ইসলামের প্রথম যুগে কোন সাহাবির ঘরে মুসলমানরা গোপনে গোপনে দ্বীনের কাজ করতেন

ইসলামের প্রথম যুগে রাসুল সাঃ নবুওয়াত প্রাপ্তির পর প্রথমেই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আছে দ্বীনের কাজ প্রচারের। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের প্রথম যুগে গোপনে দ্বীনের কাজ প্রচার করতেন। মক্কায় ইসলাম প্রচারের কিছুদিন পর মক্কার কুরাইশরা তা জানতে পেরে যায়। 

ফলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবী আরকাম ইবনে আবিল আরকামের বাড়িতে মুসলমানরা গোপনে গোপনে দ্বীনের কাজ করতেন। এটি ইসলামের প্রথম মাদ্রাসা বা প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 


আজকে আমাদের আর্টিকেলটি সাজিয়েছি- ইসলামের প্রথম যুগে কোন সাহাবির ঘরে মুসলমানরা গোপনে গোপনে দ্বীনের কাজ করতেন এই বিষয়ে।



ইসলামের প্রথম যুগে কোন সাহাবির ঘরে মুসলমানরা গোপনে গোপনে দ্বীনের কাজ করতেন



ইসলামের প্রথম যুগে কোন সাহাবির ঘরে মুসলমানরা গোপনে গোপনে দ্বীনের কাজ করতেন

ইসলাম প্রচারের নির্দেশ : একবার প্রায় ছয় মাস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হলো না। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তার মনে হতে লাগলো, তার হয়তোবা কোন ভুল হয়েছে যার জন্য আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে পরিত্যাগ করেছেন। 


এমন উদ্বিগ্নতার মাঝে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্থির হয়ে উঠলেন তখন জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী নিয়ে আবির্ভূত হলেন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই আশ্বাস বাণী শোনালেন।


আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমার প্রভু তোমাকে পরিত্যাগ করেননি। কিংবা অসন্তুষ্ট হননি। নিশ্চয়ই তোমার ভবিষ্যৎ তোমার অতীত অপেক্ষা উজ্জ্বল। এবং শীঘ্রই তোমার প্রভু তোমার উপর এমন কিছু দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে। [ সূরা আদ-দুহা]


সূরা আদ-দুহার আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাকুল হৃদয় শান্ত হয়। এবং তিনি বুঝতে পারলেন খুব শীঘ্রই তার উপরে কোন বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাই ভিতরে ভিতরে যখন তার মন প্রস্তুত হয়ে গেল তখন পুনরায় এই বাণী অবতীর্ণ হয়। 


আল্লাহ তাআলা বলেন, 'হে আমার রাসূল, তোমার প্রভু তোমাকে যে সত্য দান করেছেন, তা প্রচার কর।'


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের কাজ প্রচারের নির্দেশ পাওয়ার পর দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। ইসলামের প্রথম যুগে গোপনে গোপনে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ করতেন।



গোপনে দ্বীনের কাজ প্রচার : নামাজের সময় হলে রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম পাহাড়ি এলাকায় চলে যেতেন এবং সেখানে নামাজ আদায় শেষে ফিরে আসতেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৯১)


আল্লামা ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন, ‘সাহাবিরা বিভিন্ন পাহাড়ে চলে যেতেন এবং গোপনে নামাজ আদায় করতেন। একবার সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-সহ একদল সাহাবি মক্কার কোনো এক পাহাড়ে নামাজ আদায় করছিলেন এবং মুশরিকদের একটি দল তা দেখে ফেলে।


তারা মুসলিমদের গালমন্দ করে, মুসলিমদের প্রহার করে। সাআদ (রা.) সেদিন একজন মুশরিকের মুখে আঘাত করেন। এতে সে আহত হয়, এটাই ইসলামের জন্য প্রথম রক্তপাত।’ এরপর মহানবী (সা.) নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সাহাবিদের দ্বীনি শিক্ষা ও নামাজ আদায়ের জন্য আরকাম ইবনে আবিল আরকামের বাড়ি নির্ধারণ করেন। (ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা, পৃষ্ঠা ৯৫)


ইসলামের প্রথম যুগে তিনি কাবাকে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহার করেন।কিছুদিন পর মক্কার মুশরিকরা নবীর ইসলাম প্রচারের সংবাদ জানতে পারে। ফলে তারা মক্কার একটি পাহাড়ে নামাজ আদায়রত মুসলিমদের উপর হামলা করে। 


এ ঘটনায় রাসূল (সাঃ) সাহাবিদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লে ধর্মীয় শিক্ষা ও নামাজ আদায়ের স্থান হিসেবে আরকাম ইবনে আবিল আরকামের বাড়িকে নির্ধারণ করেন। এটিই ইসলামের প্রথম মাদ্রাসা বা প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 


এখানে সাহাবিরা গোপনে নবীর সাথে দেখা করতেন এবং ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে জেনে নিতেন। প্রায় ৩ বছর এভাবে গোপন দাওয়াত ও ইসলামের শিক্ষাদীক্ষার কাজ অব্যাহত ছিল। ওমর বিন খাত্তাব মুসলমান হওয়ার পর প্রকাশ্যে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু হয়। তখন পর্যন্ত সর্বমোট ৪০জন ইসলাম গ্রহণ করেছিল।




দারুল আরকাম কে গড়ে তোলে?

মক্কার মুশরিকরা নবীর ইসলাম প্রচারের সংবাদ জানতে পারে। ফলে তারা মক্কার একটি পাহাড়ে নামাজ আদায়রত মুসলিমদের উপর হামলা করে। এ ঘটনায় রাসূল (সাঃ) সাহাবিদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লে ধর্মীয় শিক্ষা ও নামাজ আদায়ের স্থান হিসেবে আরকাম ইবনে আবিল আরকামের বাড়িকে নির্ধারণ করেন। যা দারুল আরকাম নামে পরিচিত। এটিই ইসলামের প্রথম মাদ্রাসা বা প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 




পৃথিবীর প্রথম শিক্ষক কে ছিলেন?

পৃথিবীর প্রথম ও আদি শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তাই তো ফেরেশতারা বলেছিলেন,

'হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র! আপনি যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনোই জ্ঞান নেই; নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী।' (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩২)




ইসলামের সর্ব প্রথম মাদ্রাসার নাম কি?

ইসলামের সর্ব প্রথম মাদ্রাসার নাম হলো দারুল আরকাম। ইসলামের প্রথম যুগে আরকাম ইবনে আবিল আরকাম সাহাবির ঘরে মুসলমানরা গোপনে গোপনে দ্বীনের কাজ করতেন। আর এটিই হলো ইসলামের প্রথম মাদ্রাসা।

Next Post Previous Post