মজলিস বা তালিম শুরুর দোয়া ও মজলিস বা তালিম শেষের দোয়া কি
সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে মজলিস, তালিম, সভা এবং বৈঠকে মানুষ সমবেত হয়। এটা হতে পারে দুনিয়া কিংবা দ্বীনি যে কোন বিষয়ের মজলিস, তালিম বা বৈঠক।
মুসলমানদের মজলিস বা তালিম শুরুর দোয়া ও মজলিস বা তালিম শেষের দোয়া সম্পর্কে ইসলামে কিছু বিধি-বিধান রয়েছে।
ইসলামের বিধান অনুযায়ী মজলিস বা তালিম শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা , রাসুল (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করা , এবং সালাম দেওয়া।
ইসলামে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সালাম বিনিময় বা শান্তি বিনিময় করা। যেকোনো মজলিস বা তালিম বা বইঠকের শুরুতে এবং শেষে সালাম দেওয়া সুন্নত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমাদের কেউ মজলিসে উপস্থিত হলে যেন সালাম দেয় এবং মজলিস হতে বিদায়ের সময়ও যেন সালাম দেয়। প্রথম সালাম শেষ সালামের চেয়ে জরুরী নয়।
(আবু দাউদ : ৫২০৮)
যে মজলিসে বা তালিমে বা বৈঠকে আল্লাহর স্মরণ বা আল্লাহর জিকির হয় না সে মজলিসে বা তালিমের বা বৈঠকে লোক সকল মৃত গাধার দেহের উপর সমবেত হয় এবং তাদের আক্ষেপ হবে। মজলিস শুরু করার সময় এবং মজলিস শেষে দোয়া অর্থাৎ যিকির ও রাসূল (সাঃ) এর নামে দরূদ পাঠ করা সুন্নত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসূল (সাঃ) বললেন, 'কোন কওমের লোকেরা কোন সমাবেতে একত্রিত হওয়ার পর চলে যাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ না করেই চলে গেলে তা যেন মৃত গাধার দেহ। আর তা তাদের জন্য পরিতাপের কারণ হবে।
( আবু দাউদ : ৪৮৫৭)
যারা মজলিসে বসে আছে অথচ আল্লাহর জিকির করে না তাদের সম্পর্কে হাদিস -
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেন , যেসব লোক মজলিসে বসা অবস্থায় আল্লাহর যিকির করেনা এবং তাদের নবীর উপর দরূদও পাঠ করে না, তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিরাশ হবে। আল্লাহ চাইলে তাদেরকে আজাবও দিতে পারেন অথবা মাফও করতে পারেন। (দা , বা)
আবু ঈসা বলেন , এ হাদিসটি হাসান। আবু হুরায়রা (রাঃ) -রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে এটি অন্যভাবেও বর্ণিত হয়েছে।
মজলিস বা তালিম শুরুর দোয়া
رَبِّ اغْفِرْلِيْ ، وَتُبْ عَلَيَّ ، اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الغَفُور
উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলী, ওয়াতুব 'আলাইয়া, ইন্নাকা আংতাত তাওওয়া-বুল গফূর।
অর্থ : হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। আপনিই তো তাওবা কবুলকারী, ও ক্ষমাশীল।
(তিরমিজি : ৩৪৩৪)
রাসূল (সাঃ) -এর আল্লাহর যিকির না করেই কারো মজলিস হইতে উঠে যাওয়া অপছন্দনীয় ।
(আবু দাউদ, তিরমিজি)
মজলিস বা তালিম শেষের দোয়া
মজলিস বা তালিম বা বৈঠক দোয়া ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে শেষ করতে হয়।মজলিস বা তালিম বা বৈঠকের কাফফারা হলো- সবশেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর গুণগান ও প্রশংসা করা।
রাসূল (সাঃ) যেভাবে কাফফারা আদায় করতে বলেছেন -
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) করেছেন, কিছু বাক্য যা কোনো ব্যক্তি মজলিস থেকে উঠার সময় তিনবার উচ্চারণ করলে তা তার ঐ মাজলিসের কাফফারা হবে। আর যদি উক্ত বাক্যগুলো কোনো উত্তম মজলিসে ও যিকিরের মজলিসে পাঠ করে তাহলে পুস্তিকায় সীল মোহর করার মতই তা তার জন্য স্থায়িত্ব লাভ করে।
বাক্যগুলো হলো-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা; লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু বারযাহ আল-আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন -
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা; আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা; আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনার প্রশংসা পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। সেই সাথে আপনার কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাইছি এবং তাওবাও করছি আপনারই কাছে।
(তিরমিজি : ৩৪৩৩)
আয়িশা (রাঃ) বলেন, 'নবীজি যখনই কোন মজলিসে বসেছেন, অথবা কুরআন তিলাওয়াত করেছেন, অথবা সালাত আদায় করেছেন, তখনই কিছু বাক্য (উপরিউক্ত বাক্যগুলো) পাঠ করার মধ্য দিয়ে তা সুসম্পন্ন করেছেন।'
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসূল সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি এমন সভায় বসে, যাতে খুব বেশি ভুল হয়, অতঃপর যদি উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে তাহলে উত্তম মজলিসে কৃত অপরাধ তার জন্য ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
(তিরমিজি : ৩৭৬২)
অন্য বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) আরও বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো স্থানে বসলো অথচ আল্লাহকে স্মরণ করলো না; তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা। আর যে ব্যক্তি কোথাও শয়ন করার পর আল্লাহর নাম নিলো না তার জন্যও আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা।’
(আবু দাউদ, নাসাঈ)