রাসুলের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তায়েফ সরদার কি বলেছিলেন?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম স্ত্রী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং অভিভাবক চাচা আবু তালিব মারা যাওয়ায় তিনি একা হয়ে যান। মক্কার কুরাইশরা তখন রাসুল সাঃ এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন। এমন অবস্থায় মক্কার বাইরে ইসলামের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তিনি ভারাক্রান্ত  হৃদয়ে তায়েফ গমনের সিদ্ধান্ত নেন। আজকে আর্টিকেলে আমরা রাসুলের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তায়েফ সরদার কি বলেছিলেন? সে বিষয়ে আলোচনা করব। 



রাসুলের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তায়েফ সরদার কি বলেছিলেন?



রাসুলের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তায়েফ সরদার কি বলেছিলেন?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের দশম হিজরী শাওয়াল মাসে তায়েফ গমন করেন। মক্কা থেকে তায়েফের দূরত্ব আনুমানিক ষাট মাইল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে পায়ে হেঁটে তায়েফে রওনা দেন। তার সাথে ছিলেন তার মুক্ত করা ক্রীতদাস যায়েদ বিন হারিসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।


তায়েফ গমন পথে রাসূল সাঃ এর সাথে যে গোত্রের দেখা হতো তাদেরকেই তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু কেউই তার এই দাওয়াতি আহবানে সাড়া দেননি। তায়েফ হচ্ছে সাকিফ জাতির আবাসভূমি। তাই তায়েফে পৌঁছে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম সাকিফ গোত্রের সরদার /নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।


সাকিফ গোত্রের তিন নেতা ছিল সহদার ভাই। তারা হলেন- আবদে ইয়ালাইল ,মাসউদ ও হাবিব। তারা ছিলেন আমর বিন ওমাইর সাকাফী এর তিন সন্তান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন। আল্লাহ তাআলার অনুগত হয়ে চলা এবং ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তাদের দাওয়াত দেন।


দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তাদের মধ্যে একজন বলেন যে , সে কাবার পর্দা (আবরণ) ফেড়ে দেখাক যদি তিনি আল্লাহর রাসূল হন। দ্বিতীয়জন বললেন, নবী করার জন্য আল্লাহ কি তোমাকে ছাড়া আর কাউকেও পাননি? এবং তৃতীয় জন বললেন, তোমার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই কথা বলবো না। সত্যিই যদি তুমি নবী হও তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য বিপদজনক। আর যদি তুমি আল্লাহর নামে মিথ্যা প্রচারে লিপ্ত হও তবে তোমার সঙ্গে আমার কথা বলা সমীচীন নয়। 


তাদের এসব ধরনের কথা বার্তায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মনে কষ্ট পেলেন এবং সেখান থেকে যাবার আগে শুধু বললেন, ' তোমরা যা করলে এবং যা বললে তা গোপনেই রাখো।'


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফে ১০ দিন অবস্থান করেন। এবং সেখানকার গোত্রের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন। কিন্তু সকলের জবাব একই ' তুমি আমাদের শহর থেকে বের হয়ে যাও।'


ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত হলেন।প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে যখন তিনি পা বাড়ালেন তখনই তাকে উত্যক্ত, অপমানিত ও কষ্ট দেয়ার জন্য সেখানকার শিশু কিশোর ও যুবকদের তার পিছনে লেলিয়ে দিলেন। 


ইতোমধ্যে পথের দু'পাশে ভিড় জমে গেল। তারা হাততালি ও অশ্রাব্য অশ্লীল কথাবার্তা বলে তাকে গালমন্দ দিতে লাগলো, এবং পাথর ছুড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আঘাত করতে লাগলো। আঘাতের ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ের গোড়ালিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে পা দুটি দিয়ে রক্ত ঝরতে লাগলো।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন তায়েফের হতভাগ্য কিশোর ও যুবকরা পাথর ছুঁড়তে ছিল তখন তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন যায়েদ বিন হারিসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। ফলে তার মাথার কয়েকটি স্থানে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। এভাবে নিষ্ঠুর তায়েফ বাসির নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে রাসুল সাঃ পথ চলতে থাকেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঘাতে আঘাতে জর্জরিত রক্তমাখা শরীরে পথ চলতে গিয়ে খুবই ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়েন।পথিমধ্যে একটি আঙ্গুরের বাগান দেখতে পেয়ে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন। বাগানটির মালিক ছিলেন বারীআহর পুত্র উতবাহ ও শায়বাহর। তিনি বাগানে প্রবেশ করলে দুষ্ট তায়েফ বাসিগণ গৃহে ফিরে যান। 



তায়েফ এর সবচেয়ে বড় গোত্র কোনটি?

তায়েফের সবচেয়ে বড় গোত্র ছিল সাকিফ। তায়েফ গমন পথে রাসূল সাঃ এর সাথে যে গোত্রের দেখা হতো তাদেরকেই তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু কেউই তার এই দাওয়াতি আহবানে সাড়া দেননি। তায়েফ হচ্ছে সাকিফ জাতির আবাসভূমি। তাই তায়েফে পৌঁছে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম সাকিফ গোত্রের সরদার /নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।



তায়েফের অধিবাসীদের দেবীর নাম কি ছিল?

তায়েফ শহরটি প্রাচীরে ঘেরা একটি ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল। কেননা এতে লাত দেবীর মূর্তি ছিল। যিনি তখন 'তায়েফের মহিলা' নামে পরিচিত ছিলেন। তায়েফের অধিবাসীরা লাত দেবীর /'তায়েফের মহিলা' এর উপাসনা করতো।

Next Post Previous Post