পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত কোন সূরার কত নং আয়াত?
পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত কোন সূরার কত নং আয়াত? জবাব- পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হলো পবিত্র কুরআনের ২য় সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত। যা আমাদের কাছে 'আয়াতুল কুরসি' নামে পরিচিত। 'আয়াত' এর শাব্দিক অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন এবং 'কুরসি' এর শব্দিক অর্থ চেয়ার বা আসন। এই আয়াতের 'কুরসি' শব্দ দিয়েই 'আয়াতুল কুরসি' নামকরন করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াতুল কুরসিকে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত এবং ফজিলতপূর্ণ আয়াত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত কোন সূরার কত নং আয়াত?
পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, উবাই বিন কাব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক দিন আবুল মুনজিরকে লক্ষ করে বলেন, হে আবুল মুনজির! আল্লাহর পবিত্র কুরআনের কোন আয়াত তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ?
আবুল মুনজির বলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সর্বাধিক অবগত। রাসুলুল্লাহ (সা.) আবার বলেন, হে আবুল মুনজির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াত তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ? তখন আমি বললাম, আয়াতুল কুরসি (আমার কাছে বেশি মর্যাদাপূর্ণ)। এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের ওপর হাত রেখে বলেন, হে আবুল মুনজির! তোমার জ্ঞানকে মোবারকবাদ।
[সহীহ মুসলিম : ১৭৭০]
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হিসেবে সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত নাযিল করেছেন। আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হওয়ার বিশেষ কারণ হলো এ আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে এবং আল্লাহর ১০টি গুণবাচক বাক্য রয়েছে। আর ইবলিস শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্যও আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে ইবলিস শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হওয়ার আরো একটা বিশেষ ফজিলত হলো হজরত আবু উমামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে , তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাঁধা থাকবে না।
[সুনানে নাসাঈ : ৯৪৪৮; তাবারানি : ৭৮৩২]
পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত সম্পর্কে হাদিসে আরো একটি বর্ণনা এসেছে। হজরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন—
হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসুল (সা.) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসি।
[ নাসাঈ]
পাঠকের সুবিধার্থে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত বা আয়াতুল কুরসি আরবি বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ দেওয়া হলো—
আয়াতুল কুরসি আরবি
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খলফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।
আয়াতুল কুরসির অর্থ
আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁকে সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।
পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত কোনটি?
পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হলো পবিত্র কুরআনের ২য় সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত। যা আমাদের কাছে 'আয়াতুল কুরসি' নামে পরিচিত। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতকে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি এবং কোন সূরায়?
পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত হলো সূরা বাকারাহ'র ২৮২ নম্বর আয়াত। এছাড়াও পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা বাকারাহ'র ঋণের আয়াত এবং সবচেয়ে বড় আয়াত ২৮২ নং আয়াত। ঋণ গ্রহণের ধারণাটি পবিত্র কুরআনে আয়াতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াতটিও সূরা বাকারাহ'য়।
আয়াতুল কুরসি সুরা বাকারার কত নং আয়াত?
আয়াতুল কুরসি সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত।পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত এবং ফজিলতপূর্ণ আয়াত হলো পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় ও দীর্ঘতম সূরা, সূরা বাকারাহ। এবং সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতই আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত।
আয়াতুল কুরসি শাব্দিক অর্থে - 'আয়াত' অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন এবং 'কুরসি' অর্থ চেয়ার বা আসন। এই আয়াতের 'কুরসি' শব্দ দিয়েই 'আয়াতুল কুরসি' নামকরন করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসি সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতটি পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ আয়াত।
শেষ কথা : পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত, পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত, কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা, কুরআনের দীর্ঘতম আয়াত, কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত এবং আয়াতুল কুরসি সুরা বাকারায় অবস্থিত। সূরা বাকারার আয়াত সংখ্যা ২৮৬, মাসহাফে এটি সূরা ফাতিহার পর দ্বিতীয় ক্রমে এর অবস্থান।
এ সূরাটি মদিনায় নাযিলকৃত সর্বপ্রথম সূরা। আসমান থেকে নাযিলকৃত শেষ আয়াতও এই সূরার। খালিদ বিন মা'দান বলেন, এ সূরার মর্যাদা, মহিমা, হুকুম-আহকাম ও উপদেশের আধিক্য ইত্যাদি কারণে একে ফুসতাতুল কুরআন (কুরআনের বসতি) বলা হয়। এ সূরাটি একেবারে নাযিল না হয়ে ধাপে ধাপে নাযিল হয়।