মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য যে দোয়া পাঠ করবেন
অসুস্থ ব্যক্তি মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য যে দোয়া পাঠ করবেন— আজকে অনুচ্ছেদটি সে বিষয়ে। দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তির মাধ্যমও। রোগ-ব্যাধি ও বিপদাপদে দোয়াই আমাদের একমাত্র আশা-ভরসা। আমাদের সুস্থতা এবং অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। নবী-রাসূল পীর-পয়গম্বরদের জীবনে রোগ-ব্যধি ছিল। শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও কয়েক বার অসুস্থ হয়েছেন এবং আল্লাহর দয়ায় রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন।
মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য যে দোয়া পাঠ করবেন
অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে কারো জন্য অসন্তুষ্টি নয়। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন বান্দাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য যে দোয়া পাঠ করবেন তার বর্ণনা একাধিক বার এসেছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’
[ সহীহ বুখারি : ৫৬৪৫]
আল্লাহ আমাদের যেমন সুস্থ রাখেন, তেমনি রোগ-ব্যধি দিয়ে অনেক সময় পরীক্ষা নেন। কঠিন দুরবস্থায় আল্লাহকে কতটা স্মরণ করছি। অসুস্থ অবস্থায় ডাক্তার দেখানো সুন্নত কিন্তু ডাক্তার তখনই আমাদের রোগ থেকে সুস্থ করে তুলতে পারবে যখন আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য সাহায্য আসবে। তাই মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া পাঠ করতে হবে।
আমরা জানি মৃত্যু স্বাদ সকলকেই গ্রহণ করতে হবে।কিন্তু কখন, কিভাবে কোথায় কার মৃত্যু হবে তা কারো জানা নেই। তবে রোগমুক্তির দোয়া রাসূল (সাঃ) আমাদের শিখিয়ে গেছেন।
মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য যে দোয়া পাঠ করবেন—
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شَافِيَ إِلاَّ أَنْتَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রব্বান-নাসি মুজহিবাল বা’সি, ইশফি আনতাশ-শাফি, লা শাফিইল্লা আনতা শিফায়ান লা ইউগদিরু সুক্বমা।
অর্থ: হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী; আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ অবশিষ্ট না থাকে।
হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য যে দোয়া পাঠ করবেন সে সম্পর্কে আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়-ফুঁক করতেন।
[সহীহ বুখারি : ৫৭৪২]
রাসূল (সাঃ) কোন প্রকার খাদ্যদ্রব্য এবং পানীয়তে ফুঁ দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
রাসূলুল্লাহ (সা.) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।
[আবু দাউদ : ৩৬৮৬]
তবে খাদ্য আহারের মাধ্যমে রোগ মুক্তির কথা বলেছেন। কালোজিরা এবং মধু এর মধ্যে রয়েছে নেয়ামত যা সকল রোগ থেকে মুক্তি দেয়। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল (সাঃ) বলতে শুনেছি কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তি লাভের উপায়।
রোগী দেখার সময় কি দোয়া পড়তে হয়?
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া সুন্নত। আমাদের আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশী অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগী দেখার সময় কি দোয়া পড়তে হয় রাসূল (সাঃ) তা আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মৃত্যু আসন্ন নয় এমন কোনো রোগীকে দেখতে গেলে, তার সামনে এই দোয়া সাতবার পাঠ করবে। এর ফলে আল্লাহ তাকে (মৃত্যু আসন্ন না হলে) রোগ থেকে মুক্ত করবেন।
রোগী দেখার সময় যে দোয়া পড়তে হয়—
لاَ بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ
উচ্চারণ: লা-বা'সা ত্বহুরুন ইংশা-আল্লা-হ।
আসআলুল্ল-হাল আয্বীম রব্বাল আরশিল আয্বীম আই ইয়াশফিয়াক। ( এই দোয়াটি সাতবার পড়তে হবে)
অর্থ: বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। (আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন) ইনশাআল্লাহ্ এই রোগ (বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা হতে) পবিত্রতা সাধনকারী।
আরশের অধিপতি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনাকে সুস্থ করে তোলেন। [ সহীহুল বুখারি : ৩৬১৬; সুনানু আবি দাঊদ : ৩১০৬; জামিউত তিরমিজি : ২০৮৩]
অসুস্থ হলে কি দোয়া পড়তে হয়?
সুস্থতা আল্লাহ তায়া’লা পক্ষ থেকে অনেক বড় নিয়ামত। অসুস্থতা হলো আল্লাহর কাছ থেকে পাপ মুক্তির এবং আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তির বড়ো মাধ্যম।
কোন রোগে অসুস্থ হলে যে দোয়া পড়তে হয়—
আল্ল-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী, ওয়া আলহিক্বনী বিররফীক্বিল আ'লা-।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন আমার প্রতি এবং আমায় নিয়ে যান সর্বোচ্চ বন্ধুর সান্নিধ্যে।
বাবা মা অসুস্থ হলে কি দোয়া পড়তে হয়?
মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য হিরকের মতো কাজ করে। বাবা মা সন্তানের জন্য তাদের সুস্থতার জন্য যেমন দোয়া করেন। তেমনি আল্লাহ তায়া’লা সন্তানদেরকে ও বাবা মায়ের জন্য সুস্থতার জন্য দোয়া শিখিয়েছেন। ববা মায়ের ঋণ সন্তান কোন দিন পূর্ণ করতে পারবে না। তাই সন্তানদের বাবা মায়ের শান্তির জন্য পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা দোয়া নাযিল করেছেন।
বাবা মা অসুস্থ হলে যে দোয়া পড়তে হয় পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا
উচ্চারণ : রব্বির হামহুমা, কামা রব্বাইয়া-নি সাগিরা।
অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’
[সূরা বনি ইসরাইল,আয়াত : ২৪]
বিপদের দোয়া কি?
দোয়া ইউনুস
নবীজি (সাঃ) বিপদে পড়লে দোয়া ইউনুস পড়তে বলেছেন। নবী ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে বারবার এই দোয়া পড়েছিলেন। তখন আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
বিপদের দোয়া (দোয়া ইউনুস) —
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ : লা- ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন।
অর্থ : একমাত্র তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারী।
যদি কেউ দোয়া ইউনুস কয়েকবার পড়ে দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়। কেউ যদি বিপন্ন বা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহর রহমতে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়।