ইসলাম প্রচারে বিঘ্ন ঘটাতে মক্কার মুশরিকরা হাজীদের কাছে নবীজিকে কি বলে বেড়াচ্ছিল
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র রমজান মাসের ২৭ শে রমজান নবুওয়াত প্রাপ্ত হন। নবুওয়াতের পরে আল্লাহ তাআলা নবীজিকে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দিলেন। 'হে আমার রাসূল! আপনার প্রভু আপনাকে যে সত্য দান করেছেন, তা প্রচার করুন।'(সূরা মায়িদা,আয়াত : ৬৭) আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচার করতে লাগলেন। ইসলাম প্রচারের চতুর্থ বছরে আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু হয়।
প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মক্কার মুশরিকরা নবীজির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ইসলাম প্রচারে বিঘ্ন ঘটাতে মক্কার মুশরিকরা হাজীদের কাছে নবীজিকে নিয়ে কি বলে বেড়াচ্ছিল সে বিষয়ে সাজানো হয়েছে।
ইসলাম প্রচারে বিঘ্ন ঘটাতে মক্কার মুশরিকরা হাজীদের কাছে নবীজিকে নিয়ে কি বলে বেড়াচ্ছিল
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের সময় আরব নগর সহ সমগ্র পৃথিবী অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। মূর্তিপূজা মিথ্যা কুসংস্কার বাবা তারা ডুবে গিয়েছিল সমগ্র পৃথিবী। এমন দুর্দিনে আরবের মক্কা নগরে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও শান্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করলেন।
নবুওয়াত লাভ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম থেকে নবুওয়াত লাভ পর্যন্ত ৪০ বছর এবং নবুওয়াত লাভের পর থেকে মদিনায় হিজরত পর্যন্ত ১৩ বছর মোট ৫৩ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন।৬১০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র রমজান মাসের ২৭ তারিখ আল্লাহর পক্ষ হতে জিব্রাইল (আ.) এর মাধ্যমে নবুওয়াত লাভ করেন।
ইসলাম প্রচারের প্রথম তিন বছর
নবীজি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর ইসলাম প্রচারের নির্দেশ পান।আল্লাহ তাআলা নবীজিকে ইসলাম প্রচারের ঘোষণা দিয়েছেন।হে আমার রাসূল! আপনার প্রভু আপনাকে যে সত্য দান করেছেন, তা প্রচার করুন।আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রথম যুগে গোপনে গোপনে তিন বছর ইসলাম প্রচার করেন।
নবীজির ইসলাম প্রচারের প্রথম তিন বছরে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন তার সহধর্মিনী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা, এরপর তরুণদের মধ্যে তার চাচাতো ভাই আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, মুক্ত ক্রীতদাস যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং বয়স্কদের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। এ সময় হযরত উসমান, আব্দুর রহমান সহ আরো কয়েকজন সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেন।
প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার
নবীজির তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচার শেষ হওয়ার পর চতুর্থ বছরের শুরুতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার আদেশ অবতীর্ণ হয়। সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সকল বেড়াজাল ছিন্ন করে রাসূল সাঃ ইসলাম প্রচার চালিয়ে যান। এতে ক্রমেই মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো।
প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে রাসুল সাঃ এর সাহাবী আরকামের বাড়িতে গোপনে ইসলাম প্রচার হতো। চতুর্থ বছরের শেষের দিকে আরবের বীরপুরুষ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। ওমর রাদিয়াল্লাহ রাসূল সাঃ এবং তার সাহাবীদের নিয়ে কাবা শরীফের এসে আল্লাহতালার একত্ববাদের কালিমা উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত হারেস ইবনে আবী মালা শহীদ হন। তিনি ইসলামের প্রথম শহীদ।
মক্কার মুশরিক কুরাইশদের ষড়যন্ত্র
তখন মক্কার কুরাইশ গোত্রের মুশরিক সম্প্রদায় কাবার তত্ত্বাবধায়ক ছিল। কাবাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল তাদের বিরাট প্রভাব প্রতিপত্তি। পৌত্তলিকতার সাথে তাদের সামাজিক, ধর্মীয়,পৌরোহিত্য ও অর্থ উপার্জনের বিষয়টি বিশেষ ভাবে জড়িত ছিল। মক্কার কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর প্রচারিত ইসলামকে মেনে নিতে পারল না।
মক্কার মুশরিকরা/কুরাইশরা ইসলাম প্রচারে বিঘ্ন ঘটাতে প্রথম পর্যায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধর্মদ্রোহী, পাগল জাদুকর ইত্যাদি বলে বিদ্রুপ করতে লাগলো। এতে কোন ফল না পেলে নবীজিকে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। চাচা আবু জাহেল তাকে পাথর দিকে আঘাত করলো। নবীজির চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। সংবাদ শুনে রেগে গেলেন এবং তিনি কাবাগৃহে গিয়ে আবু জাহেলকে শাস্তি দিয়ে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেন।
কোন শাস্তি যখন রাসুল সাঃকে ইসলাম প্রচারের পথ থেকে টলাতে পারেনি তখন তারা কৌশলী হয়ে নবীজিকে তার চাচা আবু তালিবকে দিয়ে তাকে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করল। এবং বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখালো যে নবীজিকে আরবের রাজা বানিয়ে দেবে, এবং সে যদি চায় তাহলে তাকে আরবের সেরা সুন্দরী রমণীর সাথে বিয়ে করিয়ে দেবে। তিনি যা চাইবেন তাই দেয়া হবে। এজন্য তাকে শুধু ইসলাম প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
জবাবের রাসূল সাঃ বলেছিলেন, 'তারা যদি এক হাতে আকাশের চাঁদ অন্য হাতে সূর্য এনেও দেয়, তবুও তিনি ইসলাম প্রচার থেকে বিরত হবেন না।'
হযরত মুহাম্মদ সাঃ নবুয়ত লাভ করেন কত সালে?
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র রমজান মাসের ২৭ তারিখ আল্লাহর পক্ষ হতে জিব্রাইল (আ.) এর মাধ্যমে নবুওয়াত লাভ করেন। জিব্রাইল (আ.) আদেশ করেন, ' ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাজি খলাক।' অর্থ ' পড়ুন, আপনার প্রভুর নামে।' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বাণী উচ্চারণ করলেন।
হযরত মোহাম্মদ সাঃ কত বছর গোপনে ইসলাম প্রচার করেন?
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর ইসলাম প্রচারের নির্দেশ পান।আল্লাহ তাআলা নবীজিকে ইসলাম প্রচারের ঘোষণা দিয়েছেন।'হে আমার রাসূল! আপনার প্রভু আপনাকে যে সত্য দান করেছেন, তা প্রচার করুন।'(সূরা মায়িদা,আয়াত : ৬৭) আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রথম যুগে গোপনে গোপনে তিন বছর ইসলাম প্রচার করেন।