ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

আল্লাহ প্রেরিত নবী ও রাসূলগণের মধ্যে ইব্রাহিম (আঃ) মুসলিম উম্মাহের গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল। ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত— পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু সূরার মধ্যে আল্লাহ তায়া’লা ইব্রাহিম (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন।তিনি কুরআনে উল্লিখিত দৃঢ় প্রত্যয় নবীদের একজন। পবিত্র কুরআনে তার নামে একটি সূরাও রয়েছে। পুরো কুরআনে অনেকবার ইব্রাহিম (আঃ) নাম উল্লেখিত হয়েছে। ইসলাম ছাড়াও, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মেও ইব্রাহিম শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। আল্লাহর প্রতি ছিল তার দৃঢ় বিশ্বাস। 








ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহকে ভালোবেসে আল্লাহর নির্দেশে তার পুত্র সন্তান ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানী দেন। পিতা-পুত্রের আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহ এতটাই পছন্দ করেন যে, ইসলামে তার কার্যক্রম কে স্মরণ করে ঈদুল আযহা পালিত হয়। ইব্রাহিম (আঃ) ও তার শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) ইসলামে কুরবানি ও হজ্জের বিধান চালু করেন। ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত থেকে কিছু আয়াত আলোচনা করা হলো। 





ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত


আল্লাহ তায়া’লা ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল করেছেন। কুরআনে  বহুবার  ইব্রাহিম (আঃ) -এর কথা এনেছেন। আল্লাহ তায়া’লা  ইব্রাহিম (আঃ) -কে নানাভাবে পরীক্ষা করেছেন। প্রতিটি পরীক্ষায় সফলতার সাথে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন।



আল্লাহ বলেন— 

এবং (সেই সময়কে স্মরণ করো), যখন ইবরাহিমকে তাঁর প্রতিপালক কয়েকটি বিষয় দ্বারা পরীক্ষা করলেন এবং সে তা সব পূরণ করল।’ 

[সূরা : বাকারা, আয়াত : ১২৪]



হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর সকল নির্দেশ তাকওয়ার সাথে পালন করতেন। তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিজের শিশুপুত্র  ইসমাইলকে কুরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন। আর এই একই লক্ষ্যে হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে, শুধু তিনি নিজেই নন, তাঁর সন্তান ইসমাইল ও তাঁর বংশধররাও যেন ঐশী বিধানের অনুগত হয়। কারণ সমস্ত পূর্ণতা হলো আল্লাহর দাসত্বের মধ্যে এবং তাঁর একক সত্ত্বার ইবাদতের মধ্যে। অবশ্য ইবাদত হতে হবে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে, সব ধরনের কুসংস্কার ও বেদআত বা কু-প্রথা থেকে মুক্ত হয়ে। আর এ জন্যেই হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করেছেন যে— 



رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ 


(হযরত ইব্রাহীম ও ইসমাইল (আ.) বলেছেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হতে তোমার অনুগত এক উম্মত সৃষ্টি কর। আমাদেরকে ইবাদতের নিয়ম পদ্ধতি দেখিয়ে দাও এবং আমাদের ওপর ক্ষমা পরবশ হও৷ তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। 

[সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৮]



হযরত ইব্রাহিম (আঃ) -এর যুগে মানুষ ছিল মূর্তিপূজারী ও বস্তু পূজারী। তাঁর পরিবারের সবাই ছিল মূর্তিপূজায় লিপ্ত। কিন্তু তিনি  তাওহিদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ইব্রাহিম (আঃ) নবুয়ত লাভের পর স্বজাতিকে মূর্তি পূজা ত্যাগের আহ্বান জানান। তাওহিদের দাওয়াত ও প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতা করার কারণে নমরুদ ও তার পরিষদবর্গ তাকে আগুনে নিক্ষেপ করে। 



ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত- আল্লাহ তায়া’লা বলেন—  


তারা (একে অন্যকে) বলতে লাগল, তোমরা তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দাও এবং নিজেদের দেবতাদের সাহায্য করো, যদি তোমাদের কিছু করার থাকে।’ 

[সূরা :  আম্বিয়া, আয়াত : ৬৮]



নমরুদ ইব্রাহিম (আঃ) আগুনে নিক্ষেপ করলে স্বয়ং আল্লাহ তাকে হেফাজত করেন এবং নমরুদদের শাস্তি দেন।



পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন—  


(সুতরাং তারা ইব্রাহিম (আঃ) -কে আগুনে নিক্ষেপ করল) এবং আমি বললাম, হে আগুন, ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং ইব্রাহিমের পক্ষে শান্তিদায়ক হয়ে যাও। তারা ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে এক দুরভিসন্ধি আঁটল; কিন্তু আমি তাদেরই করলাম মহা ক্ষতিগ্রস্ত। 

[সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৬৯,৭০]



আল্লাহর নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গেই আগুন নিভে যায়। অগ্নিকুণ্ড হলো পুষ্প উদ্যান।অতপর ইব্রাহিম (আঃ) নিরাপদে আর নিশ্চিন্তে বসে রইলেন সেই উদ্যানে।




ইব্রাহিম (আঃ) স্বজাতির চরম বিরোধিতা ও শত্রুতার মুখে পতিত হয়। আল্লাহ তায়া’লা ইব্রাহিম (আঃ) -কে হিজরত করার নির্দেশ দেন। তিনিও চিরদিনের জন্য মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। 



পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন—  


ইবরাহিম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের দিকে হিজরত করছি। নিশ্চয়ই তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। অর্থাৎ আমার প্রতিপালকের সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

[সূরা আনকাবুত, আয়াত : ২৬]



ইব্রাহিম (আঃ) পথিমধ্যে বহু প্রতিকূলতা ও ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে সুদূর সিরিয়ায় পৌঁছালেন। সিরিয়ার অনুকূল পরিবেশ সুন্দর আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করল। তিনি ভাবলেন, হয়তো এটাই তার সফরের মঞ্জিল। দাওয়াতের জন্য এটাই উর্বর জমিন। কিন্তু না, আল্লাহ নির্দেশ দিলেন এমন এক ভূখণ্ডে হিজরত করতে, যেখানে গাছপালা পানি ও প্রাণীর কোনো চিহ্ন নেই। সেটা ছিল পবিত্র মক্কা ভূমি। 



আল্লাহ তায়া’লা ইব্রাহিম (আঃ) কে সেখানেই স্ত্রী আর শিশুসন্তানকে রেখে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই সিরিয়ার দিকে রওন হলেন। হাজেরা (আঃ) তাঁকে চলে যেতে দেখে কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এই জনমানবহীন প্রান্তরে আমাদের একা রেখে কোথায় যাচ্ছেন! ইব্রাহিম (আঃ) কোনো উত্তর দিলেন না। এরপর তিনি আবারও তার প্রিয় স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর কোনো নির্দেশে যাচ্ছেন? ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, হ্যাঁ! হাজেরা খুশি মনে বললেন, ঠিক আছে, যিনি আপনাকে চলে যেতে বলেছেন তিনি আমাদের ধ্বংস করতে পারেন না।


ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে বহুবার। তার থেকে কয়েকটি আয়ত নিয়ে আলোচনা করলাম। পরবর্তীতে আরো কিছু আলোচনা নিয়ে আসবো, ইনশাআল্লাহ! 

Next Post Previous Post