কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে

পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোচনায় অনেক জায়গায় ফেরেশতাদের নিয়ে আলোচনা এসেছে। ফেরেশতারা মহান আল্লাহর অন্যতম সৃষ্টি। যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নূর দিয়ে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—  কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে? ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত। তবে পবিত্র কুরআনে  পাঁচ জন ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 


 





কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে

ফেরেশতাদের আকৃতি কেমন

ফেরেশতা কিসের তৈরী ?


ফেরেশতা নূরের তৈরি। মানবজাতিকে সৃষ্টি করার আগেই মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নবী ও রাসূলগণের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতেন।




আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন—  


রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ফেরেশতাদের নুর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়াশূন্য অগ্নিশিখা থেকে এবং আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে ওই বস্তু থেকে যে সম্পর্কে তোমাদের বর্ণনা করা হয়েছে। 

[ সহীহ মুসলিম : ৭৩৮৫]






কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে


ফেরেশতাগণ শুধুমাত্র আল্লাহ তায়া’লার আদেশ পালন করে থাকেন।তারা কখনও আল্লাহর আদেশ পালন থেকে বিরত হয় না। এবং সবসময় আল্লাহর অনুগত হয়ে থাকেন। 



পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন—   



يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْۤا اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ  نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلٰٓٮِٕكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ  لَّا يَعْصُوْنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ



হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদের আদেশ করা হয়। 

[ সূরা তাহরিম, আয়াত : ৬]



ঈমানদারের জন্য তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোন সুযোগই নেই।




পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেন —  



وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰٓٮِٕكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْٓا اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكٰفِرِيْنَ



আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।

[সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৪]






যারা ফেরেশতার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়, তাদের ঈমান নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেন —  



يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْۤا اٰمِنُوْا بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَالْكِتٰبِ الَّذِىْ نَزَّلَ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَالْكِتٰبِ الَّذِىْۤ اَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ‌ؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللّٰهِ وَمَلٰٓٮِٕكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًاۢ بَعِيْدًا



হে মুমিনগণ! তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসুলের প্রতি এবং এই কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসুলের ওপর অবতীর্ণ করেছেন এবং ওই কিতাবের প্রতি যা পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসুল এবং পরকাল সম্বন্ধে অবিশ্বাস করে, নিশ্চয়ই সে সুদূর বিপথে বিভ্রান্ত হয়েছে।

[সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৬]




কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে ?— পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা  পাঁচ জন  ফেরেশতার নাম উল্লেখ করেছেন। এবং তাদের দায়িত্ব কর্তব্যের আলোচনাও  কুরআনে এসেছে। নিম্নে  কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে তা আলোচনা করা হলো—  



জিবরাঈল (আঃ) এর কাজ

জিব্রাঈল (আঃ) 


জিব্রাঈল (আঃ) মহান আল্লাহর বার্তা বাহক ফেরেশতার নাম। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ জিব্রাঈল (আঃ) এর নাম উল্লেখ করেছেন। 




আল্লাহ তায়া’লা বলেন—  


مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَمَلٰٓٮِٕکَتِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَجِبْرِيْلَ وَمِيْكٰٮلَ فَاِنَّ اللّٰهَ عَدُوٌّ لِّلْكٰفِرِيْنَ



যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের ও তাঁর রাসুলগণের এবং জিবরাঈলের ও মিকাইলের শত্রু সাজবে, নিশ্চয়ই আল্লাহও (এসব) কাফিরদের শত্রু।

[সূরা বাকারা, আয়াত : ৯৮]




সূরা শুয়ারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে তাঁকে ‘রুহুল আমিন’ অর্থাৎ সৎ-আত্মা উপাধিতে সম্বোধন করা হয়েছে।


অনুরূপভাবে সূরা মারিয়ামের ১৯ নম্বর আয়াতে ‘রসুলু রব্বিকি’ তথা তোমার রবের বার্তাবাহক উপাধিতে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন —  



‌قَالَ اِنَّمَاۤ اَنَا رَسُوْلُ رَبِّكِ ‌ ۖ   لِاَهَبَ لَـكِ غُلٰمًا زَكِيًّا



সে বলল, আমি তো তোমার প্রতিপালক-প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করিবার জন্য।

 [সূরা মারিয়াম, আয়াত : ১৯]




মিকাইল ফেরেশতার কাজ কি

মিকাইল (আ.) 


মিকাইল (আ.) এর কাজ হলো বৃষ্টি বর্ষণ ও উদ্ভিদ উৎপাদন করা। 


আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘মিকাইল আল্লাহর নৈকট্যশীল ও মর্যাদাবান ফেরেশতাদের একজন। তিনি বৃষ্টি ও উদ্ভিদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল।’

 [আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১০৫]




পবিত্র কুরআনে মিকাইল (আ.) এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।আল্লাহ তায়া’লা বলেন—   



مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَمَلٰٓٮِٕکَتِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَجِبْرِيْلَ وَمِيْكٰٮلَ فَاِنَّ اللّٰهَ عَدُوٌّ لِّلْكٰفِرِيْنَ



যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের ও তাঁর রাসুলগণের এবং জিবরাঈলের ও মিকাইলের শত্রু সাজবে, নিশ্চয়ই আল্লাহও (এসব) কাফিরদের শত্রু।

[সূরা বাকারা, আয়াত : ৯৮]





ফেরেশতা হারুত ও মারুত

হারুত ও মারুত (আ.) 


পবিত্র কুরআনে হারুত ও মারুত (আ.) এই দুই ফেরেশতার নাম একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। 




পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন—   




وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوا الشَّيٰطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمٰنَ‌‌ۚ وَمَا کَفَرَ سُلَيْمٰنُ وَلٰـكِنَّ الشَّيٰـطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَآ اُنْزِلَ عَلَى الْمَلَـکَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوْتَ وَمَارُوْتَ‌ؕ 



আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি; বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে জাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের ওপর।

[সুরা বাকারা, আয়াত : ১০২]


 




মালেক (আ.) 


মালেক (আ.) জাহান্নামের ব্যবস্থাপক ফেরেশতার নাম ।পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।




পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন—   



وَنَادَوْا يٰمٰلِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا  رَبُّكَ‌ؕ قَالَ اِنَّكُمْ مّٰكِثُوْنَ


তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদের শেষ করে দেন। সে বলবে, নিশ্চয়ই তোমরা অবস্থানকারী।

[সুরা যুখরুফ, আয়াত : ৭৭]




কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে ? সম্পর্কিত হাদিস 



সামুরাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন—  


নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসেছে। তারা বলল, যে অগ্নি প্রজ্বলিত করছিল সে হলো দোজখের তত্ত্বাবধায়ক মালেক আর আমি জিবরাঈল এবং ইনি মিকাঈল।’ 

[ সহীহ বুখারি : ৩২৩৬]





 কুরআনে কতজন ফেরেশতার নাম আছে উক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারি। 

Next Post Previous Post