কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়
কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়- যাকাত হলো ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি প্রতি বছর ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে, তবে ওই সকল নারী-পুরুষের সম্পত্তির উপর যাকাত ফরজ হবে। আট শ্রেণির লোককে যাকাত দেওয়া যায়।
কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শর্তসাপেক্ষ আদায় করতে হয়। হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক করা হয়েছে । পবিত্র কুরআনে 'যাকাত' শব্দটি ৩২ বার এসেছে। 'সালাত' অর্থাৎ নামাজ শব্দটির পরে সবচেয়ে বেশি বার 'যাকাত' শব্দটি এসেছে। সাধারণত কোন মুসলিম ব্যক্তির নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ যাকাত দিতে হয়।
কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায় - আট শ্রেণির লোককে যাকাত দেওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে সূরা তাওবাহ'র ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়া’লা আট শ্রেণির লোককে যাকাত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন —
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسٰكِيْنِ وَالْعٰمِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّـفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغٰرِمِيْنَ وَفِىْ سَبِيْلِ اللّٰهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাব গ্রস্তও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাহাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাহাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। ইহা আল্লাহ্র বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[সূরা তাওবাহ, আয়াত : ৬০]
কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায় এ সম্পর্কে সূরা তাওবাহ'র ৬০ নং আয়াত অনুযায়ী যেসব শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায় তারা হলেন
১. ফকির : ফকির হলো এমন ব্যক্তি যার কাছে তার নিজের ও তার পরিবারের অর্ধেক বছর চলার মত সম্পদ নাই। অর্থাৎ ফকির বেশি দরিদ্র।
২. মিসকিন : মিসকীনের অবস্থা ফকিরের চেয়ে ভাল। মিসকীনের কাছে তাদের প্রয়োজনের অর্ধেক বা ততোর্ধ অংশ পূরণ করার মত সম্পদ আছে; তবে সম্পূর্ণ প্রয়োজন পূরণ করার মত সম্পদ নাই। তাদেরকে তাদের প্রয়োজন নিবারণের জন্য যাকাত দেয়া যাবে।
৩. যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মী : যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণকাজে নিয়োজিত কর্মচারী (যার অন্য কোন জীবিকা নেই)।
৪. নব্য মুসলিম যার ইমান পরিণত হওয়ার পথে আছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কোনো অমুসলিম ( তিনি আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে)।
৫. মুক্তিপণ ধার্যকৃত কৃতদাস।
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। ঋণী ব্যক্তি যিনি যাকাতের অর্থে ঋণ পরিশোধ করতে চান।
৭. আল্লাহর রাস্তায় ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ব্যক্তি (মুজাহিদ)।
৮. বিপদগ্রস্ত মুসাফির।
এই আট শ্রেণির লোককে যাকাত দেওয়া যাবে।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির মধ্যে যাকাত একটি। তবে যাকাত সবার উপর ফরজ নয়। যাকাত ফরজ হয় শর্ত সাপেক্ষে। কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর যাকাত দিতে হবে।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি হলো
✔️ পূর্ণ বছর সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।
✔️ নিজস্ব সম্পদ উৎপাদনশীল ও বর্ধনশীল হতে হবে।
✔️ বছর জুড়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
✔️ পূর্ণ বছরের মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত অর্থ-সম্পদ থাকলেই শুধু যাকাত ফরজ হবে।
✔️ যাকাত ফরজ হওয়ার আরেকটি শর্ত হলো ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
পূর্ণ বছরের মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে, বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরজ হয়। সকল প্রকার অর্থ-সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরজ হয় না।কেবলমাত্র সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়।
এছাড়াও ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরজ হয়। কেউ যদি গচ্ছিত সম্পদ কোন কাজের উদ্দেশ্যে বছর জুড়ে রেখে দেয় এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে সেই সম্পদের যাকাত ফরজ হয়।
যাকাত বন্টনের খাত কয়টি?
যাকাত বন্টনের খাত আটটি।