রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে নিচের কোন সূরাটি নাযিল করা হয়েছে?
রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে নিচের কোন সূরাটি নাযিল করা হয়েছে? জবাব— হাদিসের বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ এর ওপর বেশ কিছুদিন ওহী নাযিল বন্ধ ছিল। এ জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। এবং বিরোধীরাও তাকে বিদ্রুপ করতে শুরু করেছিল। তখন রাসূল সাঃ এর মনে এই আশংকার উদয় হচ্ছিল , হয়তো তাঁর এমন কোন ত্রুটি হয়ে গেছে যার জন্য তাঁর রব তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন। তখন মহান আল্লাহ রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে পবিত্র কুরআনের ক্রমিক ক্রমে ৯৩নং আদ-দুহা (الضحى) সূরাটি নাযিল করেছেন।
রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে নিচের কোন সূরাটি নাযিল করা হয়েছে?
রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে আদ্ব দ্বোহা সূরাটি নাযিল করা হয়েছে। রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে নিচের কোন সূরাটি নাযিল করা হয়েছে? এ সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাঃ এর ওপর বেশকিছু দিন ধরে ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ ছিল। তবে এ সময়টা কতদিনের ছিল তা নিয়ে একাধিক ভিন্ন মতের হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবনে জুরাইন ১২ দিন, কালবী ১৫ দিন, ইবনে আব্বাস ২৫ দিন, সুদ্দী ও মকাতিল ৪৫ দিন বলে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ সময়টা এত দীর্ঘ ছিল যে রাসূল সাঃ খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন এবং বিরোধীরাও তাকে বিদ্রুপ করতে শুরু করেছিল।
তারা মনে করল এ ওহী যেখান থেকে আসতো সে উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। মুশরিকরা তখন বলতে শুরু করলো- মুহাম্মদ (সাঃ) কে তার রব পরিত্যাগ করেছেন। [ইবনে জারীর]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ এর চাচী আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলের ঘর ছিল রাসূল সাঃ এর ঘরের সাথে লাগানো। সে রাসূল সাঃ কে ডেকে বলল- মনে হয় তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে। (নাউজুবিল্লাহ!)
দীর্ঘদিন জিব্রাইল (আঃ) এর আসা বন্ধ থাকায় রাসূল সাঃ পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন। এবং রাসূল সাঃ এর মনে এই আশংকার উদয় হচ্ছিল , হয়তো তাঁর এমন কোন ভুল হয়ে গেছে যার জন্য তাঁর রব তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন। তখন মহান আল্লাহ রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে ক্রমিক ক্রমে ৯৩নং আদ্ব দ্বোহা সূরাটি নাযিল করেছেন।
সূরা আদ্ব দ্বোহা
মহান আল্লাহ রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে নিচের পবিত্র কুরআনের ক্রমিক ক্রমে ৯৩নং আদ্ব দ্বোহা সূরাটি নাযিল করেছেন। সূরাটির আয়াত সংখ্যা ১১টি এবং রূকু সংখ্যা ১টি। সূরা আদ্ব দ্বোহা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে নিচের আদ্ব দ্বোহা সূরাটি নাযিল করা হয়েছে।
সূরা আদ্ব দ্বোহা—
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيم
وَالضُّحَىٰ
১. উজ্জ্বল দিনের কসম ।
وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَىٰ
২. এবং রাতের কসম যখন তা নিঝুম হয়ে যায় ৷
مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَىٰ
৩. ( হে নবী !) তোমার রব তোমাকে কখনো পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্টও হননি৷
وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْأُولَىٰ
৪. নিসন্দেহে তোমার জন্য পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো ৷
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ
৫. আর শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এত দেবেন যে , তুমি খুশী হয়ে যাবে৷
أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَىٰ
৬. তিনি কি তোমাকে এতিম হিসেবে পাননি ?তারপর তোমাকে আশ্রয় দেননি ?
وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ
৭. তিনি তোমাকে পথ না পাওয়া অবস্থায় পান , তারপর তিনিই পথ দেখান৷
وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَىٰ
৮. তিনি তোমাকে নিঃস্ব অবস্থায় পান , তারপর তোমাকে ধনী করেন৷
فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ
৯. কাজেই এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না৷
وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ
১০. প্রার্থীকে তিরস্কার করো না ৷
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
১১. আর নিজের রবের নিয়ামত প্রকাশ করো৷
মহান আল্লাহ রাসূল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে উক্ত সূরাটি নাযিল করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা দিনের আলো ও রাতের নিরবতার কসম খেয়ে রাসূল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন - তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হননি।
রাসুল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে সূরাটি নাযিল করা হয়েছে, কোন প্রকার অসন্তুষ্টির কারণে তার উপরে ওহী বন্ধ করেননি। বরং এর পেছনে সেই একই কারণ কার্যকর ছিল যা আলোকোজ্জ্বল দিনের পরে রাতের নিস্তব্ধতা এ প্রশান্তি ছেয়ে যাবার মধ্যে কার্যকর থাকে। অর্থাৎ ওহীর প্রখর কিরণ। যদি ক্ৰমাগত রাসূল সাঃ এর প্রতি ওহী নাযিল হতো তাহলে তাঁর স্নায়ু তা সহ্য করতে পারতো না । তাই মহান আল্লাহ মাঝখানে কিছু দিন বিরতি দিয়েছেন।
আল্লাহর রাসূল সাঃ কে আরাম ও প্রশান্তি দান করাই এর উদ্দেশ্য । নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই অবস্থার সম্মুখীন হন। সে সময় তার ওহী নাযিলের কষ্ট সহ্য করার অভ্যাস হয়ে ওঠেনি। তাই মাঝে মাঝে বিরতি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কত বছর বয়সে আল কুরআন প্রথম অবতীর্ণ হয়?
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে আল কুরআন প্রথম অবতীর্ণ হয়। রাসূল সাঃ নবুয়তের প্রথম তিন বছর তিনি ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্তজনদের কাছে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তাদের মধ্যে একপর্যায়ে চাচা হজরত আমির হামজা (রা.) ও হজরত উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেছেন।প্রথম দিকে রাসূল সাঃ ৪০ জন সাহাবী ছিলেন। পবিত্র কুরআনে রাসূল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে আদ্ব দ্বোহা সূরাটি নাযিল করা হয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ নবুয়ত লাভ করেন কত সালে?
হযরত মুহাম্মদ সাঃ নবুয়ত লাভ করেন ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে । রাসূল সাঃ নবুয়তের প্রথম তিন বছর তিনি ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্তজনদের কাছে ইসলাম প্রচার করেন। তার একপর্যায়ে চাচা হজরত আমির হামজা (রা.) ও হজরত উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং সাহাবির সংখ্যা ৪০ পূর্ণ হয়। রাসূল সাঃ ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে নবুয়তের চতুর্থ বছরে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পবিত্র কুরআনে রাসূল সাঃ কে সান্ত্বনা দিয়ে আদ্ব দ্বোহা সূরাটি নাযিল করা হয়েছে।
কুরআনের প্রথম আয়াত কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?
৬১০ খ্রিস্টাব্দে রাসূল সাঃ এর ওপর হেরা পর্বতে জিব্রাইল (আঃ) এর ওহীর মাধ্যমে কুরআনের সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশে জিব্রাইল (আঃ) হেরা পর্বতে সর্ব প্রথম সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত রাসূল সাঃ কে পাঠ করান।আর এই ধারাবাহিকতা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকালের মাধ্য দিয়ে শেষ হয়।
শেষ কথা : বেশ কিছু দিন রাসূল সাঃ এর ওপর ওহী নাযিল না হওয়ায় তিনি পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন। তাই আল্লাহর রাসূল সাঃ কে সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যে আদ্ব দ্বোহা সূরাটি নাযিল করা হয়েছে। যাতে রাসূল সাঃ এর হৃদয়ে যে পেরেশানি দেখা দিয়েছিল তা দূর হয়ে যায়।