আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার
শরীয়তে শুধু মাত্র মা-বাবা, সন্তানের প্রতি সদাচরণের কথা বলা হয়নি ;বরং আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী এমনকি বিধর্মীদের প্রতিও সদাচারণের কথা বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কাফেরদের হাজারো আত্যাচারের পরেও তাদের প্রতি সদাচার করেছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের খোঁজখবর রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন।
আল্লাহ তায়া’লা বলেন—
তোমরা সতর্ক থাকো রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়দের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের পর্যবেক্ষক।
[সুরা নিসা, আয়াত : ১]
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) -তাঁর উম্মতদের আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার নিয়ে এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী করেছেন।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে।
[সহীহ বুখারি : ৬১৩৮]
বর্তমান সমাজে অনেক মুসলমানই পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও আত্মীতা-স্বজনের অধিকার ও আচার-আচরণ সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন।তারা আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার না করে উল্টো তাদের সঙ্গে মিলনের সেতুবন্ধকে ছিন্ন করে চলছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমার আত্মীয়রাই তো সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন না। আমি একাই এর জন্য দায়ী নই। কিন্তু এ বক্তব্য তাদের কোনো উপকারে আসবে না।
কারণ যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখবে, শুধু তার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে- এই যদি নীতি হয় তাহলে তা আল্লাহর জন্য হলো না, বরং তা হলো বদলা।
হজরত যুবাইর বিন মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীতার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’
[সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম]
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীতা আল্লাহতায়ালার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে বিচ্ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সময় এটা। আল্লাহতায়ালা বলেন, হ্যাঁ, তবে তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব এবং যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব? শুনে আত্মীয়তা বলল অবশ্যই। তখন আল্লাহতায়ালা বললেন, তোমার জন্য এরূপই করা হবে।
[সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম]
যারা আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার করে না এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে না, মহান আল্লাহ তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না।
হাদিসে বর্ণনায় এসেছে , ‘জ্ঞাতিবন্ধন আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে বলছে, যে আমাকে অবিচ্ছিন্ন রাখবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন রাখবেন।
আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করবেন।’
[রিয়াদুস সালেহিন : ৩২৮]
তাই আল্লাহর জন্য প্রতিটি মুমিনের উচিত আত্মীয় স্বজনের সাথে সদাচারণ করা এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের খোঁজখবর রাখা, সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা যাদের সঙ্গে সুব্যবহার করতে বলেছেন, তাদের মধ্যে মা-বাবার পরই নিকট আত্মীয়দের কথা উল্লেখ করেছেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন—
তোমরা ইবাদাত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কোরো না। আর সদ্ব্যবহার কর মা-বাবার সঙ্গে, নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকট প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী।
[সূরা নিসা, আয়াত : ৩৬]
আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার এবং সুসম্পর্কের পুরস্কার আল্লাহ তায়া’লা দুনিয়াতেও দেন। তা হলো রিজিকের প্রশস্ততা।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে।
[সহীহ বুখারি : ২০৬৭]
সুতরাং মুমিন মুসলমান সর্বদা তার আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর হক সম্পর্কেও সচেতন থাকে। তাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখে। তাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে। তাদের কাছ থেকে কষ্ট পেলে সবর করে। তাদের সাথে ভালো আচরণ করার জন্যে তাদের থেকে ভালো আচরণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না। ভালো আচরণের জন্যে তাদের থেকে কোনো বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাও প্রত্যাশা করে না। তারা শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের প্রতি সদাচার করে।