মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বিধান

সুদ ভিত্তিক ব্যাংক ঋণ নেওয়া হারাম। তবে কেউ যদি অতি প্রয়োজনে সুদ হীন ব্যাংক ঋণ নেয় তাকে অবশ্যই মৃত্যুর পূর্বে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হবে।মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বিধান হল- মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঋণ না দিয়েই কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তাহলে ওই ব্যক্তির ঋণ তার সম্পত্তি থেকে পরিবার, আত্মীয়স্বজন কিংবা ওসিয়াতকৃত ব্যক্তি পরিশোধ করবেন। 


যদি তার ঋণ পরিশোধ করার মতো আপনজনদের ভিতরে কেউ না থাকে কিংবা মৃত ব্যক্তি সম্পত্তি থেকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব না হয়, এবং তা যদি এর বাইরে অন্য কেউ পরিশোধ করেন, তাহলেও মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে। 


ইসলামে অন্যের প্রয়োজনে তাকে সাহায্যের জন্য ঋণ দেওয়াকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে; তেমনি ঋণ পরিশোধের ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আজকে আলোচনা করব ইসলামে  মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধের বিধান কি সেই বিষয়ে। 



মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বিধান



মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বিধান

প্রতিটি মুসলমানের উচিত মৃত্যু আসার পূর্বে ঋণ পরিশোধ করা এবং উপায় না থাকলে ওয়ারিশগণকে সে ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাওয়া।কোন ব্যক্তি যদি ঋণ বা ব্যাংক ঋণ রেখেই মারা যায়, তাহলে ওই মৃত্যু ব্যক্তির সব সম্পদ বিক্রি করে হলেও পরিবারকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।  তা না হলে মৃত্যুর পরে তার আত্মা ঝুলন্ত থাকবে। 


ঋণকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষণ রকম অপছন্দ করতেন। কেন নারিন মানেই হলো দুশ্চিন্তাও বোঝা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ'উযু বিকা মিন গলাবাতিদ দাইন। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ঋণের প্রাবল্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সুনানুন নাসায়ি : ৫৪৭৫; মুসনাদু আহমাদ : ৬৬১৮]



নবীজি যার ব্যাপারে জানতেন, সে ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেছে অথচ মৃত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে যান নি, তার জানাযা রাসূল সা পড়াতেন না। যেহেতু তিনি মুসলমান তাই তার জন্য দোয়া করা অন্য মুসলমানের কর্তব্য। এজন্য অন্য ব্যক্তিদের দ্বারা তার জানাজা পড়াতেন। এটা তিনি এর কারণে করতেন যেন মানুষ ঋণ কে ভয় পায়। তবে পরবর্তী সময়ে গনিমত ও যুক্তলব্ধ সম্পদ আসা শুরু হলে, তিনি নিজেই ঋণ পরিশোধ করে দিতেন। 



তাই মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ যে কেউ করতে পারবে। তবে কঠিন প্রয়োজন ছাড়া ঋণ নেওয়া যাবে না। আর ঋণ নিলেও পরিষদের নিয়তে নিতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল গুনাহই ক্ষমা করে দেওয়া হয়। [ সহীহ মুসলিম : ১৮৮৬]



মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ আবশ্যক : কোন মৃত ব্যক্তি যদি কোন প্রকার ঋণ ( সেটা ব্যাংক ঋণ হতে পারে ) রেখে মারা যায়, তাহলে অবশ্যই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের পর মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ওয়ারিশদের ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত কিংবা ঋণদাতা মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত মৃত ব্যক্তি দায়মুক্ত হবেন না। মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার পরে অবশিষ্ট সম্পদের মালিক হবেন ওয়ারিসরা। 



মৃত ব্যক্তির ঋণ ( ব্যাংক ঋণ ) যে কেউ পরিশোধ করতে পারবে : মৃত ব্যক্তি ওয়ারিশরা যদি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধের মতো পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে মারা না যায় এবং অন্য কেউ তা পরিশোধ করে দেয় তবে তা ঋণ পরিশোধ আদায় হয়ে যাবে এবং ঋণ পরিশোধকারী ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে উপযুক্ত প্রতিদান পেয়ে যাবেন। 



আল্লাহ যার ঋণ পরিশোধ করবেন : ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যদি সম্পদ অপচয় ও অপব্যয় না করে এবং ইচ্ছা থাকার পরও ঋণ শোধ করে না যেতে পারে অথচ মৃত ব্যক্তিরহীন পরিশোধের মতো সম্পদ না রেখে যেতে পারে তাহলে আল্লাহতালা পরকালে তাকে ক্ষমা করে দেবেন। 



আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ (ঋণ হিসেবে) নেয় আল্লাহ তার পক্ষ থেকে পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে ব্যক্তি বিনষ্ট করার নিয়তে তা গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করেন। [ সহীহুল বুখারী :২৩৮৭; মুসনাদু আহমাদ : ৮৭৩৩]




সুতরাং আখিরাতে বিশ্বাসী একজন প্রকৃত মুসলিম একান্ত বাধ্য ও নিরুপায় না হলে সুদ মুক্ত ঋণ নিতে আগ্রহী হয় না, সেখানে তার জন্য সুদ ভিত্তিক ঋণ গ্রহণ করা অসম্ভব। 



মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থারত : কিয়ামতের দিন মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ না হলে মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। হাদিসে এসেছে, মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার দ্বীনের কারণে যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়। [ তিরমিজি : ১০৭৮] এমনকি আল্লাতালা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিও যদি ঋণ থাকে তাহলে তাদের ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকেও ক্ষমা করবেন না। 



জীবিত থাকতেই ঋণশোধ : জীবিত অবস্থায় কোনোভাবেই ঋণ শোধ করা সম্ভব না হলে ঋণ গ্রহিতাকে অবশ্যই নীলদাতার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নিতে হবে অথবা সমাজের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সংস্থা ও সংগঠনের শরণাপন্ন হয়ে বা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনভাবেই ঋণ এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। কেননা ঋণ গ্রস্ত মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি লাভ করবেনা। 




ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

কিয়ামতের দিন মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ না হলে মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। হাদিসে এসেছে মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার দ্বীনের কারণে যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়। [ তিরমিজি : ১০৭৮] এমনকি আল্লাতালা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিও যদি ঋণ থাকে তাহলে তাদের ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকেও ক্ষমা করবেন না। 




ঋণ পরিশোধ করা কি ফরজ

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করা ফরজ। জীবিত অবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক বা ফরজ।  এমন কি ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলেও তার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মৃত ব্যক্তির কোন প্রকার ঋণ বা ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না হলে কিয়ামতের দিন ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তিরও ঋণ থাকলে তাকে ক্ষমা করা হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঋণ কে ভীষণ অপছন্দ করতেন এবং কুফর ও ঋণ হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। 



ঋণ পরিশোধে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলামে অন্যের প্রয়োজনে তাকে সাহায্যের জন্য ঋণ দেওয়াকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে; তেমনি ঋণ পরিশোধের ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তি ওয়ারিশরা যদি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধের মতো পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে মারা না যায় এবং অন্য কেউ তা পরিশোধ করে দেয় তবে তা ঋণ পরিশোধ আদায় হয়ে যাবে এবং ঋণ পরিশোধকারী ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে উপযুক্ত প্রতিদান পেয়ে যাবেন।



 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি থাকলে নামাজ হবে কি না। এই বিষয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করেছি। আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিম ব্যক্তিকে মৃত্যুর আগে ঋণ পরিশোধ করার তাওফিক দান করুন। এবং মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার তাওফিক দান করুন। 

Next Post Previous Post