পবিত্র কুরআনে কোন সূরায় মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে

পবিত্র কুরআনে সূরা বনি ইসরাঈল এ মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে।মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কিবলা বলা হয়। ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস। পবিত্র মক্কা ও মদিনার পর মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদুল আকসাকে ঘিরেই নামাজ পড়তেন মুসলমানরা।


আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আজকে আলোচনা করব ইসলামে  পবিত্র কুরআনে কোন সূরায় মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে  সেই বিষয়ে। 



পবিত্র কুরআনে কোন সূরায় মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে



পবিত্র কুরআনে কোন সূরায় মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে

মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা ইসলাম অনুসারীদের নামাজের জন্য স্থায়ী দিকনির্দেশ (কিবলা) হওয়ার আগে মসজিদুল আকসা ছিল প্রথম কিবলা। হিজরতের পরে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় এর পরিবর্তে কাবা নতুন কিবলা হয়।পবিত্র কুরআনে সূরায় অনেক আয়াতই মসজিদুল আকসা ও জেরুজালেমক নির্দেশ করে।



মসজিদুল আকসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মেরাজের স্মৃতি।মসজিদুল আকসা কুরআনে সূরায় বিভিন্ন আয়াতে বরকতময় ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিনকে নানাভাবে পরিচয় করিয়ে দিলেও তার বিশেষত্ব বর্ণনায় এ একটি আয়াতই যথেষ্ট। 



পবিত্র কুরআনে সূরা বনী ইসরাঈল, সূরা মায়েদা, সূরা আম্বিয়া, সূরা আরাফ ও সূরা সাবা উল্লেখ্য সূরায় মোট ছয়টি আয়াতে মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে।পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মসজিদুল আকসা কে বরকতময় পূণ্যভূমি উল্লেখ করা হয়েছে। 



পবিত্র কুরআনে কোন সূরায় মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো—




পবিত্র কুরআনে সূরা বনী ইসরাঈল এ মসজিদুল আকসার উল্লেখ

পবিত্র কুরআনে বনি ইসরাঈল সূরায় প্রথম আয়াতে মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুজিযা মিরাজ ও ইসরার আলোচনা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—


سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِهٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَهٗ لِنُرِیَهٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ


পবিত্ৰ মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত যার আশপাশকে আমি করেছি বরকতময়, যেন আমি তাকে আমার নিদর্শন দেখাতে পারি; তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। 

[সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াাত : ১]



জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসুলুল্লাহর (সা.) রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন। তার পর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।




পবিত্র কুরআনে সূরা মায়িদাহ এ মসজিদুল আকসার উল্লেখ

পবিত্র কুরআনে সূরা মায়িদাহ এ আল্লাহ তায়ালা মসজিদুল আকসা ও তার আশপাশের অঞ্চলকে পবিত্র ভূমি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন—হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি লিখে দিয়েছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। [সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ২১]



এখানে পবিত্র ভূমি বলতে কোন ভূমি বোঝানো হয়েছে, এ প্রশ্নে তাফসীরবিদদের বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো মতে বায়তুল মুকাদ্দাস, কারো মতে কুদস শহর ও ইলিয়া।


আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আয়াতে পবিত্র ভূমি দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাস উদ্দেশ্য।সেখানে বনি ইসরাইলকে প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল।[তাফসিরে ইবনে কাসির]



মসজিদুল আল আকসা কে নবী-রাসুলগণের হিজরতভূমি ও আবাসস্থল বলা হয়ে থাকে। যুগে যুগে মানবজাতির হেদায়াতের জন‌্যে প্রেরিত নবী-রাসূলগণ অস্বীকারকারীদের হাতে বর্বরোচিত নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।এমনকি কোন কোন নবী-রাসুলকে নিজ মাতৃভূমি ত‌্যাগে বাধ‌্য করেছেন। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তার চেয়ে নিরাপদ ও দাওয়াতের অনুকূল কোনো শহরে কিংবা দেশে নবী-রাসূলগণ হিজরত করেন। 




পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়াতে মসজিদুল আকসার উল্লেখ

পবিত্র কুরআনে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও লূত আলাইহিস সালামের নমরুদের অধিকারভূক্ত দেশ হতে অন‌্যত্রে হিজরত প্রসঙ্গে সূরা আম্বিয়াতেও আল্লাহ তায়ালা মসজিদুল আকসাকে পবিত্র ও বরকতময় বলেছেন।আল্লাহ তায়া’লা বলেন—  এবং আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সে দেশে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি সৃষ্টিজগতের জন্য। [সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৭১]



অধিকাংশ আলেমের মতে, এ থেকে শাম (বর্তমানে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) দেশকে বুঝানো হয়েছে। যাকে শস্য-শ্যামলতা, ফলমূল, নদ-নদীর আধিক্য ও সেই সাথে বহু নবীর বাসস্থান হওয়ার কারণে বরকতময় ও কল্যাণময় বলা হয়েছে।



মহান আল্লাহ হযরত দাউদ আলাইহিস সালাসের জন‌্যে পর্বত ও পক্ষীকুলকে বশীভূত করেছেন, যারা তার আওয়াজের সাথে তাসবিহ পাঠ করতো, তেমনি সুলায়মান আলাইহিস সালামের জন‌্যে বায়ূকে বশীভূত করে দিয়েছেন। বায়ুতে ভর দিয়ে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে কল‌্যাণময় দেশে দ্রুততম সময়ে ও অতি সহজে গমনাগমন করতেন। 



পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়ার ৮১ নম্বর আয়াতও মসজিদুল আকসাকে নির্দেশ করে।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন — আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম। [সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮১]



পবিত্র কুরআনে এই আয়াতে ( মসজিদুল আকসাকে ) বরকত বা প্রভূত কল্যাণ রেখেছি বলে শাম দেশ তথা সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন এলাকাকেই বোঝানো হয়েছে। 



পবিত্র কুরআনে সূরা আরাফে মসজিদুল আকসার উল্লেখ

ফেরাউনের নির্যাতন ও উৎপীড়নে অতিষ্ঠ বনি ইসরাঈলকে আল্লাহ তাআলা তার হাত থেকে উদ্ধার করে বরকতময় ও কল‌্যাণময় ভূমির উদয়াচল ও অস্তাচলের অধিপতি করেছেন।



পবিত্র কুরআনে সূরা আরাফে পবিত্র কুরআন আল্লাহ তায়া’লা বলেন— আর আমি দুর্বল করে রাখা লোকেদেরকে সেই যমীনের পূর্বের আর পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম যাতে আমি কল্যাণ নিহিত রেখেছি। এভাবে বনি ইসরায়েলের ব্যাপারে তাদের ধৈর্য ধারণের কারণে তোমার প্রতিপালকের কল্যাণময় অঙ্গীকার পূর্ণ হল আর ফেরাউন ও তার লোকজনের গৌরবময় কাজ ও সুন্দর প্রাসাদগুলোকে ধ্বংস করে দিলাম।  [সূরা আরাফ, আয়াত : ১৩৭]





পবিত্র কুরআনে সূরা সাবা এ মসজিদুল আকসার উল্লেখ

কল‌্যাণময় ভূমি প্রদানের মাধ‌্যমে সাবাবাসীদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। বনি ইসরায়েলকে ফেরাউন দাস বানিয়ে রেখেছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের তার কবল থেকে মুক্ত করে রাজত্ব্ দান করেছিলেন। এখানে রাজ্য বা দেশ বলতে শাম দেশের এলাকা ফিলিস্তিনকে বুঝানো হয়েছে।



পবিত্র কুরআনে সূরা সাবা এ  আল্লাহ তায়া’লা বলেন— আর তাদের ও যেসব জনপদের মধ্যে আমি বরকত দিয়েছিলাম, সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে আমি দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওই সব জনপদে ভ্রমনের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম। বলেছিলাম, তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্ৰমণ কর দিনে ও রাতে। [সূরা সাবা, আয়াত : ১৮]



পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ সূরা ত্বিনে জলপাই, ডুমুর ও সিনাই উপত্যকার শপথ করেছেন, যা স্পষ্টতই ফিলিস্তিন ভূমিকে বোঝায়।আল্লাহ তায়া’লা বলেন— শপথ ত্বিন (জলপাই) ও জাইতুনের (ডুমুরের), শপথ সিনাই পর্বতের। [সুরা ত্বিন, আয়াত : ১-২]





আল আকসা মসজিদ কে নির্মাণ করেন

পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন সূরার আয়াতে আল্লাহ তাআলা মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ করেছেন। সর্বপ্রথম মসজিদুল আকসা বা আল আকসা মসজিদ কে নির্মাণ করেছেন তা নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের তিনটি মত পাওয়া যায়। এক. এই মসজিদের প্রথম নির্মাতা হলেন আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম। দুই. নূহ আলাইহি সালামের সন্তান সাম আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। তিন. হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম প্রথম আল-আকসা মসজিদের ভিত্তি নির্মাণ করেন। 



তবে আধুনিক গবেষকদের মতে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম আল আকসা মসজিদের প্রথম নির্মাতা। নূহ আলাইহিস সালামের মহাপ্লাবনে ধ্বংস হওয়ার পরে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কোন নির্মাণ করেন।পরবর্তীকালে তার বংশধররা এই মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে।কালক্রমে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সহ অনেক নবী এই মসজিদের সংস্কার কাজ করেছেন। 



হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ও হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের সময় পর্যন্ত অনেক সংযোজনের মধ্য দিয়ে মসজিদুল আকসার বিস্তারিত কম্পাউন্ডে রূপান্তরিত হয়। 


সুলাইমান আলাইহিস সালাম আল আকসা চত্বরে একটি আলিশান ভবন নির্মাণ করেন। যাকে হায়কালি সুলাইমানি বলা হত। পরবর্তী সময়ে ধর্ম বিকৃতকারী ইহুদিরা এটি কে তাদের মন্দির হিসাবে ব্যবহার করে। তারা এটির নাম দেয় সলেমন টেম্পল। 




মসজিদুল আকসা কোথায় অবস্থিত

মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কাছে পৃথিবীর দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরায় মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে। মসজিদুল আকসা ফিলিস্তিনের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র জেরুজালেম নগরীতে অবস্থিত। পবিত্র মক্কা ও মদিনার পর মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদুল আকসাকে ঘিরেই নামাজ পড়তেন মুসলমানরা।



আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে কোন সূরায় মসজিদুল আকসার কথা উল্লেখ রয়েছে এই বিষয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করেছি।

Next Post Previous Post