কার তলোয়ারের আঘাতে রাসুল সাঃ এর দাঁত মোবারক শহীদ হয়
৬২৫ খ্রিস্টাব্দে হিজরী সনের তৃতীয় বছর ইসলামের দ্বিতীয় যুদ্ধ উহুদ পর্বত সংলগ্ন স্থানে সংঘটিত হয়। মদিনার মুসলমান ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুসলমানের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মক্কার কুরাইশদের নেতৃত্বে ছিলেন আবু সুফিয়ান। এই যুদ্ধে রাসুল সাঃ এর দাঁত মোবারক শহীদ হয়।
আজকে আর্টিকেলে ইসলামের ইতিহাসের সংঘটিত উহুদের যুদ্ধে কার তলোয়ারের আঘাতে রাসুল সাঃ এর দাঁত মোবারক শহীদ হয়? সে বিষয়ে আলোচনা করব।
কার তলোয়ারের আঘাতে রাসুল সাঃ এর দাঁত মোবারক শহীদ হয়?
আল্লাহর নির্দেশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচার শুরু করার পর তার নিজ গোত্র কুরাইশ বংশীদের কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার হন। ফলে এক পর্যায়ে মুসলিমরা মক্কা ত্যাগ করে মদনা হিজরত করেন। এরপর ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে মদিনার মুসলমান ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ।
এ যুদ্ধে মক্কার কুরাইশরা পরাজিত হওয়ায় প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মক্কার কুরাইশদের পক্ষ থেকে ওহুদের যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আবু সুফিয়ান আনসারদেরকে বার্তা পাঠিয়ে জানান যে তারা যদি মুজাহির মুসলিমদেরকে ত্যাগ করে তাহলে তাদের কোন ক্ষতি করা হবে না এবং শহরও আক্রমণ করা হবে না। কিন্তু আনসাররা তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও তারা যুদ্ধের প্রথম দিকে সাফল্য লাভ করছিল এবং মক্কার সৈনিকরা কিছু হাঁটতে বাধ্য হয়। বিজয়ের খুব কাছাকাছি এসে মুসলিম বাহিনীর কিছু অংশের ভুল পদক্ষেপের কারণে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। রাসুল সাঃ মুসলমান তীরন্দাজদের কে নির্দেশ দিয়েছিলেন ফলাফল যাই হোক না কেন তারা যেন তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসে।
কিন্তু তারা রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে অবস্থান ত্যাগ করায় মক্কার বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলিমদের উপর আক্রমণের সুযোগ পায় ফলে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেক মুসলমান নিহত হন।
রাসূল সাঃ এর কাছে মাত্র ১১ জন সৈন্য ছিলেন এবং তারাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিরাপত্তার কাজে ব্যস্ত ছিল। খালিদ বিন ওয়ালিদ তীব্র বেগে মুসলমানদের উপর তলোয়ার চালনা করে মুসলমানদের করে দেয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার চেষ্টা করেন। রাসূল সাঃ এর উপর শত শত বিষাক্ত তীর ছুটে আসতে লাগলো। মুসলিম সেনারা রাসূল সাঃ কে মারাত্মক তীরের হাত থেকে রক্ষা করতে তাকে ঘিরে দাঁড়ালেন।
উৎবা বিন আবু ওয়াক্কাস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারেন। পাথরের আঘাতে নবীজির সম্মুখের রুবাই নামক দাঁত (চতুর্থ দাঁত) মোবারক শহীদ হয় । মাথার আগাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটিতে গড়িয়ে পড়েন। সেই পতন দেখে আব্দুল্লাহ বিন কামিয়া 'মুহাম্মদ নিহত হয়েছে, মুহাম্মদ নিহত হয়েছে' ধ্বনিতে আনন্দ করতে করতে কুরাশদের দলে ফিরে যান।
উহুদের যুদ্ধে শহীদ সাহাবীদের নাম
উহুদের যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ইবনুল কাইয়ুম এর বর্ণনায় ৭০ জনের নাম দিয়েছেন। অন্য আরেক বর্ণনায় ৬৫ জনের নাম পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা উহুদের যুদ্ধের এক বছর আগেই জিব্রাইল আলাই সালাম এর মাধ্যমে ওহী প্রেরণ করছিলেন যে, বদর যুদ্ধের বন্দীদেরকে অর্থের বিনিময় মুক্তি দিলে ৭০ জন মুসলমান কাফিদের হাতে নিহত হবে। মুসলমানরা আল্লাহর এ আদেশ কে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলেন। ফলে উহুদের যুদ্ধে ৭০ জন মুসলমানকে শহীদ হতে হয়েছে।
উহুদের যুদ্ধে শহীদ সাহাবীদের নাম হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা হযরত আমির হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত মুস'আব বিন উমায়র রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ ৬ জন মুজাহির এবং বাকি সকলেই ছিলন আনসার।
উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?
উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের মোট শূন্য সংখ্যা ছিল ১০০০ জন। এদের মধ্যে ১০০ জন বর্ম পরিহিত এবং ৫০ জন অশ্বারোহী ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমান বাহিনীকে তিন ভাগে বিভক্ত করেন। তারা হলো মুজাহির বাহিনী যার সেনাপতি ছিলেন মুস'আব বিন উমায়র, আউস বাহিনী এর সেনাপতি ছিলেন উসাঈদ ইবনে হুজাইর এবং খাজরাজ বাহিনী এর সেনাপতি ছিলেন হুবাব ইবনে মুনযির ।
মুসলমানরা প্রায় এক হাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে যুদ্ধের জন্য বের হলেও শহরের বাইরে গিয়ে যুদ্ধে অস্বীকৃতি জানানো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার তিনশত অনুসারী নিয়ে শাওত নামক স্থানে পৌঁছানোর পরে দল ত্যাগ করেন। ফলে মুসলমানরা ৭০০ সৈন্য নিয়ে উহুদের দিকে যাত্রা করে।