সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

সুদ একটি সামাজিক ব্যাধি। আল্লাহ তায়া’লা ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে করেছেন হারাম। মানবজাতির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও চারিত্রিক কল্যানের কথা বিবেচনা করেই মূলত ইসলামে সুদের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আল্লাহ সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। 


সুদ সংক্রান্ত কুরআনে সূরা রূম' এর ৩৯ নং আয়াত প্রথম অবতীর্ণ হয়। আয়াতটি হলো— "যে সুদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না।" এ আয়াতে সুদ নিষিদ্ধ করা হয়নি, কিন্তু সুদ সম্পর্কে আল্লাহ তায়া’লা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, অর্থাৎ সুদ আল্লাহর কাছে বাড়ে না। পরবর্তীতে আল্লাহ সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিলের মধ্য দিয়ে সরাসরি সুদকে হারাম ঘোষনা দিয়েছেন।









সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত


ইসলামী শরীয়াহ মতে, লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরুপ বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে। আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারা'র ২৭৫ নং আয়াত নাযিলের মধ্য দিয়ে সুদকে হারাম ঘোষনা করেছেন।


আল্লাহ তায়া’লা বলেন


যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তিরই ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতই।' অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। যার নিকট তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তবে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার ব্যাপার আল্লাহ্‌র ইখ্তিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই দোজখবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

[সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫]




ব্যবসা ও সুদ সম্পর্কে কুরআনে সুদকে অবৈধ এবং ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদের বৃদ্ধি করা ইসলামে বৈধ করা হয়েছে।আল্লাহ তায়া’লা ব্যবসাকে করেছেন হালাল কিন্তু অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ গ্রহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন —


হে মুমিনগণ, তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায় ভাবে ভক্ষণ করোনা। তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। 

[ সূরা নিসা,আয়াত : ২৯]




সুদকে কুরআনে অবৈধ করা হয়েছে এবং ব্যবসাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যারা ব্যবসার জন্য আল্লাহর জমিনে ঘুরে বেড়ায় ও ভ্রমন করে, মহান আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন 'সূরা মুজাম্মিল' এর ২০ নং আয়াতে। তিনি বলেন— "আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক) অনুসন্ধানে জমিনে ভ্রমন করবে।" 




কিন্তু ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির রাস্তা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। কম-বেশি সকল পরিমাণ ও সব ধরনের সুদ-ই ইসলামে হারাম। সুদ নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও ইহুদিরা সুদ গ্রহণ করত, তাই এ ব্যাপারে তাদের নিন্দা করা হয়েছে কঠোর ভাষায়।পবিত্র কুরআনের শেষ দিকে অবতীর্ণ সূরা বাকারা'র ২৭৮ ও ২৭৯নং আয়াতে আল্লাহ তায়া’লা বলেন 



হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও— যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। অতঃপর যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর যদি তোমরা তাওবা করো তাহলে তোমাদের (সুদ বাদে বাকি) মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং জুলুমের শিকার ও হবে না। 

[ সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৭৯]





সুদ ও ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে নবীজি (সাঃ) যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সামাজিকভাবে এর সর্বব্যাপী ক্ষতির কথা বুঝিয়েছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— 



যখন কোন জনপদে ব্যভিচার ও সুদ ছড়িয়ে পড়ে, তখন তারা (অর্থাৎ সে জনপদের অধিবাসীরা) নিজেদের জন্য আল্লাহর আজাব বৈধ করে নেয়। 

[মুস্তাদরাকুল হাকিম : ২২৬১; শুআবুল ঈমান : ৫১৪৩]





সুদখোর হলো ঋণদাতা, যে লোকদেরকে ঋণ দেয়, এরপর লোকজন থেকে অতিরিক্ত সহ ঋণের অর্থ ফেরত নেয়। নিঃসন্দেহে সে আল্লাহ তায়ালা ও মানুষের কাছে অভিশপ্ত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এক্ষেত্রে সুদখোরই একমাত্র অপরাধী নয়; বরং যে ব্যক্তি ঋণগ্রহণ করে অতিরিক্তসহ যে অর্থ ফেরত দেয়, সে এবং সুদের লেখক, সুদি লেনদেনের সাক্ষী সবাই-ই গুনাহগার ও অপরাধী। হাদিসে এসেছে— 




জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার ওপর,এর লেখকের ওপর এবং এর সাক্ষীদ্বয়ের ওপর। 

[মুসনাদু আহমাদ : ৩৭২৫; সহীহ মুসলিম : ১৫৯৮; মুসতাখরাজু আবি আওয়ানা : ৫৪৫৩]




একমাত্র সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াতই অবতীর্ণ হয়নি ; কুরআনই একমাত্র আসমানী কিতাব নয় যেখানে সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইহুদি ধর্মের "ওল্ড টেস্টামেন্ট" -এ সুদ নিষেধের বিধান পাওয়া যায়। কিন্তু এ বিধান বিকৃতির হাত থেকে রেহাই পায়নি। এছাড়াও খ্রিস্টধর্মের লুকের "ইনজিল" -এ সুদ নিষেধের বিধান পাওয়া যায়। 

Next Post Previous Post