সর্বপ্রথম কোথায় কুরআন নাযিল হয়
সর্বপ্রথম কোথায় কুরআন নাযিল হয়?
সর্বপ্রথম কুরআন নাজিল হয় হেরা গুহায়। তখন রাসূল (সা:) সেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধ্যান মগ্ন ছিলেন।
মুসলিম উম্মাহের শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা:) এর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে জিব্রাইল (আঃ)-এর ওহীর মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে অবতীর্ণ হয়।
সর্বপ্রথম কোথায় কুরআন নাযিল হয়
পবিত্র কোরআন নাজিলের ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহ তা'আলা হযরত মুহম্মদ (সা:) কে স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (আ:) হতে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা:) এর উপর ওহী নাজিলের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি স্বপ্নে যা দেখতেন তা দিনের আলোর মতো তাঁর জীবনে প্রতিভাত হতো।
হযরত জিব্রাইল (আ:) এর মাধ্যমে ওহী প্রাপ্তির আগে আস্তে আস্তে তিনি নির্জনতা প্রিয় হয়ে ওঠেন, হেরা গুহায় নিভৃতে আল্লাহ তাআলার ধ্যানে তিনি মশগুল হয়ে পড়েন এবং বিশাল সৃষ্টি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন।
খাবার পানি শেষ হয়ে গেলে সেসব নেয়ার জন্যেই তিনি শুধু বাড়ি যেতেন। মাঝে মধ্যে রাসূল (সাঃ) অতি প্রিয় সহধর্মিণী হযরত বিবি খাদিজা (আ:) উনাকে হেরা গুহায় খাবার দিয়ে আসতেন।
পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাযিল হয়।
একদিন জিবরাইল (আ:) হযরত মুহম্মদ (সা:) এর কাছে এসে গভীর কণ্ঠে তাঁকে বলেন ‘ইকরা‘ পড়ুন। প্রিয় নবী (সা:) বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। উদ্বেলিত কণ্ঠে তাকে বললেন ‘আমি তো পড়তে জানি না’।
জিবরাইল (আ:) তখন হুজুরে পাক হযরত মুহম্মদ (সা;) কে বুকে চেপে ধরে আবার বললেন , পড়ুন। তৃতীয় বার যখন জিবরাইল (আ:) তাঁকে বুকে আলিংগন করে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন!
তখন রাসূল (সা:) ওহীর প্রথম পাঁচটি আয়াত পড়লেন।
قۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ (١) خَلَقَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مِنۡ عَلَقٍ (٢) ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ (٣) ٱلَّذِى عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ (٤) عَلَّمَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مَا لَمۡ يَعۡلَمۡ (٥)
সর্বপ্রথম অবতীর্ণ আয়াত হ’ল সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত-
(১) ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (২) ‘সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে’ (৩) ‘পড় এবং তোমার প্রভু বড়ই দয়ালু’ (৪) ‘যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দান করেছেন’ (৫) ‘তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না’
(আলাক্ব ৯৬/১-৫)
বুখারী হা/৪৯৫৩, মুসলিম হা/১৬০, মিশকাত হা/৫৮৪১; ফাৎহুল বারী ১/২৩, হা/৩)।
তারপর সাথ সাথে হযরত জীবরাঈল (আ:) সেখান থেকে চলে গেলেন।
আর সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত সম্পর্কে মতভেদ থাকলেও সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হ’ল- সূরা বাক্বারা এর সর্বশেষ ২৮১ নং আয়াত-
وَاتَّقوا يَومًا تُرجَعونَ فيهِ إِلَى اللَّهِ ۖ ثُمَّ تُوَفّىٰ كُلُّ نَفسٍ ما كَسَبَت وَهُم لا يُظلَمونَ
‘আর তোমরা ভয় কর সেই দিনকে, যেদিন তোমরা পুনরায় ফিরে যাবে আল্লাহর কাছে। অতঃপর প্রত্যেকেই তার কর্মফল পুরোপুরি পাবে। আর তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’।
শেষোক্ত আয়াত সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী বিভিন্ন বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন, এটিই হ’ল সর্বাধিক পরিচিত, বহু সূত্রে বর্ণিত, সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। যা রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর ৭ বা ২১ দিন পূর্বে নাযিল হয় (তাফসীর বাক্বারাহ ২৮১ আয়াত)। ইবনু হাজার (রহঃ)ও এটাকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ বলে মত পোষণ করেছেন (ফাৎহুল বারী হা/৪৩৭৮-এর পূর্বে, ৮/৩১৭)।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিত -
✔️ ৬১০ খ্রিস্টাব্দ ও রমজান মাসের ক্বদরের রজনীতে হেরা পর্বতের গুহায় সর্বপ্রথম কুরআন অবতীর্ণ হয়।
✔️ অবতীর্ণের মোট সময়কাল - ২২ বছর পাঁচ মাস ১৪ দিন।
✔️ প্রথম নাজিলকৃত পূর্ণ সূরা হলো - সূরা ফাতিহা।
✔️ সর্বপ্রথম নাজিলকৃত কুরআনের আয়াত হলো - সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচ আয়াত।
✔️ কুরআনের প্রথম শব্দ হলো - ‘ইকরা’—তুমি পড়ো।
✔️ কুরআনের সর্বশেষ নাজিলকৃত সূরা হলো- সূরা আন-নসর।
✔️ সর্বশেষ নাজিলকৃত আয়াত হলো _ সূরা আল-বাকারা - এর ২৮১ নম্বর আয়াত।
✔️ কুরআন নাজিল শেষ হয় হিজরি ১১ সালের সফর মাসে।
✔️ কুরআনের সর্ববৃহৎ সূরা হলো_ সূরা আল - বাকারা। এর আয়াত সংখ্যা ২৮৬।
✔️কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা হলো সূরা আল - কাওসার। এর আয়াত সংখ্যা ৩।
✔️পবিত্র কুরআনের মোট সূরা ১১৪টি।
এর মধ্যে মাক্কী সূরা (হিজরতের আগে বর্ণিত) ৯২টি, মাদানী সূরা (হিজরতের পরে বর্ণিত) ২২টি।
✔️ কুরআনে মোট রুকু সংখ্যা - ৫৪০টি।
✔️প্রসিদ্ধ অভিমত অনুসারে কুরআনের মোট আয়াত ছয় হাজার ৬৬৬টি। কিন্তু গবেষকদের মতে মোট ছয় হাজার ২৩৬টি।
✔️ কুরআনের আয়াতের ধরন—
🗣️ আদেশসূচক আয়াত এক হাজার,
🗣️ নিষেধসূচক এক হাজার,
🗣️ সুসংবাদসূচক এক হাজার,
🗣️ ভীতি প্রদর্শনসূচক এক হাজার,
🗣️ কাহিনীমূলক এক হাজার,
🗣️ দৃষ্টান্তমূলক এক হাজার,
🗣️ হালালসংক্রান্ত ২৫০,
🗣️ হারামসংক্রান্ত ২৫০,
🤲 দোয়া, জিকির ও তাসবিহসংক্রান্ত ১০০টি।
✔️ কুরআনের মোট শব্দ সংখ্যা - ৮৬ হাজার ৪৩০টি।
✔️ কুরআনের মোট অক্ষর তিন লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৩৩টি, মতান্তরে তিন লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৭০টি, মতান্তরে তিন লক্ষ ৫১ হাজার ২৫২টি।
✔️ কুরআনের মোট মনজিল - ৭টি এবং পারা - ৩০টি।
✔️ কোরআনের মোট হরকত—জের ৩৯ হাজার ৫৮২, জবর ৫২ হাজার ২৩৪, পেশ হলো আট হাজার ৮০৪, জজম এক হাজার ৭৭১, নুকতা এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৮১, তাশদিদ এক হাজার ৪৫৩, ওয়াকফ্ ১০ হাজার ৫৬৪, মাদ এক হাজার ১৭১ ও আলিফ মামদুদাহ ২৪০টি।
✔️ কুরআনে হরফের সংখ্যা—আলিফ ৪৮ হাজার ৪৭৬ বা ১১ হাজার ৪৪২, তা ১০ হাজার ১৯৯, ছা এক হাজার ২৭৬, জিম তিন হাজার ২৭৩, হা তিন হাজার ৯৭৩, খা দুই হাজার ৪৪৬, দাল পাঁচ হাজার ৬৪২, জাল চার হাজার ৬৭৭, রা ১১ হাজার ৭৯৩, জা এক হাজার ৫৯৩, সিন এক হাজার ৮৯১, শিন দুই হাজার ২৫৩, ছোয়াদ দুই হাজার ১৩, দোয়াদ এক হাজার ৬০৭, তোয়া এক হাজার ২৭৭, জোয়া ৮৪২, আইন ৯ হাজার ২২০, গাইন দুই হাজার ১০৮, ফা আট হাজার ৪৯৯, ক্বাফ ছয় হাজার ৮১৩, কাফ ৯ হাজার ৫০২, লাম ৩৩ হাজার ৪৩২, মিম ২৬ হাজার ৫৬০, নুন ৪৫ হাজার ১৯০, ওয়াও ২৫ হাজার ৫৩৬, হা ১৯ হাজার ৭০, লাম আলিফ চার হাজার ৭২০, ইয়া ৪৫ হাজার ৯১৯টি।
✔️ সর্বপ্রথম কুরআনে নুকতা ও হরকত প্রবর্তন করেন আবুল আসওয়াদ দুয়াইলি, মতান্তরে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।
✔️ হানাফি মাজহাব মতে, কোরআনে তিলাওয়াতে সিজদা ১৪টি / মতান্তরে ১৫টি এবং সাকতার সংখ্যা চারটি।
✔️ কুরআনে নবী ও রাসূলের নাম এসেছে ২৫ জনের। ফেরেশতার নাম এসেছে চারজনের। শয়তান শব্দটি এসেছে ৮৫ বার, ইবলিস এসেছে ১১ বার। জ্বিনজাতির প্রসঙ্গ এসেছে ৩২ বার।
✔️ নবীদের মধ্যে পবিত্র কুরআনে সবচেয়ে বেশি এসেছে মুসা (আঃ) -এর নাম। তার নাম এসেছে ১৩৫ বার।
✔️ কুরআনে কাফিরের নাম আছে - ৬ জনের।
✔️ কুরআনে বিসমিল্লাহ নেই - সূরা আত-তওবা।
✔️ কুরআনে বিসমিল্লাহ দুইবার এসেছে - সূরা আন- নামল।
✔️ কুরআনে বর্ণিত একজন সাহাবি হজরত জায়েদ (রা.)।
✔️কুরআনে একমাত্র নারীর নামে সূরা নাজিল হয়েছে - মারইয়াম (আঃ)।
✔️কুরআনের প্রথম ওহী লেখক জায়েদ বিন সাবেত (রা.)।
✔️ কুরআনের মুখপাত্র হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস।
✔️ কুরআনকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন- হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে।
✔️ কুরআনের প্রথম সংকলক - হজরত ওসমান (রা.)।
✔️ কুরআনের প্রথম ও প্রধান তাফসিরবিদ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)।