পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত - নামাজ সম্পর্কে হাদিস

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত মুসলিম উম্মাহ এর জীবনে অপরিসী। ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে সালাত কালিমা শাহাদতের স্বীকৃতির পরই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। 


রাসূল (সাঃ) নামাজ (সালাত) ব্যতীত অন্য কোনো ইবাদত পরিত্যাগকারীকে কাফির সাব্যস্ত করেন নি। আর শুধু সালাত কেন? যে কোনো ইবাদত অস্বীকার করলেও কাফির হয়ে যাবে। অতএব এক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সালাত পরিত্যাগকারীই কাফির। 


প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ফরজ করা হয়েছে। নামাজ সম্পর্কে  কুরআন ও হাদিসে একাধিক বাণী বর্ণিত হয়েছে। 





পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত -  নামাজ সম্পর্কে হাদিস

ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের উপর কালিমার পরেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করেছেন। নামাজ ত্যাগকারীর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।


মুসলমানদের জীবনে মৌলিক পাঁচটি ফরজ বিধানের দ্বিতীয় টি হল নামাজ। রাসূলুল্লাহ সাঃ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময়ও তার উম্মতের উদ্দেশ্যে বারবার বলেছেন- সালাত, সালাত, সালাত....


সুতরাং এর থেকেই বোঝা যায় প্রতিটি মুসলমানের জীবনে নামাজের / সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত কতটা।


নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত -  নামাজ সম্পর্কে হাদিস ও কুরআনের আলোচনা দেওয়া হয়েছে।



নামাজ / সালাত (الصلاة)

নামাজকে আরবীতে 'সালাত' (الصلاة) বলা হয়। সালাত (الصلاة) আরবি শব্দ যার অর্থ  -প্রার্থনা, দোয়া, প্রশংসা বা  দগ্ধ করা। নামাজ বৈশাচিক প্রবৃত্তিকে দগ্ধ করে।


প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্য দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ফরজ করা হয়েছে। নামাজ হচ্ছে দোয়া ও প্রার্থনা। যা তাকবীর, তাসবীহ, তাহমীদ, এস্তেগফার এবং দরূদ ইত্যাদি সহকারে আল্লাহর কাছে সবিনয় নিবেদন। 



মানুষ তিনটি জিনিস - শরীর, প্রাণ বা জীবনী শক্তি এবং আত্মা দ্বারা গঠিত। মৃত্যু শরীর ও প্রাণকে নিঃশেষ করে দেয় আত্মা অমর ও অক্ষয়। এ আত্মাই প্রকৃত মানুষ।শরীর ও প্রাণের খোরাক বা খাদ্য। আত্মার খোরাক নামাজ ও অন্যান্য ইবাদাতে লব্ধ পুণ্য। 



ইসলামের সকল ফরয ইবাদত জিব্রাঈল (আঃ) -এর মাধ্যমে  নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর উপর ফরয করা হয়েছে।

কিন্তু নামাজ /সালাতের জন্য রাসূল (সাঃ) -কে আল্লাহর নিকট নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে কথপোকথন করেন এবং তাঁর প্রতি (পঞ্চাশ) ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন। অতঃপর তা থেকে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত ফরজ রাখা হয় যার নেকী ৫০ ওয়াক্তেরই সমান। 



কালিমার সাক্ষ্য দেওয়ার পর সালাতই ইসলামের অধিকতর গুরুত্ব ও তাগিদপূর্ণ রুকন  বা ভিত্তি / স্তম্ভ এবং ইসলামের সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিকতা, প্রতীক ও উত্তম ইবাদত।

 এ জন্যেই আল্লাহ তা‘আলা সালাতকে ঈমান নামে অভিহিত করেছেন।


নিশ্চয়ই নামাজ/সালাত অশ্লীলতা ও অসৎকে দূর করে।  


পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআনের বাণী সমূহ  -


وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَٰنَكُمۡ


“আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমান (সালাত)-কে নষ্ট করে দিবেন।” 

(সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪৩)


✔️ আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,


رَبِّ ٱجۡعَلۡنِي مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي 


“হে আমার রব! আমাকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্যে থেকেও।” 

(সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪০)


✔️ এবং ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,


وَأَوۡصَٰنِي بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱلزَّكَوٰةِ مَا دُمۡتُ حَيّٗا 


“এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে।”

 [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩১]


✔️ এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,


وَكَانَ يَأۡمُرُ أَهۡلَهُۥ بِٱلصَّلَوٰةِوَٱلزَّكَوٰةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِۦ مَرۡضِيّٗا 


“সে তার পরিজনবর্গকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তার রবের সন্তোষভাজন।” 

(সূরা মারইয়াম, আয়াত : ৫৫)


✔️ সালাত বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার মাধ্যম।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন -


وَٱسۡجُدۡۤ وَٱقۡتَرِب


“আর সিজদাহ কর ও (আমার) নিকটবর্তী হও।” 

[সূরা আল-‘আলাক, আয়াত: ১৯]


✔️ সালাতের মধ্যে রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন আত্মিক প্রশান্তি-আরাম এবং চক্ষু শীতলতা। 

আল্লাহ বলেন -


 أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ


“জেনে রাখ! আল্লাহর যিকিরেই আত্মা প্রশান্ত হয়।” 

[সূরা আর-রা‘দ, আয়াত : ২৮]


✔️ সালাত আল্লাহর যিকির বরং সালাত আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রবর্তন করা হয়েছে। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন -


وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ


“আমার যিকিরের (স্মরণের) জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা কর।”

 [সূরা ত্বাহা, আয়াত : ১৪]


✔️ সালাত পরিত্যাগকারী হলো আল্লাহর যিকির (সালাত) বিমুখ, আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর যিকির থেকে বিমুখদের জন্য তার জীবন-যাপন সংকুচিত করার ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ  বলেন-


وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ 


“যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্য তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” 

[সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১২৪]


✔️ সালাত মুসলিমের ইহকাল ও পরকালের কাজ কর্মে সহায়ক। 

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন-


وَٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِ


“তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।” 

[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৫]


✔️ মুসলিম যখন কোনো কাজের মনস্থ করবে সে মহিমান্বিত আল্লাহর স্মরণাপন্ন হবে যাঁর হাতে রয়েছে সব কিছুর ক্ষমতা, যিনি কোনো ব্যাপারে বলেন হয়ে যাও, আর তা হয়ে যায়, যিনি আর্ত অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূর করেন। 

আল্লাহ তা‘আালা বলেন-


أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ


“নাকি তিনি যিনি অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন?” 

[সূরা আন-নামল, আয়াত : ৬২]


✔️ সালাতে রয়েছে ইহকাল ও পরকালের সফলতা। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ -

 ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ -


“অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে। 

যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্র।” 

[সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ১-২]



✔️ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,


قَدۡ أَفۡلَحَ مَن تَزَكَّىٰ- 

 وَذَكَرَ ٱسۡمَ رَبِّهِۦ فَصَلَّىٰ -


“নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে যে পবিত্রতা অর্জন করে, এবং তার রবের নাম স্মরণ করে ও সালাত আদায় করে।” 

[সূরা আল-আ‘লা, আয়াত: ১৪-১৫]


আয়াতে উল্লিখিত “ফালাহ” শব্দটি এমন ব্যাপক যার অর্থ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বুঝায়।



✔️ সালাতের মধ্যে রয়েছে রুযীর প্রশস্ততা। 

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন-


وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَاۖ لَا نَسۡ‍َٔلُكَ رِزۡقٗاۖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكَۗ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلتَّقۡوَىٰ 


“এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও আর তাতে অবিচল থাক, আমরা তোমার নিকট কোনো রুযী চাই না, আমরাই তোমাকে রুযী দেই এবং শুভ পরিণাম তো তাকওয়াধারীদের জন্য।” 

[সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১৩২]






ইবন কাসীর রহ. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, “অর্থাৎ যদি সালাত প্রতিষ্ঠা কর এমনভাবে তোমার নিকট রুযী আসবে যার তুমি ধারণাও করতে পারবে না।”




 ✔️ সালাত আত্মার যাকাত, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। সালাত অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বাঁচার এক দুর্ভেদ্য দূর্গ। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন -


ٱتۡلُ مَآ أُوحِيَ إِلَيۡكَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ


“তুমি পাঠ কর কিতাব থেকে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা কর, সালাত অবশ্যই অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” 

[সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪৫]




✔️ নামাজ /সালাত ইহকাল ও পরকালে মুমিনদের জন্য দৃঢ়তা ও স্থিরতা আনে।  অতএব, সালাত আদায়কারীর যখন সুখ আসে তখন সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আর তা তার জন্য উত্তম এবং যখন কোনো বিপদ দেখা দেয় তখন ধৈর্য ধারণ করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু বেনামাযীর অবস্থা এর বিপরীত। উক্ত অবস্থায় সে হা-হুতাশ ও অতি কৃপণতা শুরু করে। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন- 


إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ خُلِقَ هَلُوعًا( ١٩) إِذَا مَسَّهُ ٱلشَّرُّ جَزُوعٗا)(٢٠) وَإِذَا مَسَّهُ ٱلۡخَيۡرُ مَنُوعًا (٢١) إِلَّا ٱلۡمُصَلِّينَ)(٢٢) ٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَاتِهِمۡ دَآئِمُونَ( ٢٣)


“মানুষ তো সৃজিত হয়েছে অতিশয় অস্থিরচিত্ত রূপে। যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে তখন সে হা-হুতাশ করে। আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে, সে অতি কৃপণ হয়। তবে সালাত আদায়কারী ব্যতীত। যারা তাদের সালাতে সদা প্রতিষ্ঠিত।”

 [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ১৯-২৩]




✔️ সালাত আদায়ের ফলে আল্লাহ তা‘আলার ভালবাসা অর্জন হয়। 
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-


وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ


“আল্লাহ বেশি বেশি পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন।”
 
[সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৮]




✔️ নামাজ /সালাত আদায়কারী ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা পবিত্রতা অর্জন করা সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য একটি শর্ত।


আল্লাহ তা‘আলার বাণী


فَوَيۡلٞ لِّلۡمُصَلِّينَ(٤) ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ (٥) 


“সুতরাং দুর্ভোগ (‘ওয়াইল’ জাহান্নামের একটি স্থান) সেই সালাত আদায়কারীদের যারা তাদের সালাত সম্পর্কে উদাসীন।” 

[সূরা আল-মাউন, আয়াত: ৪-৫]




✔️ সালাতের জন্য রয়েছে নির্ধারিত ওয়াক্ত। শর‘ঈ ওযর ব্যতীত নির্ধারিত ওয়াক্ত নষ্ট করা যাবে না। 

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন-


إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا


“নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” 

[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]








পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্পর্কে হাদিস সমূহ-


✔️ যে ব্যক্তি সকালের (ফজরের) সালাত আদায় করল সে আল্লাহর জিম্মায় (নিরাপত্তায়), কেউ যেন আল্লাহর এ জিম্মাদারী নষ্ট না করে। যে কেউ তাকে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন এবং তাকে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে অধোমুখে নিক্ষেপ করবেন।”

 (সহীহ মুসলিম)



✔️ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমু'আ হতে অন্য জুমু'আ পর্যন্ত , এক রমজান হতে অন্য রমজান পর্যন্ত, এ সময়ের মধ্যে বড় পাপ ছাড়া যে পাপ করা হয়, তার ক্ষতিপূরণ বা কাফফারা করে। 

(বুখারী, মুসলিম)



✔️ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, "জানিয়ে দাও ( সবাইকে) যে , তোমাদের মধ্যে যদি কোন ব্যক্তির ঘরের নিকট নদী থাকে এবং দৈনিক যদি সে পাঁচবার তাতে গোসল করে তার শরীরে কি ময়লা থাকে?" সাহাবারা বলল, "না, থাকতে পারে না। " তিনি বললেন, "পাঁচবার নামাজের উপমাও এরূপ। আল্লাহ তার সকল পাপ মুছে ফেলে। "

(বোখারী , মুসলিম)



✔️ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন, যদি মানুষ জানতো যে,  আযানের এবং নামাজের প্রথম সারিতে কি পূণ্য আছে এবং যদি তারা তা লটারি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা না পেত, তবে তারা নিশ্চয়ই ভাগ্য খেলা খেলত। যদি তারা জানতো যে, জোহরের নামাজের কি পুণ্য রয়েছে, তবে নিশ্চয়ই এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। যদি তারা জানতো যে, ইশা এবং ফযরের নামাজে কি পুণ্য রয়েছে, তবে নিশ্চয়ই তার জন্য বুকে হেটে আসত।

(বুখারী, মুসলিম) 



✔️ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন, ফরয এবং ইশার নামাজের চেয়ে অধিক কষ্টদায়ক নামাজ মুনাফিকদের কাছে আর নেই।  তার মধ্যে কি পুণ্য রয়েছে যদি তারা জানত নিশ্চয়ই তারা বুকে হেঁটে তাদের কাছে আসত। 

(বুখারী, মুসলিম) 






✔️ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন, ফেরেশতা তোমাদের কাছে রাতে এবং দিনে আগমন করে।  কিন্তু তারা ফজর এবং আসরের  নামাজের সময় মিলিত হয়বা। যারা তোমাদের কাছে রাত্রিযাপন করে, তারা উপরে উঠলে তাদের প্রভু জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদেরকে তোমরা কিরূপ অবস্থায় ত্যাগ করেছে? তারা বলে, নামাজ পড়ার সময় আমরা তাদেরকে ত্যাগ করেছি এবং নামাজ পড়ার সময় আমরা তাদের কাছে গিয়েছি।

(বুখারী, মুসলিম) 



✔️ হযরত বোরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন, তাদের মধ্যে এবং আমাদের মধ্যে নামাজই পার্থক্যের বিষয়।  যে তা ত্যাগ করে সে কাফির। 

(তিরমিজি,  নাসায়ী)



✔️ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এসে  বলল, আমি  নির্ধারিত শাস্তির অপরাধ করেছি। আমাকে তার শাস্তি দিন। নবী করীম (সাঃ)  কিছু জিজ্ঞেস না করতেই নামাজের সময় হয়ে গেল এবং সে নবী করীম (সাঃ)  -এর  সাথে নামাজ পড়ল। নামাজ শেষে লোকটি উঠে বলল, আমি নির্ধারিত শাস্তির অপরাধ করেছি আমাকে নির্দিষ্ট শাস্তি দিন।  তিনি  জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামাজ পড়নি?  সে বলল, হ্যা। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পাপ বা নির্দিষ্ট অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন। 

(বুখারী, মুসলিম) 



✔️ হযরত ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে কোন কাজ সবচেয়ে প্রিয়?  তিনি বললেন, নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া। আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপরে কোন কাজ? তিনি বললেন, পিতা-মাতার বাধ্য হওয়া।  পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোন কাজ? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। 

 (বুখারী, মুসলিম) 



  ✔️হযরত সালমান (রাঃ)  হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন, যে ফজরের নামাজের জন্য সকালে বের হয় সে বিশ্বাসের পতাকা নিয়ে বের হয়, যে বাজারে বের হয়, সে শয়তানের পতাকা নিয়ে বের হয়। 

(ইবনে মাজাহ)



✔️হযরত  আমর বিন শোয়ায়েব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,  তোমাদের সন্তানগণ সাত বছর বয়সে পদার্পণ করলে তাদেরকে নামাজের জন্য আদেশ কর এবং তাদের দশ বছর বয়স হলে তার জন্য তাদেরকে প্রহার কর এবং পরস্পরকে শয্যা হতে পৃথক কর।

(আবু দাউদ) 



✔️ হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, যে জামায়েতে ইশার নামাজ পড়ে,  সে অর্ধেক রাত যেন নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইল। যে ফযরের নামাজ জামাতে পড়ে, সে যেন সমস্ত রাত নামাজ পড়ল। 

(মুসলিম)  



✔️ হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বন্ধু  নবী করীম (সাঃ) আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন,  আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করোনা।  যদিও তোমাকে কেটে ফেলা হয় বা দগ্ধীভূত করা হয় এবং ফজরের নামাজ ইচ্ছে করে ত্যাগ কর না।  যে ফরয নামাজ ইচ্ছে করে ত্যাগ করে তার কাছ থেকে (আল্লাহর)  জিম্মা খসে পড়ে। মদ পান কর না, কেননা এটিই প্রত্যেক পাপের কুঞ্জি। 

(ইবনে মাযাহ)



Next Post Previous Post