জোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে
যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে? যোহরের চার রাকাত নামায সুন্নতে মুআক্কাদাহ। আর সুন্নতে মুআক্কাদাহ পড়লে সাওয়াব হবে, না পড়লে গুনাহ হবে না। সকল আলেমগণ এ বিষয়ে একমত।
যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে
যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে না; তবে পড়লে সাওয়াব হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সুন্নত নামায সমূহ এবং যে কোন নফল নামায না পড়লে কোন গুনাহ হবে না। এমনকি যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে না পড়লেও গুনাহ হবে না।
তবে কেউ যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ কিংবা কোন সুন্নত নামায না পড়ে তাহলে গুনাহ হবেনা ঠিকই, কিন্তু বড় ধরনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই আমাদের উচিত গুনাহের কথা না ভেবে কিংবা গুনাহের ভয়ে নামায পড়া বা ছাড়ার চিন্তা না করে কোন নামায আদায়ে কতটা সাওয়াব হবে সে চিন্তা করা।
যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে কিনা এসব না ভেবে মুসলিম উম্মাদের রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -কে অনুসরণ করতে হবে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার জীবনে কখনো কোন সুন্নত নামায ছাড়েন নি। যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামায যদি কখনো সময়ের অভাবে আদায় করতে ব্যর্থ হতেন, তাহলে তা ফরজ নামাজের পরে পড়ে নিতেন।
যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ ছাড়াও নবীজি (সাঃ) পাঁচ ওয়াক্তের সকল সুন্নত নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। কেননা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সাথে যে জরুরি সুন্নত বা সুন্নতে মুআক্কাদাহ নামায রয়েছে সে বিষয়ে নবীজি (সাঃ) বলেছেন — যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্তের সুন্নতে মুয়াক্কাদাহগুলো নিয়মিত আদায় করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা কেবল তার মৃত্যু।
যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে এ সম্পর্কে হযরত উম্মে হাবীবা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকআত এবং এর পর চার রাকআত সুন্নাত আদায় করবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।
[ মুসনাদে আহমাদ : ২৬৭৭২; আবি দাউদ : ১২৬৯; তিরমিযি : ৪২৭; সুনানু নাসায়ি : ১৮১৪; ইবনে মাযাহ : ১১৬০]
যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজসহ সকল সুন্নত নামায আদায়ে নবীজিকে অনুসরণকারীরা অর্থাৎ দুনিয়ার সকল সাহাবি, তাবেয়ি, তাবে তাবেয়ি এ জন্যই এসকল সুন্নত নামায সারাজীবন নিয়মিত আদায় করেছেন।
আল্লাহ তায়া’লা পক্ষ থেকে যেগুলো আদায়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে অর্থাৎ ফরজ ফরজ কাজগুলো ছুটে গেলে তা পরবর্তীতে কাযা পড়ে নিতে হবে। তবে কোনো কারণবশত মাঝে মধ্যে যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ বা যে কোন সুন্নত নামায ছুটে গেলে তা কাজা আদায় করতে হয় না।
ফজরের সুন্নত না পড়লে কি গুনাহ হবে?
কেউ যদি কোন কারণবশত কিংবা নামাযের জন্য ঘুম থেকে উঠতে কিছুটা দেরি হওয়ার কারণে ফজরের ফরজ নামাযের আগের দু'রাকাত সুন্নত নামায পড়তে না পারে, তাহলে সে এই দুই রাকাত নামায সূর্যোদয়ের পরে পড়ে নিতে নিবে। তবে ফজরের সুন্নত না পড়লে গুনাহ হবে না, কিন্তু সে ফজরের সুন্নত না পড়লে তার ফজিলত ও সাওয়ার থেকে বঞ্চিত হবেন।
সুন্নত নামাজ পড়ার গুরুত্ব কি?
সুন্নত নামাজ পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি এবং ফজিলতপূর্ণ। নবীজি (সাঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্তের সুন্নতে মুয়াক্কাদাহগুলো নিয়মিত আদায় করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা কেবল তার মৃত্যু।' তবে সুন্নত নামাজ ছুটে গেলে গুনাহ হবে না। আল্লাহ তায়া’লা সবাইকে সুন্নত নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন।
শুধু ফরজ নামাজ পড়লে কি হবে?
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়লে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কেউ যদি সুন্নত বাদ দিয়ে শুধু ফরজ নামাজ পড়ে তাহলেও তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে তার সুন্নত নামাযের ফজিলত ও সাওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হবেন। যেহেতু নবীজি সুন্নত নামাযের গুরুত্ব দিয়েছেন, সেহেতু তার অনুসারীদেরও সুন্নত আদায়ে গুরুত্ব দেওয়া উত্তম। আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন।
সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ কত রাকাত?
পাঁচ ওয়াক্ত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ ১২ রাকাত। ফজরের ফরজ নামাজের আগে দুই রাকাত, যোহরের ফরয নামাযের আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের ফরজ নামাজের পরে দুই রাকাত এবং এশার ফরজ নামাজের পরে দুই রাকাত। মোট এই ১২ রাকাত নামায সুন্নতে মুআক্কাদাহ।