আল্লাহর মাস মহরম মাসের কত তারিখে আশুরার রোজা রাখতে হয়?

আল্লাহর মাস মহরম। এটি আরবি হিজরী সনের প্রথম মাস। আল্লাহর গণনার ১২টি মাসের মধ্যে মহরম মাসকে সর্বোত্তম মাস বলা হয়। কেননা এই মাসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। আল্লাহ তায়ালা চারটি মাসকে সম্মানিত হারাম মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন তার মধ্যে মহররম সর্বোত্তম।মহররম মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরার দিন। আমরা আজকের আর্টিকেলটি সাজিয়েছি আল্লাহর মাস মহরম মাসের কত তারিখে আশুরার রোজা রাখতে হয়? এ বিষয়ের উপর। 



আল্লাহর মাস মহরম মাসের কত তারিখে আশুরার রোজা রাখতে হয়?



আল্লাহর মাস মহরম মাসের কত তারিখে আশুরার রোজা রাখতে হয়?

মহররম 

মহররম অর্থ সম্মানিত। আল্লাহর গণনার ১২টি মাসের মধ্যে হিজরী বছরের প্রথম মাস মহররম।এটি 'আশহুরে হুরুম' অর্থাৎ হারামকৃত চার মাসের অন্যতম। হিজরী সনের ১২টি মাসের মধ্যে ৪টি মাস আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত হারাম মাস ঘোষণা করেছে। যে মাসগুলোতে যাবতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাতকে মহান আল্লাহ তা'আলা হারাম ঘোষণা করেছেন। 


হযরত আবু বকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বছর হলো ১২ মাসের সমষ্টি। তার মধ্যে চারটি মাস হলো অতি সম্মানিত। তিনটি হল ধারাবাহিক মাস জিলকদ,জিলহজ ও মহররম। আরেকটি হলো জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজব মাস (অর্থাৎ রমজানের আগের মাসের আগের মাস)। [বুখারী :২৯৫৮] 



পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এ চারটি মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। তার মধ্যে মহরম মাস সর্বোত্তম। মহররম মাসের মহাত্ম্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা তাওবার ৩১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-


নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনার মাস ১২টি; তারমধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না এবং তোমরা মুশফিকদের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। এবং জেনে রেখো আল্লাহ তো মুত্তাকিদের সাথে আছেন।

[ সূরা আত- তাওবাহ,আয়াত : ৩৬]


মুসলিমের বর্ণনায়,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররম মাসকে শাহরুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর মাস বলেছেন।


হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত কালে রাসুল সাঃ এর হিজরতের বছরকে প্রথম বছর ধরে হিজরী সন গণনার সূচনা হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় বিধি-বিধান ও ইবাদত বন্দেগী আরবি হিজরী সনের চাঁদ দেখার সাথে সম্পর্কিত। 



আশুরা শব্দের অর্থ 

আক্ষরিকভাবে আশুরা শব্দের অর্থ দশম দিন। ইসলামী পরিভাষায় হিজরী সনের প্রথম মাস মহররমের ১০তম দিনকে আশুরা বা আশুরার দিন বলা হয়। এ দিনটি রহমতের ও সম্মানিত দিন। কেননা সৃষ্টি শুরু থেকে মহররমের ১০তম দিন অর্থাৎ আশুরার দিন পর্যন্ত অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। 


মহররমের ১০তারিখ অর্থাৎ পবিত্র আশুরার এই দিনে আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র দিনে নূহ (আ.) এর মহাপ্লাবন শেষ হয়। পবিত্র দিনে ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ৪০ দিন পর মুক্তি পান। পবিত্র এই দিনে ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। আইয়ুব (আ.) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন। সুলাইমান (আ.) তার হারানো রাজত্ব ফিরে পান। ইয়াকুব (আ.) তার হারিয়ে যাওয়া পুত্র ইউসুফ (আ.) কে ৪০ বছর পর ফিরে পান।এবং পবিত্র এই দিনে ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এই দিনেই তাকে দুনিয়া থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। 



আশুরার রোজা 

রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা মুসলমানদের জন্য ফরজ ছিল। হিজরির ২য় বছরের সাবান মাসে রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ায় আশুরার রোজা সুন্নত হয়ে যায়। ফরজ রোজার পরে সুন্নাত রোজার মধ্যে আশুরার রোজা সর্বোত্তম।


আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররম মাসের রোজা।[ সহীহ মুসলিম : ১৯৮২]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর মাস মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতে বলেছেন। এখন প্রশ্ন হতে পারে- নফল রোজার গুরুত্বের দিক দিয়ে শাবান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক রোজা রেখেছেন বলে বর্ণিত হয়েছে। 


আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যখন  মহররম মাসের ওহী নাযিল হয়েছে তারপর আর তিনি এই রোজা রাখার সুযোগ পাননি অর্থাৎ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ওহী নাযিল হয়। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তী বছর মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার নিয়ত করেছিলেন। 


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। [সহীহ মুসলিম : ১৯৭৬]


আশুরার রোজার ইতিহাস

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পর মদিনা এসে দেখতে পান, ইহুদিরা মহররমের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিন রোজা রাখছে। তাদের একজনকে তিনি জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, এই দিনে মুসা (আ.) এর উপর ঐশী বাণী তাওরাত কিতাব নাযিল হয়। এবং বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল  থেকে উদ্ধার করে নীলনদে ডুবিয়ে ফেরাউনদের  ধ্বংস করেন। তাই তারা এই দিনে রোজা রাখেন। 


তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা মুসার অধিক আপন, তোমরা ইহুদীদের ব্যতিক্রম করো, আশুরার একদিন আগে বা একদিন পরেও রোজা রাখো। [মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ]


তাই আল্লাহর মাস মহরম মাসের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে আশুরার রোজা রাখতে হয়। তবে মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখা উত্তম। 



আশুরার দিন আল্লাহ কোন নবীকে বাঁচিয়েছিলেন?

আল্লাহর মাস মহররম মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিন আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং বনি ইসরাইলকে বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল  থেকে সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত করে বাঁচিয়েছিলেন। নীলনদে ডুবিয়ে ফেরাউনদের  ধ্বংস করেন।



শুধু ১০ মহররমের রোজা রাখা যাবে কি?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহরম মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলেছেন। আল্লাহর মাস মহরম মাসের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে আশুরার রোজা রাখতে হয়। তবে মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখা উত্তম। এছাড়াও মহররম মাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখ অর্থাৎ আইয়ামে বীজে রোজা কিংবা অন্যান্য দিন রোজা রাখা উত্তম। তবে শুধু ১০ মহররমের রোজা রাখা যাবে না। কারণ ইহুদীরা শুধুমাত্র এই দিনে রোজা পালন করে থাকে। তাই ইহুদিদের অনুসরণ করা যাবে না। 

Next Post Previous Post