হিজরী সনের আরবি মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। হিজরী সন ১৪৪৫ এর সমাপ্তি হয়ে নতুন হিজরী সন ১৪৪৬ এর আল্লাহর মাস পবিত্র মহরমের চাঁদ দেখা গিয়েছে।আজ পবিত্র মহরম মাসের ৬ তারিখ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররম মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মহররম মাসে ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। আশুরার রোজা দুইটি। মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ আশুরার রোজা।আর পবিত্র মহররম মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজের রোজা। আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি।
আজকে আমাদের আর্টিকেলটি সাজিয়েছি এ মাসের আইয়ামে বীজের রোজার ক্যালেন্ডার জুলাই ২০২৪ সম্পর্কে। অর্থাৎ আরবি মহররম মাসের আইয়ামে বীজের রোজা ইংরেজি জুলাই মাসের কত তারিখে সে বিষয়ে আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ!
এ মাসের আইয়ামে বীজের রোজার ক্যালেন্ডার জুলাই ২০২৪
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের পর সম্মানিত মাস মহররমে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলেছেন। কেননা মহররম মাস হল আল্লাহ তাআলার সম্মানিত হারাম চারটি মাসের একটি। যে মাসগুলোতে সকল প্রকার যুদ্ধবিগ্রহ রক্তপাতকে আল্লাহ তা'আলা হারাম করেছেন তারই একটি পবিত্র মহরম। এ মাসে অনেক ফজিলত ও তাৎপর্য রয়েছে। তাই রাসুল সাঃ এই মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতে বলেছেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররম মাসের রোজা।[ সহীহ মুসলিম : ১৯৮২]
আরবি মহররম মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ অর্থাৎ জুলাই মাসের
২০, ২১ ও ২২ তারিখ ২০২৪ এ মাসের আইয়ামে বীজের রোজা।
আইয়ামুল বীজের ফজিলত কি?
হিজরী সনের প্রতি মাসের ৩ দিন অর্থাৎ আইয়ামে বীযের রোজা রাখলে তাতে সারা মাস রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। নিয়মিত ভাবে আইয়ামে বীযের তিন দিন রোজা রাখা হল সারা জীবন রোজা রাখার সমান। কেননা যেকোন নেক আমল আল্লাহ তায়ালা ১০ গুন পর্যন্ত সাওয়াব বাড়িয়ে দেন। আমরা প্রতি মাসে যদি নিয়মিত ভাবে তিন দিন রোজা রাখি তাহলে ৩০ দিন রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে অর্থাৎ আমরা প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রেখে পুরো মাস রোজা রাখার সওয়াব পাব আর যতদিন বেঁচে আছি এভাবে রোজা রাখতে থাকলে সারা জীবন রোজা রাখার সওয়াব পাব।
আশুরার রোজা কেন রাখি?
মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। পবিত্র এই দিনে বনী ইসরাইলকে সমুদ্র ভাগ করে ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করে নীল নদে ডুবিয়ে ধ্বংস করেন এবং ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এই দিনেই তাকে দুনিয়া থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। তাই ইহুদিরা এই দিনের রোজা পালন করে। যেহেতু বনি ইসরাইল আমাদের পূর্বপুরুষ তাই রাসূল সাল্লাহু সাল্লামও এই দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। তবে ইহুদিদের সাদৃশ্য না রেখে আশুরার একদিন আগে অথবা একদিন পরে মিল রেখে মোট দুদিন রোজা রাখার নির্দেশ দেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। [সহীহ মুসলিম : ১৯৭৬]
আশুরার রোজা জুলাই মাসের কত তারিখ
জুলাই মাসের ১৭ তারিখ পবিত্র আশুরা। শুধুমাত্র আশুরার দিন রোজা রাখা হারাম। কেননা ইহুদীরা আশুরার একদিন রোজা পালন করে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের সাথে সাদৃশ্য না রেখে আশুরার একদিন আগে বা পরে করে দুদিন রোজা রাখতে বলেছেন।
সে অনুযায়ী আশুরার রোজা জুলাই মাসের ১৬ ও ১৭ তারিখ অর্থাৎ মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা জুলাই মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখ অর্থাৎ মহরম মাসের ১০ ও ১১ তারিখ পবিত্র আশুরার রোজা পালন করতে হবে। তবে মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ অর্থাৎ জুলাই মাসের ১৬ ও ১৭ তারিখ রোজা রাখা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র মহররম মাসে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করেছেন এবং রাসুল সাঃ এই মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলেছেন। তাই আমাদের উচিত এ মাস কে সম্মানিত করে সকল খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা এবং বেশি বেশি আল্লাহর নফল ইবাদত করা।
তাই এ মাসে আইয়ামে বীজের রোজা এবং পবিত্র আশুরার রোজা আমাদের সকলেরই পালন করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে আইয়ামে বীজের রোজা, আশুরার রোজা এবং বেশি বেশি নফল ইবাদাত করার তৌফিক দান করুন (আমীন)।