হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ নিয়ে একাধিক মত পাওয়া যায়। তবে ইসলামী পন্ডিতদের উৎসগুলোতে এটি স্পষ্ট যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের ইতিহাসে 'ফিলবর্ষ' নামে পরিচিত অর্থাৎ ফিল ফিল ঘটনায় এর বছর মক্কার বিখ্যাত বনূ হাশেম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। আসুন আজকে আর্টিকেল থেকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ জেনে নিন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ নিয়ে ইসলামী ইতিহাসের পন্ডিতদের মতভেদ রয়েছে। তবে সিরাত ও ইসলামী ইতিহাসের পণ্ডিতরা এই বিষয়ে একমতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবী রবিউল আউয়াল মাসের কোন এক সোমবার ভোরবেলা, সুবহে সাদিকের কিছুক্ষণ আগে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু হিজরী সাল অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ নিয়ে তাদের মতভেদ রয়েছে।
ইসলামী ইতিহাসের পন্ডিতদের উৎসগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিল ঘটনার বছর, এই ঘটনার ৫২ দিন পর, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০শে এপ্রিল, আরবি ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার রাতে জন্মগ্রহণ করেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ নিয়ে কেউ কেউ বলেন, হিজরী সালের ৮ই রবিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। অধিকাংশ হাদিস বিশারদ একে বিশুদ্ধ বলেছেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ নিয়ে সিরাত বিষয়ক গ্রন্থ 'আর রাহীকুল মাখতুম' এ এসেছে, হযরত মুহাম্মদ সাঃ মক্কার বিখ্যাত বনূ হাসেম বংশে ৯ই রবিউল আউয়াল ফিলের বছর সোমবার দিন-রাতের মহাসন্ধিক্ষণে সুবহে সাদিকের সময় জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজি সাল অনুযায়ী ৫৭১ সালের ২০ বা ২২শে এপ্রিল।
যে বছর বাদশা নওশেরওয়ার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার ৪০ বছর পূর্ণ হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সুলাইমান সালমান রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এবং মাহমুদ পাশা ফাল্কীর অনুসন্ধানলব্ধ সঠিক অভিমত হচ্ছে এটাই।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন প্রণেতা মুফতি মোহাম্মদ শফী রহিমাহুল্লাহ আরো কিছু অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সবাই একমত যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার। তারিখ নির্ধারণের চারটি বর্ণনা আছে- ২,৮,১০ ও ১২ই রবিউল আউয়াল। তবে প্রসিদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল। 'তারিখে ইবনে আছির' গ্রন্থে ১২ তারিখই গ্রহণ করে হয়েছে।
মিশরের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাহমুদ পাশা জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে গবেষণা করে দেখিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ সাঃ রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখেই জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে ১২ই রবিউল আউয়াল অধিক প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। তাই ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম উম্মাহ উৎসব হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
উল্লেখিত উক্ত মতামত সবগুলোই সুন্নি ঐতিহাসিকদের। তবে শিয়া মুসলিমরা ১৭ই রবিউল আউয়াল হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ হিসেবে জন্মদিন উদযাপন করে থাকেন।
তবে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও জন্ম দিন নিয়ে সকলেই একমত।হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সিরাত রচয়িতারা একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন।
মহানবী সাঃ নিজের জন্মের শুকরিয়া স্বরুপ কি আমল করতেন?
নবীর জন্মদিন পালন করা যাবে কি?
জন্মদিনের আরবি শব্দ মিলাদ হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিন কে আরবি ভাষায় মিলাদুন্নবী বলা হয়। চতুর্থ শতকে মিশরে মিলাদুন্নবী উদযাপনের সূচনা হয়। তবে সুন্নিদের মাঝে এই উৎসবের সূচনা হয় আরো পরে। ধর্মপ্রাণ মুসলমান নবীর জন্মদিন বিভিন্ন আকার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালন করে থাকে। যেমন দুরুদ শরীফ পড়া, নাতে রাসুল এবং শেষে তবারক বিতরণ এর মাধ্যমে।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম দিন পালন নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অনেক জগৎবিখ্যাত মনীষী মনে করেন যেহেতু প্রথম তিন শতকে এভাবে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয়নি তাই এটা বিদআত। কেননা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ তার জন্মদিন উপলক্ষে এ ধরনের কোন উৎসব পালন করেননি। আমরা তো নবীর সাহাবীদের চেয়ে বড় নবী প্রেমিক হয়ে যায়নি।
কিছু সংখ্যক আলেম যারা মিলাদুন্নবীর পক্ষে মত দিয়েছেন তারা বলেন, যে বিষয়টির মূল কুরআন সুন্নায় বিদ্যমান তা পরবর্তী কোনো সময় শুরু হওয়ার কারণে বিদআত হয়ে যায় না। চার মাযহাব তো সাহাবীদের যুগের বহু পরে সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এটিকে তো বিদায় বলা যায় না।
রাসুল সাঃ এর জন্ম কত সালে?
ইসলামী ইতিহাসের পন্ডিতদের উৎসগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিল ঘটনার বছর, এই ঘটনার ৫২ দিন পর, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০শে এপ্রিল, আরবি ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার রাতে জন্মগ্রহণ করেন।