বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে কিভাবে দোয়া করতে হয়?
পৃথিবীতে সন্তানের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো বাবা-মা। যাদের ছাড়া কোন সন্তানই দুনিয়ার আলো দেখতে পেত না।যে বাবা মাকে সন্তুষ্ট করবে, দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায় আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। আর যে ব্যক্তি বাবা-মাকে রাগান্বিত করবে, সে কেবল আল্লাহর ক্রোধই অর্জন করবে।
সন্তানের জন্য বাবা মা দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন।বাবা মায়ের দোয়া যেমন কবুল হয়, তেমনি অভিশাপও তাই কোন অবস্থাতেই বাবা-মাকে রাগান্বিত করা উচিত নয়।বাবা-মাকে খুশি করার জন্য মানুষের সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
সন্তানের সদাচরণ বাবা-মাকে যতটা আনন্দ দেয় ততটা অন্য কিছুই দেয় না। বাবা মা যেমন সন্তানের জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন, তেমনি বাবা-মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে যে দোয়া পাঠ করতে হয় তা শিখিয়েছেন।
তাই আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আজকে আলোচনা করব বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে কিভাবে দোয়া করতে হয় সেই বিষয়ে।
বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে কিভাবে দোয়া করতে হয়?
মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য হিরকের মতো কাজ করে। বাবা মা সন্তানের জন্য তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করে ও সুস্থতার জন্য যেমন দোয়া করেন। তেমনি পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা সন্তানদেরকে ও বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে কিভাবে দোয়া করতে হয় তা শিখিয়েছেন। বাবা মায়ের ঋণ সন্তান কোন দিন পূর্ণ করতে পারবে না। তাই সন্তানদের বাবা মায়ের শান্তির জন্য, বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা দোয়া শিখিয়েছেন।
বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে কিভাবে দোয়া করতে হয় পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা তা শিখিয়েছেন। নিম্নে বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে যে দোয়া করতে হয় তা দেওয়া হল—
رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا
উচ্চারণ : রব্বির হামহুমা, কামা রব্বাইয়া-নি সাগিরা।
অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ [সূরা বনি ইসরাইল,আয়াত : ২৪]
দুনিয়াতে বাবা-মা জীবিত থাকুক আর না থাকুক তাদের জন্য সব সময় পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এই দোয়াটি করতে হয়। এছাড়াও বাবা মায়ের জন্য সন্তানের আরো কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তা দেওয়া হল—
বাবা মায়ের জন্য দান সাদকা করা : বাবা মা আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে আরো কিছু দান সাদকা করতেন কিংবা বাবা মা বেঁচে থাকতে দান সাদকা করে যেতে পারেননি। তাই সন্তানের উচিত বাবা মা মারা যাওয়ার পরে তাদের পক্ষ থেকে বাবা-মায়ের জন্য দান সাদকা করা। দ্বীনদার সন্তান রেখে বাবা মা মারা গেলে ওই সন্তান বাবা-মায়ের জন্য সদকায়ে জারিয়া।
বাবা-মায়ের জন্য আরো কিছু সাদকায়ে জারিয়া হলো- পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো), মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা ইত্যাদি কাজ করা।
বাবা মায়ের জন্য সিয়াম পালন করা: বাবা মায়ের মৃত্যুর পরে যদি তাদের কোনো মানতের বা কাযা সিয়াম থাকে তাহলে তাদের পক্ষ থেকে এ সিয়াম পালন করার নির্দেশ হাদিসে রয়েছে । এতে তাদের মানতের ও কাযা সিয়াম পালন হয়ে যাবে। তবে সন্তানরা বাবা মায়ের জন্য যে কোনো দিনে সিয়াম রাখতে পারেন। আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সিয়ামের কাযা (যিম্মায়) রেখে যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তবে তার অভিভাবক (রেখে যাওয়া সন্তান বা আপনজন) তার পক্ষ থেকে সিয়াম বা রোজা আদায় করবে।’ (বুখারি)
তবে অনেক আলেমদের মতে বাবা-মার জন্য সন্তানের রোজা রাখার বিষয়ে শুধু ফরজ ও ওয়াজিব রোজা রাখার বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন। নফল রোজা রাখার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন।
বাবা-মায়ের জন্য হজ্জ্ব ও ওমরাহ পালন করা : সন্তান বাবা মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ্ব ও ওমরাহ পালন করতে পারবে।এতে বাবা-মায়ের হজ্জ্ব ও ওমরাহ আদায় হয়ে যাবে। তবে বাবা-মার পক্ষ থেকে হজ্জ্ব পালন করার আগে নিজের হজ্জ্ব বা ওমরাহ আদায় করতে হবে।
বাবা মায়ের জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করা ছাড়াও তাদের মৃত্যুর পরে সন্তানের আরো কিছু করণীয় হলো - বাবা-মায়ের ওসিয়াত পূরণ করা,
- বাবা-মায়ের জন্য কুরবানী দেওয়া,
- বাবা-মায়ের বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্মানসূচক ভালো ব্যবহার করা,
- বাবা মায়ের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা,
- বাবা-মায়ের মৃত্যুর আগে কোন প্রকার ঋণ থাকলে তা সন্তানদের অবশ্যই পরিশোধ করা,
- বাবা-মায়ের কাফফারা আদায় করা,
- বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করা,
- বাবা-মা মৃত্যুর পূর্বে অর্থাৎ বেঁচে থাকা অবস্থায় কোন প্রকার গুনাহের কাজ শুরু করে রেখে গেলে তা বন্ধ করা।
বাবা-মায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে দোয়া করা - রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব। অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)। এবং বাবা-মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা।
বাবা মা অসুস্থ হলে কি দোয়া পড়তে হয়?
মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য হিরকের মতো কাজ করে। বাবা মা সন্তানের জন্য তাদের সুস্থতার জন্য যেমন দোয়া করেন। তেমনি আল্লাহ তায়া’লা সন্তানদেরকে ও বাবা মায়ের জন্য সুস্থতার জন্য দোয়া শিখিয়েছেন। ববা মায়ের ঋণ সন্তান কোন দিন পূর্ণ করতে পারবে না। তাই সন্তানদের বাবা মায়ের শান্তির জন্য পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা দোয়া শিখিয়েছেন।
বাবা মা অসুস্থ হলে যে দোয়া পড়তে হয় তা হল— রব্বির হামহুমা, কামা রব্বাইয়া-নি সাগিরা। অর্থ- হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।
বাবা মা মারা গেলে কি দোয়া পড়তে হয়?
বাবা মা জীবিত কিংবা মারা গেলে উভয় অবস্থাতেই বাবা-মায়ের শান্তি কামনা করে — রব্বির হামহুমা, কামা রব্বাইয়া-নি সাগিরা। অর্থ- হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। এই দোয়া পড়তে হয়। অনেকে মনে করেন এ দোয়াটি বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে পড়তে হয়, কিন্তু এটি ভুল ধারণা।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে কিভাবে দোয়া করতে হয়। এই বিষয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করেছি। আল্লাহ তাআলা সকলের বাবা-মায়ের দীর্ঘায়ু দান করুন। আল্লাহ তাআলা বাবা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনার জন্য সন্তানের দোয়া কবুল করুন।