আইয়ামে বীযের রোজা ও ফজিলত

আইয়ামে বীযের রোজা ও ফজিলত :  ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোযা বা সিয়াম তৃতীয় স্তম্ভ। রমাদানের রোজ ব্যতীত সারা বছর আরো অনেক নফল রোজ রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম ফজিলত পূর্ণ রোজা হচ্ছে আইয়ামে বীযের রোজা। প্রতি চন্দ্র মাসের অর্থাৎ হিজরি / আরবী মাসের শুভ্র পক্ষের তিন দিন আইয়ামে বীযের রোজা রাখলে পুরো মাসের রোজা রাখার সাওয়ার পাওয়া যাবে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সারা বছর এই রোজা রাখতেন। এর থেকে আইয়ামে বীযের ফযিলত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 




আইয়ামে বীযের রোযা কবে?

আইয়ামে বীয দুটি আরবী শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আইয়ামে অর্থ : দিবসসমূহ আর বীয অর্থ : শুভ্র, শ্বেত, সাদা, নির্ভেজাল। 


প্রতি হিজরি / আরবী মাস বা চন্দ্র মাসের ১৩,১৪, এবং ১৫ তারিখকে আইয়ামে বীয বলা হয়। কারণ  এই তিন দিনের রাতের চাঁদ সবচেয়ে বেশি আলোকোজ্জ্বল বা শ্বেত শুভ্র থাকে। আইয়ামে বীয বলতে বুঝানো হয় চন্দ্র মাসের সবচেয়ে শুভ্র বা আলোকোজ্জ্বল  তিনটি রাতের  সাথে সংশ্লিষ্ট দিনকে। 


আমরা জানি হিজরি / আরবী মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। তাই প্রতি মাসের আইয়ামে বীযের রোজার তারিখ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়ে থাকে আমাদের দেশের অনেকে না জানা বা না বুঝার কারণে আইয়ামে বীযের রোজা রাখেন কাগজে ছাপানো ক্যালেন্ডারে থাকা আনুমানিক হিজরী তারিখ হিসেবে। যা সঠিক বা ভুল হতে পারে অর্থাৎ ইংরেজি বছরের শুরুতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যে ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হয় সেখানে হিজরী তারিখ থাকে অনুমান নির্ভর। প্রতিটি ক্যালেন্ডারেই উল্লেখ থাকে যে, হিজরী তারিখগুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। 


তাই আমরা কাউকে ছাপানো ক্যালেন্ডারের উপর নির্ভর করে আইয়ামে বীযের রোজা রাখলে তা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এজন্য আমাদের উচিত হিজরী মাসের চাঁদ ওঠার খবরের সাথে নিয়মিত আপডেট থাকা।



আইয়ামে বীযের রোজার বিধান

আইযামে বীযের রোজা ও ফজিলত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আইযামে বীযের রোজা নফল রোজা এটি আমাদের উপর ফরজ নয়। অর্থাৎ আইয়ামে বীযের রোজা রাখলে সওয়াব আছে না রাখলে কোন গুনাহ নেই। আমাদের উচিত ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতেও মনোযোগ দেয়া। কারণ ফরজ পালন করতে গিয়ে কোন ভুল ত্রুটি হলে বা কোন ফরজ অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছুটে গেলে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তায়া’লা আমাদের নফল আমলগুলোর বিনিময়ে ঘাটতি পূরণ করে দিতে পারেন। তাই বছরের বিভিন্ন সময়ে যে সকল নফল রোজা রয়েছে তা পালনে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। 

রমাদানের রোজার মতো আইয়ামে বীযের রোজার ক্ষেত্রেও নিয়ত করা জরুরি।



আইয়ামে বীযের রোজার ফজিলত

প্রতি হিজরী মাসের ৩ দিন অর্থাৎ আইয়ামে বীযের  রোজা রাখলে তাতে সারা মাস রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। নিয়মিত ভাবে আইয়ামে বীযের তিনদিন রোজা রাখা হচ্ছে সারা জীবন রোজা রাখার সমতুল্য। কেননা যেকোন নেক আমল আল্লাহ তায়ালা ১০ গুন পর্যন্ত সাওয়াব বৃদ্ধি করে দেন। আমরা প্রতি মাসে যদি নিয়মিত ভাবে তিন দিন রোজা রাখি তাহলে ৩০ দিন রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে অর্থাৎ আমরা প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রেখে পুরো মাস রোজা রাখার সওয়াব পাব আর যতদিন বেঁচে আছি এভাবে রোজা রাখতে থাকলে সারা জীবন রোজা রাখার সওয়াব পাব। সুবাহানাল্লাহ!


অনেক আলেম বলে থাকেন, কোন একটা আমল কবুল হওয়ার আলামত হচ্ছে সে আমলাটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।আমরা যদি ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজাগুলো নিয়মিত রাখতে পারি তাহলে সেটা হতে পারে আমাদের রমজানের রোজা কবুল হওয়ার আলামত। আর রমজানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল রোজা। রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি তাক্বওয়া, ভয় ও আনুগত্য করা। রোজা এমন একটি  ইবাদাত যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই রাখা হয় এবং আল্লাহ নিজে এর প্রতিদান দিবেন। 


রমজানে আমরা রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহমুখী হই।  একইভাবে আল্লাহ তায়া’লা আইয়ামে বীজের রোজার মাধ্যমেও প্রতি মাসে তিনটা দিন একান্তই আল্লাহর জন্য তিনটা রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। 



বছরজুড়ে রোজা পালন

ইবনু মিলহান আল-ক্বায়সী (রহঃ) হতে তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়ামে বীয অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও১৫ তারিখে সাওম পালনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।' বর্ণনাকারী আরো বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, এই রোজা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।আবু দাউদ ২৪৪৯)

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,  আমার বন্ধু (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, 

১.প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা পালন করা 

২. দুই রাকাত সালাতুদ দুহা এবং 

৩.ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত আদায় করা।

(সহিহ বুখারী ১৯৮১)




আইয়ামে বীজের রোজার পুরস্কার

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আন প্রতিদিন রোজা রাখতেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রতিদিন রোজা রাখতে নিষেধ করেন এবং উপদেশ দেন এভাবে-


'হে আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন রোজা রাখো এবং সারা রাত নামাজ আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন- এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) রোজা রাখো আবার ছেড়েও দাও। (রাতে) নামাজ আদায় করো আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হাক রয়েছে, তোমার চোখের হাক রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক আছে, তোমার মেহমানের হাক আছে। (বরং) তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখবে। কেননা নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকি। এভাবে সারা বছরের রোজা পালন হয়ে যায়।’ 

(বুখারী)



হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখবে-এটা তোমার জন্য ভালো। কেননা তোমার একটি সৎকাজ দশগুণ সমান; ফলে তুমি যেন পুরো বছরই রোজা রাখছো।’

 [বুখারি]



হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখল; সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ অতঃপর এর সমর্থনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নাজিল করেন- ‘যে একটি নেকি নিয়ে আসে তার জন্য রয়েছে তার ১০গুণ।’ অতএব একদিন ১০ দিনের সমান।’ 

(তিরমিজি)


রমাদান মাসের ফরজ রোজা ছাড়াও আইয়ামে বীযের রোজা ও ফজিলত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত আইয়ামে বীযের রোজা পালন করলে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ সবাইকে আইয়ামে বীযের রোজা পালন  করার তৌফিক দান করুন (আমিন)।

Next Post