাথে যুক্ত সম্মানসূচক উপাধীর মধ্যে ছিল 'আমিরাত-কুরাইশ' কুরাইশের রাজকুমারী 'খাদিজা আল-কুবরা' মহান খাদিজা।হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রীদের সম্মানসূচক 'উম্মুল মুমিনীন' অর্থাৎ মুমিনের মাতা ডাকা হতো। উম্মুল মুমিনীন খাদিজা (রাঃ)।