একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি থাকলে নামাজ হবে কি
একজন মুসলিমের ঘরে কোন ধরনের মানুষের ছবি কিংবা প্রাণীর ছবি ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিষেধ। কেননা কোন ঘরে মানুষের ছবি থাকলে বা দেহ বিশিষ্ট কোন প্রাণীর ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য থাকলে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।হাদিসে উল্লেখ আছে ফেরেশতারা হলেন আল্লাহ তায়ালার রহমত ও তার সন্তুষ্টি প্রকাশক।
তাই একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি বা কোন প্রাণীর ছবি টাঙ্গানো থাকলে ওই ঘরে নামাজ পড়া মাকরূহ বা অপছন্দনীয় কাজ।কেননা ছবি প্রতিকৃতি সংরক্ষকের কাজের সাথে কাফিরদের কাজে সাদৃশ্য রয়েছে, আর ফেরেশতারা এসব জিনিস অত্যন্ত ঘৃণা করেন।
তাই আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আজকে আলোচনা করব একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি থাকলে নামাজ হবে কি না সেই বিষয়ে।
একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি থাকলে নামাজ হবে কি
সহীহ (শুদ্ধ) ভাবে নামাজ আদায়ের জন্য ইসলামী শরীয়তে কিছু বিধান রয়েছে সেগুলো পূর্ণভাবে না মানলে সঠিকভাবে নামাজ আদায় হবে না। তারমধ্যে একটি বিধান হল কোন ঘরে মানুষের ছবি থাকলে সে ঘরে নামাজ হবে কিনা। হাদিসে উল্লেখ আছে যে ঘরের দেয়ালে বা ঘরে মানুষের ছবি কিংবা কোন প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে না। কারণ সে ঘরে মানুষের ছবি থাকে বা কোন প্রকার প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করে না।
হাদিসে উল্লেখ্য করা হয়েছে, ফেরেশতারা হলেন আল্লাহ তায়ালার রহমত ও তার সন্তুষ্টি প্রকাশক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— নিশ্চয়ই রহমতের ফেরেশতারা এমন ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে প্রাণীর ছবি প্রতিকৃতি থাকে। [ সহীহুল বুখারী : ৫৯৫৮; সহিহ মুসলিম : ২১০৬]
একজন মুসলিমের ঘরের দেয়ালে কোন প্রকার প্রাণীর ছবি মানুষের ছবি টাঙ্গানো থাকলে এবং ওই ছবি দৃশ্যমান হলে সে ঘরে নামাজ আদায় করা মাকরূহ ও অপছন্দনীয় কাজ। বিকল্প কোন ঘর বা কোন জায়গা আশেপাশে থাকে যে ঘরে কোন প্রকার মানুষের ছবি বা প্রাণীর ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য নেই এমন ঘরে বা জায়গায় আমাদের নামাজ আদায় করা উচিত এবং কর্তব্য।
যদি এরকম কোন জায়গা না থাকে ঘরের সব জায়গাতেই প্রাণীর বা মানুষের ছবি থাকে, তাহলে ছবি নামিয়ে কিংবা ঢেকে আমরা নামাজ আদায় করব। বিশেষ করে যখন ঘরের কিবলার দিকে ছবিগুলো থাকবে। নামাজের মনোযোগ এর কারণেই নষ্ট হয়ে থাকে। আর যদি সেই পরিস্থিতি ও না থাকে, এরকম অবস্থাতেই আমরা নামাজ আদায় করে নেই , তাহলেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। নামাজ বিশুদ্ধ হবে না ব্যাপারটি এমন নয়, বরং এ অবস্থায় নামাজ আদায় করলে নামাজ মাকরুহ হয়ে যায় এবং অপছন্দনীয় কাজ।
একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি বা কোন প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা, মূর্তি, ভাস্কর্য রাখা এবং কুকুর রাখা গুনাহের কাজ এবং হারাম। এসব ঘরে রহমতের ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না।
ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন— যে ঘরে ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ হলো, ছবি প্রতিকৃতি সংরক্ষকের কাজের সঙ্গে কাফিরদের কাজের সাদৃশ্য রয়েছে। যেহেতু কাফিররা তাদের ঘরে ছবি মূর্তি রাখে এবং সেগুলো সম্মান করে, আর ফেরেশতারা এসব জিনিস অত্যন্ত ঘৃণা করেন, তাই ঘৃণা বসত একজন মুসলিমের যে ঘরে ছবি প্রতিকৃতি থাকে সে ঘরে তারা প্রবেশ করেন না। [ফাতহুল বারি, খন্ড : ১০; পৃষ্ঠা : ৩৯২]
একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি রাখা ও ছবি বানানো যেমন একজন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়, তেমনি কোন অমুসলিমকে তা শেখানো বৈধ নয়। কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ কঠোর শাস্তি হবে তাদের দ্বারা মানুষের ছবি বা কোন প্রাণীর ছবি তৈরি করে আল্লাহর সৃষ্টি করা গুণের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করেছে।
একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি থাকা ও তার সৃষ্টি করা গুনের সাথে সাদৃশ অবলম্বন করে ছবি প্রতিকৃতি মূর্তি বা ভাস্কর্য তৈরি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— যে ব্যক্তি দুনিয়ায় ছবি প্রতিকৃতি তৈরি করবে, কিয়ামত দিবসে তাকে এ সকল ছবি প্রতিকৃতিতে জীবন দানের আদেশ করা হবে; অথচ তাতে সে জীবন দান করতে সক্ষম নয় (ফলে তাকে সর্বোচ্চ কঠোর ও মর্মান্তিক শাস্তি দেওয়া হবে)। [সহীহুল বুখারী : ৫৯৬৩; সহিহ মুসলিম : ২১১০]
উদ্দেশ্য হলো, তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে এই ছবি প্রতিকৃতির মধ্যে জীবন দেওয়ার জন্য; এই বাধ্যবাধকতা তার উপর চাপানো হবে, তার অক্ষমতা প্রকাশ এবং শাস্তি প্রদানের জন্য। তাই কেয়ামতের কথা চিন্তা করে একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি টাঙিয়ে রাখা বা ছবি প্রতিকৃতি তৈরি করা, এবং ঘরে কুকুর রাখা থেকে বিরত থাকা একজন মুসলিমের একান্ত কর্তব্য।
পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি
একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি থাকলে যেমন নামাজ মাকরূহ হবে তেমনি একজন মুসলিমের পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে সেই পোশাক পড়ে নামাজ আদায় হবে না। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— (রহমতের) ফেরেশতারা এমন কোন ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কোন কুকুর রয়েছে এবং এমন ঘরেও প্রবেশ করে না, যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি রয়েছে। [সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম]
ঘরে মাছের ছবি থাকলে নামাজ হবে কি
একজন মুসলিমের ঘরে কোন ধরনের প্রাণীর ছবি থাকলে, সে ঘরে নামাজ হবে না। মানুষের ছবি, বা মাছের ছবি এগুলো প্রাণীরই অন্তর্ভুক্ত। তাই একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি বা একজন মুসলিমের ঘরে মাছের ছবি থাকলে সে ঘরে নামাজ মাকরূহ হবে। কিন্তু ছবি ঢেকে রেখে নামাজ পড়লে নামাজ মাকরূহ হবে না। তবে ঘরে একুরিয়ামে জীবিত মাছ থাকলে সে ঘরে নামাজ হবে, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন সিজদার সামনে না থাকে। কেননা সিজদার সামনে একুরিয়ামে মাছ থাকলে সেদিকে কোনভাবে নজর চলে গেলে নামাজে মনোযোগ নষ্ট হবে।
ঘরে মানুষের ছবি রাখা কি হারাম
একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি রাখা গুনাহের কাজ এবং হারাম। কেননা যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি প্রতিকৃতি, মূর্তি ও ভাস্কর্য থাকে, সে ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করে না। তাই যেহেতু মানুষ মানুষ প্রাণী সেজন্য একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি রাখা হারাম এবং গুনাহের কাজ।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে একজন মুসলিমের ঘরে মানুষের ছবি থাকলে নামাজ হবে কি না। এই বিষয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করেছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই গুনাহের ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।